ভিআরডিএল’র রিপোর্ট অনুযায়ী, এ রাজ্যে অ্যাডিনো সংক্রমণের হার বা অ্যাডিনো পজিটিভিটির রেট ৩৮ শতাংশ, যা অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অনেকটাই বেশি। অ্যাডিনো সংক্রমণের নিরিখে বাংলার পরেই রয়েছে তামিলনাডু, কেরালা এবং দিল্লি। কিন্তু সেই রাজ্যগুলির সংক্রমণের হার যথাক্রমে ১৯, ১৩ এবং ১১ শতাংশ।
এরাজ্যে আইসিএমআর এবং নাইসেডের মতো কেন্দ্রীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলি ভিআরডিএল’র অংশ। নাইসেডের এক গবেষক জানাচ্ছেন, প্রতি বছরই এই সময় অ্যাডিনো ভাইরাসের প্রভাব দেখা যায়।সাধারণত সমস্ত অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন বা এআরআই সংক্রমণের ৫-১০ শতাংশ অ্যাডিনো রোগী হয়। কিন্তু এই বছর অ্যাডিনো সংক্রমণের হার অস্বাভাবিক বেশি।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৯ মার্চ অবধি আইসিএমআর-নাইসেড গবেষণাগারে ৭০০টি স্যাম্পেলের পরীক্ষা হয়। তারমধ্যে ২৭০টি স্যাম্পেলে অ্যাডিনো ভাইরাসের উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে। এই ২৭০টি স্যাম্পেলের প্রতিটি হল এআরআই আক্রান্ত শিশুদের। আইসিএমআর-নাইসেডের তরফে স্যাম্পেলগুলিকে ভাইরাস চিহ্নিত করণের জন্য রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই স্যাম্পেলগুলি ছাড়া বাকি স্যাম্পেলগুলির রোগীরা প্যারা-ইনফ্লুয়েঞ্জা, রাইনোভাইরাসের মতো ভাইরাসে আক্রান্ত।
এই কেন্দ্রীয় রিপোর্ট প্রসঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম নাইসেডের কাছে বিস্তারিত তথ্য তলব করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বাংলায় ইতিমধ্যেই এআরআই সংক্রমিতের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে।
গবেষক এবং চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, মূলত টাইপ ৩ এবং টাইপ ৭ ভাইরাসের শঙ্কর বা হাইব্রিড সংক্রমণ ছড়ায়। এই ভাইরাস নতুন না হলেও এতদিন তাঁদের খুব বিশেষ দেখতে পাওয়া যেত না। কিন্তু এইবার এই শঙ্কর প্রজাতির ভাইরাসই ব্যাপক মাত্রায় দেখা দিচ্ছে। তারফলেই মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইতিমধ্যেই অ্যাডিনো আক্রান্তদের নমুনা সিকুয়েন্সিংয়ের জন্য গবেষণাগারে পাঠানো হয়েছে। টাইপ ৩ এবং ৭’র হাইব্রিডটির মিউটেশন বা তাঁর আকারগত কোনও পরিবর্তন হয়েছে কিনা সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাইছেন গবেষকরা। যদিও সেই রিপোর্ট হাতে পেতে এখনও সপ্তাহ খানেক সময় লাগবে বলে নাইসেডের গবেষকরা জানাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, ডিসেম্বরের শেষ থেকেই এরাজ্যের শিশুদের মধ্যে অ্যাডিনো সংক্রমণ দেখা দিতে থাকে। জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে আক্রান্তের সংখ্যা লাগামছাড়া হারে বাড়তে শুরু করে। সাম্প্রতিক সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা সামান্য কমলেও এখনও কলকাতা সহ জেলা হাসপাতালগুলির শিশু বিভাগের আইসিইউগুলি সম্পূর্ণ ভর্তি রয়েছে। রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে খবর, উত্তরবঙ্গের তুলনায় দক্ষিণবঙ্গে অ্যডিনো আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামুলক বেশি।
অপরদিকে শনিবার রাজ্যের মুখ্যসচিবের তরফে অ্যাডিনো সংক্রমণ ঠেকাতে একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়। নির্দেশিকায় রাজ্য দাবি করেছে, অ্যাডিনো মোকাবিলা সংক্রান্ত তথ্য এবং নির্দেশিকা সমস্ত চিকিৎসাকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে অ্যাডিনো মোকাবিলায় ২৪ ঘন্টা কন্ট্রোলরুমও খুলে রাখার কথা বলা হয়েছে রাজ্যের তরফে। সেই কন্ট্রোল রুমের নম্বর হল ১৮০০-৩১৩-৪৪৪-২২২।
এর পাশাপাশি সমস্ত হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং রোগীকে অক্সিজেন দেওয়ার সরঞ্জাম সরবরাহের ব্যবস্থাও করা হয়েছে বলে রাজ্যের দাবি। শিশু বিভাগগুলিতে ভেন্টিলেটরও নিশ্চিত করা হয়েছে বলে রাজ্য দাবি করেছে।
সাধারণ মানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতা যদিও আলাদা কথাই বলছে।
Comments :0