চন্দন মুখোপাধ্যায়
"আমি বিদ্রোহী নহি, বীর নহি, বোধ করি নির্বোধও নহি। উদ্যত রাজদণ্ডপাতের দ্বারা দলিত হইয়া অকস্মাৎ অপঘাতমৃত্যুর ইচ্ছাও আমার নাই। কিন্তু আমাদের রাজকীয় দণ্ডধারী পুরুষটি ভাষার ঠিক কোন সীমানায় ঘাটি বাঁধিয়া চুপ করিয়া বসিয়া আছেন তাহা আমি স্পষ্টরূপে জানি না,... সুতরাং স্বভাবতই তাঁহার শাসনদণ্ড আনুমানিক আশঙ্কা-বেগে অন্ধভাবে পরিচালিত হইয়া দণ্ডবিধির ন্যায়সীমা উল্লঙ্ঘনপূর্বক আকস্মিক উল্কাপাতের ন্যায় অযথাস্থানে দুর্বল জীবের অন্তরিন্দ্রিয়কে অসময়ে সচকিত করিয়া তুলিতে পারে। ...রাজা বিমুখ হইলে আমরা ভয় পাইব না আমাদের এমন স্বভাবই নহে, কিন্তু রাজা যে কেন আমাদের প্রতি এতটা ভয় প্রকাশ করিতে আরম্ভ করিয়াছেন সেই প্রশ্নই আমাদিগকে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন করিয়া তুলিয়াছে।" (কণ্ঠরোধ)
১২৬ বছর আগে, ১৮৯৮ সালে মুক্ত মত প্রকাশের বিরোধী, ‘সংশোধিত সেডিশন বিল’ পাশ হওয়ার আগের দিন রবীন্দ্রনাথ টাউনহলে তাঁর বিখ্যাত ‘কণ্ঠরোধ’ ভাষণ দেন। সেদিন ব্রিটিশ সরকারের আইন করে ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা রোধ করা’র চেষ্টার বিরুদ্ধে যে তীব্র ভাষায় বিরোধিতা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, সেই তিনি কি কখনো কল্পনা করেছিলেন - স্বাধীন দেশের গণতান্ত্রিক সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার পরিবর্তে চরম অসহিষ্ণু হয়ে আবার আইন করে কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করবে ?
গত কয়েকবছর ধরে মোদীজী এবং তার সরকারের বিরুদ্ধে সারাদেশের মানুষ ক্রমাগত বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছিল। আর তাই মেন স্ট্রিম মিডিয়ার বিরাট অংশকে ভয় দেখিয়ে, লোভ দেখিয়ে এবং সর্বশেষ, বন্ধু পুঁজির মালিকদের দিয়ে কিনে নিয়ে তাদের বশে রাখার সব ব্যবস্থা পাকা করে ফেলেছিল। এইসময়ে নতুন নাম এসে গেল অভিধানে , ‘গোদী মিডিয়া’, সাথে ভয়ঙ্কর বিজেপি আইটি সেল। ওরা রাতকে প্রায় দিন করে দেখাচ্ছিল। কিন্তু এই দু’বছরে ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম সহ সমগ্র সোশাল মিডিয়া জুড়ে একদল মানুষ বুক চিতিয়ে এই সরকারের সমস্ত অন্ধকার দিকগুলোকে নগ্ন করে মানুষের সামনে নিয়ে এসে ওদের বাড়া ভাতে ছাই দিতে শুরু করল। এবারের নির্বাচনে প্রমাণ হয়ে গেছে, যে তথাকথিত কর্পোরেট পুঁজির মূলধারার সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেলের তৈরি করা গল্পের বিপরীতে এই স্বাধীন সাংবাদিক বা সোশাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের তথ্য আর বক্তব্য ভোটারদের মনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। কর্পোরেট মিডিয়া, এমনকি বিজেপি’র আইটি সেলও এবার ফেল করে গেছে একতরফা মোদী বন্দনা প্রচার করার কাজে। মূলধারার সংবাদমাধ্যমের থেকেও মোবাইল, ইন্টারনেট ও সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারী জনতা এই ‘ইনফ্লুয়েন্সার’-দের কথাই বেশি শুনেছে, ভিডিও ক্লিপ বেশি দেখেছে, আর সোশাল মিডিয়ায় রাজনৈতিক খবর নিয়ে বেশি আলাপ আলোচনা করেছে। গতবছরের ‘সিএসডিএস লোকনীতির’ বার্ষিক রিপোর্ট অনুযায়ী ৩০ শতাংশ লোক ডিজিটাল মিডিয়া দেখেছে, ৪২ শতাংশ লোক টিভি দেখেছে, ৬ শতাংশ রেডিও শুনেছে আর ১৬ শতাংশ সংবাদপত্র পড়েছে। ২০২৪ সালে এই সংখ্যা বেড়ে ডিজিটাল মিডিয়ার দর্শক প্রায় ৫২ শতাংশ হয়ে গেছে। আর তাই এই সরকার এসেই এই অবাধ্য জনতার গলা টিপে ধরতে চাইছে।
