কৃষকের ফসলের সঙ্গত দাম, শ্রমিকের ন্যায্য মজুরির দাবিতে আন্দোলন। সারা দেশে ২৮ নভেম্বর রাজভবন করবে কৃষক এবং শ্রমিকদের বহু সংগঠন। পুলিশ যতই বাধা দিক, কলকাতায় ওই দিনই হবে রাজভবন অভিযান। 
শুক্রবার শ্রমিক ভবনে রাজ্যের কৃষক এবং শ্রমিক সংগঠনগুলির যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে এই ঘোষণা করেছেন নেতৃবৃন্দ। ৩৩টি সংগঠনের আহ্বানে কলকাতায় রাজভবনের সামনে অবস্থান হবে ২৬ ও ২৭ তারিখ। 
সিআইটিইউ পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সম্পাদক অনাদি সাহু বলেছেন, ‘‘প্রশাসনকে জানানো হয়েছিল আগেই। ঠিক কর্মসূচির আগে আমাদের জানানো হলো ২৫ বা ২৬ নভেম্বরের মধ্যে কেবল একদিন অবস্থান করা যাবে। ২৮ তারিখ রাজভবন অভিযান হবেই না। এই মনোভাব স্বৈরতান্ত্রিক। এই ফতোয়া আমরা মানছি না। ঘোষণা অনুযায়ী কর্মসূচি হবে।’’
তিনি বলেছেন, মূল্যবৃদ্ধির প্রবল হার এবং দেশে সর্বোচ্চ স্তরে বেকারি। কৃষক শ্রমিকরা তার বিরুদ্ধেও সরব রয়েছেন।
সংযুক্ত কিষান মোর্চা পশ্চিবঙ্গ আহ্বায়ক কার্তিক পাল বলেছেন, ‘‘রাজ্য সরকারকে বলব কর্মসূচিতে যেন বাধা না দেয়। এর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তো দিল্লির কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। পরে আবার অন্য কথা বলেছেন। গ্রেপ্তার হলেও আমরা রাস্তাতেই থাকব।’’
কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের শ্রমিক ও কৃষক বিরোধী পদক্ষেপের প্রতিবাদে দিল্লির তালকাটোরা স্টেডিয়ামে জাতীয় কনভেনশন হয় গত আগস্টে। সেখান থেকেই রাজভবন অভিযানের কর্মসূচি ঘোষণা করেন শ্রমিক ও কৃষক নেতৃবৃন্দ। 
এদিন শ্রমিক ভবনে রাজ্যের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, তিন কৃষি আইন নরেন্দ্র মোদী সরকারকে বাতিল করতে হয়েছিল বছরভর আন্দোলনের চাপে। দিল্লিতে সে সময় ফসলের ন্যূনতম দাম নিশ্চিত করার জন্য আইন আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কেন্দ্র। কথা রাখা হয়নি। শ্রম আইন বদলে শ্রম কোড তৈরি করে ন্যূনতম বেতন থেকে কাজের সুরক্ষা সব কেড়ে নেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। দেশের সব অংশের মানুষের পক্ষে এই লড়াই। 
পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষকসভার সভাপতি বিপ্লব মজুমদার বলেছেন, ‘‘দিল্লির লড়াই আমাদের রাস্তা দেখিয়েছিল। সম্প্রতি রাজ্যের পুরুলিয়ায় সেরকম লড়াই হয়েছে। শিল্পে নামে জমি দখল ঘিরে প্রশ্ন তোলায় ১৩ জন মহিলাকে ১৬ দিন শিশুসহ জেলে আটকে রেখেছে মমতা ব্যানার্জির পুলিশ। কিন্তু আন্দোলন থেমে যায়নি। এই মহিলাদের জামিন হয়েছে। প্রতিবাদই পথ।’’ 
দিল্লি কৃষক আন্দোলন জেরে পিছিয়ে গেলেও কৃষক নেতাদের ওপর এফআইআর চাপিয়ে রেখেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন দিল্লি পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে নিউজক্লিক’র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক প্রবীর পুরকায়স্থকে। সাংবাদিকদের জেরা করা হয়েছে কৃষক আন্দোলনের বিবরণ দিয়ে রিপোর্ট করার জন্য। এই ভূমিকার প্রতিবাদও হবে ২৬ থেকে ২৮ নভেম্বর। 
ট্রেড ইউনিয়ন এবং কৃষক সংগঠনসমূহের তরফে জানানো হয়েছে, ১০০ দিনের কাজের মজুরি দেওয়া, বছরে ২০০ দিন কাজ দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরিতে, কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা, মূল্যবৃদ্ধি কমানো এবং বিদ্যুৎ আইন সংশোধন বিল ও স্মার্ট মিটার বাতিলের দাবিও সরব তুলবে আন্দোলন। 
নেতৃবৃন্দ বলেছেন, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সূচিমুখ। সঙ্গে রাজ্যের মানুষের দাবিও থাকবে। সারা দেশেই হবে কর্মসূচি। বিজেপি চালিত সরকারগুলিও পুলিশকে এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে এভাবে ব্যবহার করছে না। কোনও রাজ্যই করছে না। তৃণমূল সরকার করছে। তবে কর্মসূচি হবে।
শুক্রবার শ্রমিল ভবনে সংযুক্ত কিষান মোর্চা এবং কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন সমূহের যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে ছিলেন সিআইটিইউ রাজ্য সভাপতি সুভাষ মুখার্জি এবং বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
 
                                        
                                    
                                
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
Comments :0