WB Panchayat Election

প্রধানকে হারিয়ে জয়ী সি পি আই (এম) প্রার্থী

জেলা

WB Panchayat Election ছবি: সিপিআই(এম)'র জয়ী প্রার্থী কোহিনূর বিবিকে ঘিরে পার্টির নেতা কর্মীরা।

স্বয়ং গ্রামের প্রধানকে পরাজিত করে কোহিনূর বিবি প্রমাণ করে দিলেন লড়াইটা যদি লড়াইয়ে মতো করে লড়াই করা যায় 'জয়' অবসম্ভাবী। দশম ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনে এমনই সাহসী গল্প রচিত হলো সীমান্তের ক্যানভাসে। কাঁটাতারের এপারে দাঁড়িয়ে অসম লড়াই করে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মালেকা বিবিকে ২৪ ভোটে পরাজিত করলো বামফ্রন্ট সমর্থিত সিপিআই(এম) প্রার্থী কোহিনূর বিবি।
ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে ইটিন্ডা পানিতর গ্রাম পঞ্চায়েতের পানিতর গ্রাম। সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতি বিজড়িত পানিতর। যার ১০০মিটার এগুলেই বি এস এফ চৌকির কোল ঘেষে বাস কোহিনূর বিবির। অভিযোগ, স্থানীয় গ্রামবাসীদের তৃণমূলীরা লাগাতার হুমকি দিয়ে বলে কোহিনূরকে একটি ভোট দেওয়া যাবে না। সন্ত্রাসে বিদ্ধ পানিতর গ্রামে টানটান উত্তেজনায় ৮ জুলাই ভোট  হয় পানিতর জনশিক্ষা নিকেতনে ৫১নং বুথের গ্রাম সংসদ আসনে। পাহারায় একজন পুলিশ কনস্টেবল ও একজন সিভিক ভলান্টিয়ার। আগাম খবর ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা ছাপ্পা ভোটের প্রস্তুতি সেরে রেখেছে।

আগের দিন অর্থাৎ ৭ জুলাই রাতে ব্যালট ছিনতাই হওয়ার আশঙ্কায় গ্রামবাসীদের সাথে নিয়ে সিপিআই(এম) নেতা আনন্দ চক্রবর্তী, শিক্ষক আবদুল রকিব মোল্লা, পার্টি কর্মী এনতাজুল ইসলাম মোল্লা, সিপিআই(এম) প্রার্থীর স্বামী ওদুদ মোল্লারা অতন্দ্র প্রহরী হয়ে বুথ পাহারা দেয় সারারাত ধরে। ৮জুলাই সকাল থেকে ভোট প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নে হতে থাকে। বুথের ভিতরে ঢুকে সিপিআই(এম) প্রার্থী কোহিনূর বিবি ও তার স্বামী ওদুদ মোল্লার ঘনঘন কড়া নজরদারি চলতে থাকে। মোট ভোটার ৯২৬ জন। ততক্ষণে ৬৬২-৬৬৪ টি ভোট পড়ে গেছে নির্বিঘ্নে। বিকাল ৪ টে নাগাদ তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মালেকা বিবি ও তার স্বামী আমজাদ মোল্লা এবং তাদের জামাই সহ তৃণমূলের কর্মীরা ভোটারদের মেজাজ দেখে বুঝে যায় পরাজয় নিশ্চিত। বুথকেন্দ্রের পিছনে দরজা দিয়ে ভোটারদের বেড়িয়ে যাওয়ার পথ ছিল। সেই পিছনের দরজা ব্যবহার করে সশস্ত্র তৃণমূলীরা ঢুকে পড়ে বুথে।

 লাইনে তখন ভোট দেওয়ার অপেক্ষায় ১০০-১৫০ ভোটার। শুরু হয় ছাপ্পা ভোট। এই খবর বাইরে আসতেই সিপিআই(এম)'র কর্মীরা প্রতিরোধ করতে গেলে দরজার হাক দিয়ে পার্টি কর্মী এনতাজুল ইসলাম মোল্লার মাথায় সজোরে আঘাত করলে এনতাজুল মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। রক্তে ভেসে যায় বুথের মেঝে। ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে স্থানীয় গ্রামবাসীরা। তারা বুথে ঢুকে ব্যালট বাক্স পাশের পুকুরে ফেলে দেয়। বন্ধ হয়ে যায় ভোট প্রক্রিয়া। তৃণমূলের হামলায় রক্তাক্ত এনতাজুলকে বসিরহাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হলে মাথায় ১০টি সেলাই পড়ে। তাঁকে সার্জিক্যাল বিভাগে ভর্তি করে চলে চিকিৎসা। খবর পেয়ে পার্টি নেতা সায়নদীপ মিত্র, কিশোর গাঙ্গুলি, শানু রায় সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ হাসপাতালে ছুটে যান। মিনাখাঁ, বসিরহাটের আহত কর্মীদের সাথে দেখা করে চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন। এদিকে তখন ওইদিন বিকালে বসিরহাট ১ ব্লকের বিডিও বিশাখ ভট্টাচার্যের সাথে দেখা করেন পার্টি নেতা ময়ূখ বিশ্বাস, রাজীব বিশ্বাস, প্রতাপ নাথ, গোপা দাসশর্মা, বিশ্বজিৎ বসু সহ অন্যান্য পার্টির নেতা কর্মীরা। বিডিওকে ঘিরে চলে বিক্ষোভ। তারা ইটিন্ডা পানিতর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫১ নং বুথ সহ বসিরহাট ১ব্লকের বিভিন্ন বুথের পুনর্নিবাচনের দাবি তোলেন এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবি তোলেন। পরবর্তীতে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান।


৯ জুলাই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপে ১০ জুলাই ৫১নং বুথের পুনর্নিবাচন হয় নির্বিঘ্নে। ভোট পড়ে ৭৫১টি। বাক্স বদলে যেতে পারে। কোহিনূর বিবি নিজে কড়া নজরদারি রাখেন বসিরহাট হাইস্কুলের স্ট্রোংরুমে। ১১জুলাই গননা শেষে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মালেকা বিবিকে ২৪ভোটে পরাজিত করে জয়ী হন সিপিআই(এম) প্রার্থী কোহিনূর বিবি। তাঁর শপথ গ্রামবাসীদের সাথে নিয়ে দীর্ঘ পাঁচবছরে বঞ্চনা কাটিয়ে মানুষের জন্য কাজ করা এবং যাবতীয় সরকারি প্রকল্প তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া।

 

Comments :0

Login to leave a comment