যেহেতু চালু আইন দিয়ে অসংগঠিত সোশাল মিডিয়ার রাজনৈতিক ভাষ্যকারদের বাগে আনা কঠিন হচ্ছে, তাই অতীব গোপনে নিয়ে আসছে ‘দ্য ব্রডকাস্টিং সার্ভিসেস (রেগুলেশন) বিল ২০২৪’। নতুন করে কণ্ঠরোধের উদ্যোগের সময় তাই মনে পড়ে রবীন্দ্রনাথের সেই উক্তি, "ইতিমধ্যে একদিন দেখিলাম, গভর্নমেন্ট অত্যন্ত সচকিতভাবে তাঁহার পুরাতন দণ্ডশালা হইতে কতকগুলি অব্যবহৃত কঠিন নিয়মের প্রবল লৌহশৃঙ্খল টানিয়া বাহির করিয়া তাহার মরিচা সাফ করিতে বসিয়াছেন। প্রত্যহ-প্রচলিত আইনের মোটা কাছিতেও আমাদিগকে আর বাঁধিয়া রাখিতে পারে না— আমরা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর!...এক দিকে পুরাতন আইন-শৃঙ্খলের মরিচা সাফ হইলো, আবার অন্য দিকে রাজ-কারখানায় নতুন লৌহশৃঙ্খল-নির্মাণের ভীষণ হাতুড়ি ধ্বনিতে সমস্ত ভারতবর্ষ কম্পান্বিত হইয়া উঠিয়াছে। একটা ভয়ানক ধুম পড়িয়া গেছে। আমরা এতই ভয়ঙ্কর। ...কিন্তু পাহারা দিবার ভার যে জাগ্রত লোকটির হাতে পাহারা দিবার প্রণালীও তিনি স্থির করিবেন; সে সম্বন্ধে বিজ্ঞভাবে পরামর্শ দেওয়া আমার পক্ষে নিরতিশয় ধৃষ্টতা এবং সম্ভবত তাহা নিরাপদও নহে। (কণ্ঠরোধ)।
গতবছর নভেম্বরে ‘দ্য ব্রডকাস্টিং সার্ভিসেস (রেগুলেশন) বিল ২০২৩’-এর খসড়া প্রকাশ করেছিল সরকার। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, সেই বিলের উদ্দেশ্য ছিল মূলত ‘দ্য কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্কস অ্যাক্ট ১৯৯৫’-কে সরিয়ে বর্তমান টিভি, রেডিও এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলিকে একটি আইনের ছাতার তলায় আনা। তাতে অবশ্যই স্যাটেলাইট ব্রডকাস্টিংয়ের সঙ্গে ইন্টারনেট ব্রডকাস্টিং নেটওয়ার্ককেও জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই বিল পরামর্শের জন্য সর্বসমক্ষে বিলি করা হয়েছিল।
সম্প্রতি হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকার এক প্রতিবেদন বলছে, এবার বিলটির একটি দ্বিতীয় খসড়া তৈরি হয়েছে এবং সেই খসড়ার প্রতিটি কপি ‘ওয়াটার মার্ক’ করে মুষ্টিমেয় কয়েকজনের মধ্যে বিলি করা হয়েছে, যাতে কেউ বিলটি সংবাদমাধ্যম বা অন্য কারোর কাছে ফাঁস করে দিতে না পারেন। ১০ আগস্টের মধ্যে তাঁদের বক্তব্য জানাতে বলা হয়েছিল তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকে। প্রশ্ন— কাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে? সেটা এত গোপনেই বা কেন? ভবিষ্যতে বিরোধী দলের সাংসদদের কথা শোনা হবে কিনা অথবা সাধারণ মানুষের সরাসরি মতামত আদৌ নেওয়া হবে কিনা সেটাই আজ গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
