Weather report 2022

খরা, বন্যা, ঝড় কাড়ল জীবন-জীবিকা

আন্তর্জাতিক

পৃথিবীর উষ্ণতা(Global Warming) বাড়ছে এটা কোনও নতুন বিষয় নয়। এই নিয়ে বিশ্বের প্রায় সমস্ত দেশের নেতারা আলোচনা করেছে। নিয়ম মেনে হয়েছে পরিবেশ শীর্ষ বৈঠক। বিস্তর ভাবনা, চিন্তা, শপথ গ্রহণ হয়েছে। বহু বছর ধরেই হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবায়িত কতদূর হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে। উল্লেখযোগ্য প্যারিস সমঝোতায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিপজ্জনক দিক ঠেকাতে উষ্ণতা বেঁধে রাখার লক্ষ্য নেওয়া হয়। কিন্তু কাজ হয়নি।

এদিকে প্রকৃতি তার রোষ বাড়িয়েই চলছে। ২০২২(2022) সাল শেষের পথে। ফিরে দেখলে গত ১২ মাসে বন্যায় বিধ্বস্ত পাকিস্তান, খরা, তাপ প্রবাহে বিপর্যস্ত ইউরোপ, কখনও চীন বা ভারত। শৈত্য প্রবাহের জের চলছে আমেরিকায়। একের পর এক ঝড়, টাইফুন, হারিকেন কেড়েছে বহু মানুষের প্রাণ। জীবিকা, চাষে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মধ্যে আমাদের সুন্দরবনও। প্রতিটি ক্ষেত্রে এসেছে উষ্ণায়ন প্রসঙ্গ।নষ্ট হয়েছে সম্পত্তি, ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে অর্থনীতি। প্রকৃতির রোষের হাত থেকে বাঁচেনি প্রাণীকূলও। আবহাওয়াবিদদের মতে ২০২২ সালে প্রকৃতির ভয়ঙ্কর রুপের একটি নমুনা মাত্র। ভবিষ্যত আরও ভয়ঙ্কর হতে চলেছে।

গ্রিন হাউস(Green House Gas) গ্যাস নির্গমন অবিলম্বে নিয়ন্ত্রিত করা প্রয়োজন বারবার বলছেন আবহাওয়াবিদ থেকে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। ২০২২ সাল শুরু হয় আফগানিস্তানে (Afghanistan)ভয়াবহ ভূমিকম্প দিয়ে তারপর প্রবল বন্যা দিয়ে। একেই তালিবান (Taliban)শাসনে জেরবার আফিগানস্তানের সাধারণ মানুষের জীবন। তারওপর বছরের শুরুতেই পশ্চিম আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে প্রান হারিয়েছিল হাজারের কাছাকাছি মানুষ। 

এরপর অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য আফ্রিকার খরা। গত ৪০ বছরে এরকম খরার মুখে পরেনি বিশ্বের কোনও দেশে। টানা ১৮ মাস ভয়াবহ এই খরায় প্রাণ হারিয়েছে মানুষ, বহু বন্য প্রাণী। মাসের পর মাস বৃষ্টি নেই। বিশেষ করে পূর্ব আফ্রিকার কেনিয়া, সোমালিয়া, ইথিয়পিয়ায় ভয়ঙ্কর খরার কবলে পরে। অলাভজনক হিসেবে নথিভুক্ত প্রতিষ্ঠান অক্সফ্যামের (Oxfam) রিপোর্ট অনুযায়ী, খরায় শুধু পূর্ব আফ্রিকায় প্রতি ৩৬ সেকেন্ডে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে একজন মানুষের। খাদ্যের অভাব, পানীয় জলের অভাবে যেমন মানুষের মৃত্যু হয়েছে তেমনি বনাঞ্চলেও প্রাণীদের মৃত্যু হয়েছে। বৃষ্টির অভাবে চাষ আবাদ প্রায় হয়নি। কলেরা, ডাইরিয়া, রক্তাল্পতার শিকার হন লক্ষ লক্ষ মানুষ। বিশেষ করে শিশু ও মহিলাদের স্বাস্থ্যের ওপর ভয়ঙ্কর প্রভাব পরেছে খরার। অন্তঃসত্ত্বা মায়েরা সঠিক খাবার না পাওয়ায় এই সময়কালে জন্ম নেওয়া বহু শিশুরই হয় মৃত্যু হয়েছে নয় তাদের ওজন কম সহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যা রয়েছে। 

