বই | মুক্তধারা
উজ্জ্বল উদ্ধার
বসন্তের কাব্য: বসন্ত উৎসব কাব্য
কৃশানু ভট্টাচার্য্য
" একদা বঙ্গীয় কোন এক সুন্দর যুবা কবি
পরিণয়ে পেয়েছিল জীবনের সঙ্গিনী।
তারো মনোহর তনু অন্তর সুঠাম সুন্দর সবি
সদা প্রফুল্ল প্রেমময়ী সাধ্বী সে সুহাসিনী-
উড়িয়া সার্থক যেন যৌবনে দম্পতি পদবী।"
এ এক উৎসব কাব্যের কবির কথা। নববিবাহিতা স্ত্রী কে আনন্দ দেবার জন্য যৌবনে লেখা একটি কাব্যগ্রন্থ। রচনা কাল ১২৯৮ এর ফাল্গুন থেকে ১৩০০ বঙ্গাব্দ। যদিও মুদ্রিত আকারে এই কাব্যগ্রন্থ সকলের হাতে পৌঁছে ছিল ১৩২৮ বঙ্গাব্দের ১৫ ই জ্যৈষ্ঠ। বর্তমানে প্রায় লোকচক্ষুর অন্তরালে অন্তর্হিত এই কাব্যগ্রন্থটি বসন্ত উৎসবের দিনে বড়ই তাৎপর্যপূর্ণ। কেন? সে বিষয়ে যাবার আগে কিছু প্রাথমিক তথ্য দিয়ে রাখা দরকার।
বইয়ের আখ্যপত্রে কবির নাম
শ্রী বাঁট। বইটি প্রকাশ করেছিলেন শ্রী ভূদেব শোভাকর, বি এ, বি ই। বইটি প্রকাশিত হয়েছিল নদিয়া জেলার হরিপুর থেকে। নদীয়া জেলায় আপাতত দুটি হরিপুরের সন্ধান পাওয়া গেছে। একটি তেহটটো মহকুমায় আরেকটি শান্তিপুরের কাছে। এই মুহূর্তে কোন হরিপুর থেকে এই বইটি প্রকাশিত হয়েছিল তা বলা বেশ কঠিন। বইয়ের গ্রন্থকারের নিবেদনে অবশ্য লেখকের নাম শ্রী হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। নামটা শুনলেই যদি কারো বঙ্গীয় শব্দ কোষের স্মৃতি মনে আসে তবে এটা বলে রাখা ভালো শব্দকোষ প্রণেতা হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় এই কাব্যগ্রন্থের লেখক নন। এই কাব্যগ্রন্থের লেখক সম্ভবত একজন পল্লীবাসী কবি। লেখার তাগিদ এসেছিল পারিবারিক জীবন থেকে। পরবর্তীকালে এই কাব্যগ্রন্থটি তিনি বহু মানুষের কাছে পাঠ করে শোনাতেন। চেষ্টা বিশেষ ছিল না। স্নেহভাজন ভূদেব শোভাকর কিছুটা নিজের তাগিদেই রচনার প্রায় ৩০ বছর বাদে গ্রন্থটি প্রকাশ করেন।
এই কাব্যগ্রন্থে চারটি খন্ড রয়েছে। প্রকাশিত হয়েছিল প্রথম এবং দ্বিতীয় খন্ড। প্রত্যেকটি খন্ডের মধ্যে পরিচ্ছদ এবং উচ্ছ্বাস ভাগ রয়েছে।
২৫০ এই মুদ্রিত কাব্যগ্রন্থে এরকম অজস্র পরিচ্ছদ এবং উচ্ছ্বাস। কবিতায় ব্যবহৃত ছন্দ বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন ধরনের। প্রসঙ্গে কবি বলেছেন, - " এই কাব্য যথেচ্ছ ছন্দে লিখিত , এক হিসেবে ইহাতে কতটা স্রব্যকাব্য বলিলে মন্দ হয় না। কেননা মনে মনে পাঠের চেয়ে উচ্চারণ করিয়া পাঠ করিলে অপেক্ষাকৃত ভালো লাগিতে পারে । ইহার ভাষা, ভাব , ছন্দ কিংবা প্রকাশভঙ্গি কারো অনুকরণ নয় ।তাহাতে যে দোষ ত্রুটি ঘটিয়াছে তার জন্য দায়ী আমি সম্পূর্ণ - সুধীগণ বিচার করিবেন।"
কবিতায় বসন্তের বর্ণনা বড় মনোরম।
" বরিশাল হলে বন্ধ, মন্দ মন্দ মকরন্দ-
মাখি, হাঁকি, সুদক্ষিনা বায়, বহি উত্তরে?
বসন্ত কয়, বসুধায়, মৃদু উত্তরে!-
সন্দেহ আষাঢ়ে, কুয়াশা ধারে,
তব কুসুম কোমল , সদা অন্তরে, ধুয়ে ধুয়ে?
ফুল্ল রসালো মানস- মধু কত না শুধু শুধু
জীবনে বিফল কর প্রিয়ে?"
যেহেতু দাম্পত্য জীবনের সূত্রপাত লগ্নে এই কাব্যগ্রন্থ সেই কারণেই বসন্তের বিবরণের মাঝখানে চলে এসেছে কিছু পারিবারিক কথা।
" বিশ্ব মাঝে বামা জাতি সতত সন্ধিগ্ধ অতি
আপনা পতির প্রতি?
আমি কি বসন্ত ছার,
দেবেন্দ্র দেব দেবতার
আছে শক্তি ঘরে যার
সেই জানে এ ব্যাপার
বামা পাশে, কম বেশি , সবে নিরুত্তর।"
স্বরবৃত্ত ছন্দসহ বিভিন্ন ধরনের ছন্দকে প্রয়োগ করে এক দীর্ঘ কাব্য রচনা করেছিলেন পল্লীগ্রামের এক অখ্যাত কবি। কোন এক উৎসাহী অনুরাগের সৌজন্যে সে কাব্যগ্রন্থ আমাদের হাতে। বসন্তের প্রাতে বসন্ত উৎসবে মেতে ওঠার আনন্দে এ কাব্য পাঠের পরিতৃপ্তিই আলাদা।
বসন্ত উৎসব কাব্য -প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ -শ্রীবাট
প্রকাশক: শ্রী ভূদেব শোভাকর, হরিপুর সারস্বত ভবন, হরিপুর নদিয়া, ১৩২৮ বঙ্গাব্দ
Comments :0