অনির্বাণ দে
দেশে আগুন লেগেছে। লাভ জিহাদ, খাওয়া পরা নিয়ে খুনোখুনি হচ্ছে। আসলে মানুষের পেটে আগুন লেগেছে। দেশে আর রাজ্যে এই আগুন নেভাতে হবে। তাই একজোট হয়েছে বামফ্রন্ট আর কংগ্রেস।
মঙ্গলবার রানিতলায় সমাবেশে এ’কথা বলেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে প্রার্থীও তিনি। ভগবানগোলায় সমাবেশে তাঁর সমর্থনে বক্তব্য রেখেছেন প্রদেশ কংগ্রেস ভাপতি অধীর চৌধুরী।
এদিন ভগবানগোলায় বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের ডাকে সমাবেশ সব সীমানা ভেঙে দিয়েছে। চারদিকে কেবল মানুষ। সমাবেশের মাঠ উপচে পড়েছে। ভগবানগোলা বিধানসভা কেন্দ্রে রয়েছে উপনির্বাচনও। বামফ্রন্ট সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী আনজু বেগমও দিয়েছেন বক্তৃতা।
লোকসভায় পাঁচ বছর কংগ্রেসের দলনেতার দায়িত্ব পালন করেছেন অধীর চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘‘কেন দেশের সংসদে ধর্ম নিয়ে টানাটানি হবে। মানুষের মধ্যে কেবল হিন্দু মুসলমান খোঁজা হচ্ছে। এটা ভারতের সংস্কৃতি না। কেন মানুষের মধ্যে মানুষ খোঁজা হবে না। এটাই তো ভারতীয় সভ্যতা। এই সভ্যতাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আজকের নির্বাচন ভারতকে বাঁচানোর লড়াই।’’
তিনি বলেছেন, ‘‘২০২১’র বিধানসভা নির্বাচন মনে রাখুন। এনআরসি-সিএএ টেনে আনল মোদী। আর মমতা ঝাঁপ দিয়ে বলল মুসলমানদের বাঁচাবো। ধর্মের নামে বিভাজন হলো। আমরা হেরে গেলাম। বিধানসভায় বাম কংগ্রেসের কেউ নেই। বিধানসভায় মানুষের কথা নিয়েও আর আলোচনা হয় না।’’
সেলিম বলেন, ‘‘আরএসএস’র দশটা হাত আছে। কোনোটা বজরঙ দল। কোনোটা বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। আসলে উদ্দেশ্য এক দাঙ্গা বাঁধানো। আগে বামফ্রন্ট সরকার ছিল। মুর্শিদাবাদে কংগ্রেস ছিল। তখন বিজেপি ছিল?’’
সমবেত জনতা সোচ্চারে বলেছেন, ‘না’।
সেলিম বলেছেন, ‘‘সাহস ছিল কোন মোহন ভাগবত, কোনও অমিত শাহ, কোনও মোদী পশ্চিমবঙ্গে এসে লম্বা চওড়া কথা বলবে?’’
ফের সমস্বরে জবাব জনতার, ‘না’।
সেলিম ফের বলেছেন, ‘‘আজ কেন হলো। অনেকে মনে করে ছিল প্রতিদিন লুট, ধর্ষণ, চুরি হচ্ছে। সংখ্যালঘু ছেলেমেয়েদের স্টাইপেন্ড চুরি, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে। মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনে হয়েছে। অনেকে যোগ্য, তৃণমূলের দুর্নীতিতে কাজ হারালেন। চিট ফান্ডে সময়ও শুরু হয়েছে। এই জোচ্চুরি বন্ধ করার জন্য বাম কংগ্রেস একজোট হয়েছে। কিন্তু বিজেপি এই দুর্নীতি ঠেকাবে না। আর বিজেপি’র বিভাজনের রাজনীতিকে তৃণমূল ঠেকাবে না।’’
তিনি বলেন, ‘‘ভগবানগোলায় দু’টি ভোট। আনজু বেগম। সারা বছর কাজ করে। তৃণমূলের এমএলএ দমকল কেন্দ্র করেনি। বিজেপি তৃণমূল আগুন নেভায় না। আগুন জ্বালায়। মুখ্যমন্ত্রী ভগবানগোলায় মিটিং করেছেন। আর মাঝরাতে ডিজেলভর্তি বোতল ছুঁড়ে আগুন লাগিয়েছে আমাদের নির্বাচনী দপ্তরে। থানা উলটো হম্বিতম্বি করছে।মাঝরাতে আগুন নিভিয়েছেন মায়েরা বোনেরা।’’
সেলিম বলেন, ‘‘দেশে আর রাজ্যে আগুন লেগেছে। লাভ জিহাদ, কে কী খায় তা নিয়ে উসকানি দেওয়া হচ্ছে। রোজ খুনোখুনি হচ্ছে না? বাংলাভাষী মানুষ অন্য রাজ্যে সমস্যায় পড়ছেন না? আরএসএস বিজেপি বাংলায় কথা বললে বলে বাংলাদেশি, বলে জেহাদি। তার প্রতিবাদ করতে হবে। আগুন নেভাতে হবে। কিছু দুষ্টু লোক আগুন লাগাতে যায়। বাকি সবাই আগুন নেভাতে যায়। আজ বাম কংগ্রেস একসঙ্গে আগুন নেভাতে নেমেছি। দেখতে হবে কে জেতে?’’
তিনি বলেন, ‘‘কেন আগুন। কারণ বাজারে আগুন, পেটে আগুন। কৃষক দাম পান না আর সার কিনতে কালোবাজারি হচ্ছে। এই দামের আগুন নেভাতে হবে। মানুষের আয় কমছে, ব্যয় বাড়ছে। এরাজ্যে কাজ নেই পরিযায়ী শ্রমিক হচ্ছে। সবচাইতে দক্ষ তারা। মুর্শিদাবাদে অন্য রাজ্যে যাবে কেন, তারা নিজের জায়গায় কাজ করতে পারে না? তাদের শিক্ষা মেধা বুকের বল কাজে লাগাতে পারে না। বিজেপি আর তৃণমূল তা চায় না। আমরা চাই কাজ পাবেন যুবরা। তাই বাম কংগ্রেস একজোট হয়েছে।’’
Comments :0