আফ্রিকার(Africa) খরা (Drought)যেমন খবরের শিরোনাম কেড়েছিল তেমনি বহু দেশেই চলতি বছরে বন্যার ভয়াবহতা দেখা যায়। প্রবল বৃষ্টিতে পাকিস্তানের (Pakisthan) বন্যায় মৃত্যু হয়েছে প্রায় ২০০০ জনের কাছাকাছি মানুষের। বাংলাদেশের বন্যাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভয়ঙ্কর ক্ষতি হয়েছে চাষের। দুই দেশের প্রায় ৮ কোটি মানুষ বন্যায় ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন। ভারত-বাংলাদেশ মিলিয়ে কমপক্ষে ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছে।ব্রাজিল ও অস্ট্রেলিয়ার বন্যাতেও ক্ষয় ক্ষতি  কম নয়। বন্যায় ব্রাজিলে ১০০ জনের কাছাকাছি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

পশ্চিমের দেশগুলোতে সারা বছর মূলত ঠান্ডাই থাকে। কিন্তু ২০২২’এ প্রবল তাপপ্রবাহে ব্যাহত হয় পশ্চিমী জন জীবন। লন্ডন, কানাডা সহ ইউরোপের(Europe) বিভিন্ন দেশের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যায়। ইউরোপের দেশে তাপপ্রবাহ আবহাওয়াবিদদের মতে যথেষ্টই উদ্বেগজনক বলে মনে হয়। তবে শুধু ইউরোপেই নয় গরমে রেকর্ড পরিমান তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছিল চীনেও। এছারাও লাতিন আমেরিকার দেশগুলি যেমন আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে, উরুগুয়ে, চিলি ও বলিভিয়াতেও তাপমাত্রা ৪০ ছাড়িয়ে যায়।  ২০২২ সালে আনুমানিক উষ্ণ বছর বলেই মনে করেছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় গ্রীষ্মকালে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে দেখা যায় সেই দৃশ্য। অত্যাধিক গরম, বর্ষাকালে বৃষ্টির ঘাটতি ছিল। শীতে নিম্নচাপ ঝড় আবার কিছু রাজ্যে অস্বাভাবিক রকমের শৈতপ্রবাহ। 

সর্বশেষ, বছরের শেষে প্রবল ঠান্ডায় এবং তুষার ঝড়ে বিপর্যস্ত আমেরিকা (America)। মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৬০ জনের। তুষার ঝড় ও প্রবল ঠান্ডায় জমে গেছে আমেরিকা ও কানাডার নদী, হ্রদের জল। জমে গেছে নায়াগ্রা জলপ্রপাত। তুষার ঝড়ে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিউ ইয়র্ক ও বাফেলো। পরিবেশের এই অস্বাভাবিকতার জন্য অবশ্যই দায়ী মানুষ। শিল্প বিপ্লবের পর থেকেই পরিবেশ দূষিত, তুলনায় দ্রুত হয়েছে । কিন্তু শিল্পকে বাঁচিয়েও আবহাওয়া রক্ষা করার একাধিক উপায় বাতলেছেন বিজ্ঞানীরা। পরিবেশ কী উপায়ে রক্ষা করা যায় তা নিয়ে ক্রমাগত গবেষণাও চলছে। কিন্তু রাজনীতি ও বিশ্বায়নের কারণে সব উপায় বাস্তবে রূপায়িত হয় না।

পৃথিবীর ফুসফুস বলে পরিচিত ব্রাজিলের আমাজন অরণ্য প্রায় নিশ্চিহ্ন হতে বসেছিল বোলসোনারোর শাসনে। পৃথিবীতে সর্বাধিক খনিজ তেল ব্যবহৃত হয় সামরিক ক্ষেত্রে। যারা পরিবেশ রক্ষার বুলি আওড়ায় সেই আমেরিকাই সামরিক ক্ষেত্রে ব্যয় করে সব থেকে বেশি অর্থ। ছোট হলেও আদালতের নির্দেশে মহারাষ্ট্রের ম্যানগ্রোভ অরণ্য সাফ করে সেখানে চলবে বুলেট ট্রেন। অ্যারে কলোনির জঙ্গল পরিষ্কার করে হবে মেট্রো কারশেড। এছাড়াও সারা ভারতে অপরিকল্পিত নগরায়ন তো আছেই। পৃথিবীতে এই ধরনের ঘটনার শেষ নেই। 

 উষ্ণায়ন, পরিবেশের পাল্টা মার সামলাতে হবে সাধারণ মানুষকেই । কারণ তাঁদেরই এর ফল ভুগতে হবে সরাসরি।

Comments :0

Login to leave a comment