প্রথম খসড়ার ২০ নম্বর ধারা অনুযায়ী কোনও ব্যক্তি যদি খবর ও ঘটনা নিয়ে কোনও অনুষ্ঠান করে অনলাইন সংবাদপত্র, ওয়েবসাইট বা সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করেন (ছাপা সংবাদপত্রের ই-পেপার বা প্রতিলিপি ছাড়া), তাহলে তিনিও এই আইনের আওতায় আসবেন এবং তাঁকে আইনে বলে দেওয়া ‘অনুষ্ঠান ও বিজ্ঞাপন কোড’ মেনে চলতে হবে। খবরে প্রকাশ, দ্বিতীয় খসড়ায় যেসব স্বাধীন সাংবাদিক ও বিশ্লেষক প্রতিদিনের খবরের বিশ্লেষণ করেন, তাঁদেরও এই প্রস্তাবিত আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। আর এটি শুধুই ছবি বা ভিডিওর মাধ্যমে খবর বা বিশ্লেষণ নয়, ডিজিটাল মাধ্যমে লেখালিখির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। গত কয়েকবছর ধরে ডিজিটাল মাধ্যমের সাংবাদিকদের সরকারি স্বীকৃতি দিতে টালবাহানা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারগুলি। গতবছরই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের প্রেস ইনফর্মেশন ব্যুরো ডিজিটাল মাধ্যমের সাংবাদিকদের অনুমোদন দেওয়ার নিয়মাবলী ধার্য করেছে। এখনো বহু রাজ্য সরকার তাও করে উঠতে পারেনি। তাঁদের কাছে এটাই ঠিক করা কঠিন হয়ে উঠেছে যে ডিজিটাল মাধ্যমে কে সাংবাদিক, কে বিশ্লেষক আর কে নানা জায়গা থেকে খবর সংগ্রহ করে ওয়েবসাইট বা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবের মাধ্যমে সম্প্রচার করছে অথবা কে কোনও রাজনৈতিক দলের মুখপাত্র হয়ে সংবাদ সরবরাহ ও বিশ্লেষণ করছে। কাজটি হয়তো কঠিন, কিন্তু সদিচ্ছা থাকলে দুঃসাধ্য নয়। কর্পোরেট মিডিয়ার যুগে এই সমান্তরাল মিডিয়ার উত্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র বিকল্প রাজনৈতিক আলেখ্য তৈরি করার জন্য নয়, স্থানীয় ভাষায় এলাকার স্থানীয় খবর যা কর্পোরেট মিডিয়ায় পাওয়া যায় না, সেগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রেও এই স্বাধীন মিডিয়ার ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাতে স্থানীয় মানুষ যেমন উপকৃত হন, তেমন স্থানীয় প্রশাসনও অনেকসময় উপকৃত হয়। উলটে কর্পোরেট মিডিয়ার সাংবাদিকরা একটি আপাত নিরাপত্তার বলয়ে থাকলেও ডিজিটাল সাংবাদিকরা কিন্তু স্বীকৃতির অভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন প্রতিনিয়ত।
যদি দেশের পক্ষে ক্ষতিকর কোনও বিষয় হয় বা জনগণের জন্য ক্ষতিকারক কোনও বিষয় হয়, তাহলে তো বর্তমান চালু আইনেই তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতেই পারে। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের নিয়মাবলী ‘দি ইনফরমেশন টেকনোলজি (ইন্টারমিডিয়ারি গাইডলাইনস অ্যান্ড ডিজিটাল মিডিয়া এথিক্স (কোড) রুলস ২০২১’ (যা ২০২৩ সালে পরিমার্জন করা হয়)- তো আছেই, এছাড়াও অন্য আইনও আছে। গত বছরের ২১ মার্চ সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে তৎকালীন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর একটি হিসাব দিয়েছিলেন, ডিসেম্বর ২০২১ থেকে মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত তাঁর মন্ত্রক তথ্যপ্রযুক্তি আইন ২০০০-এর ৬৯(ক) ধারা অনুযায়ী (জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা ইত্যাদি কারণে) ১১০টি ইউটিউব নির্ভর খবরের চ্যানেল, ২৪৮টি ইউআরএল (যার মধ্যে ওয়েব পেজ, ওয়েবসাইট, সোশাল মিডিয়া পোস্ট ও অ্যাকাউন্ট) বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল।
তাহলে কেন এই নতুন আইন তৈরির চেষ্টা সেটা বুঝতে কোনও অসুবিধা হয় না। আমরা ওনার ‘মন কি বাত’ শুনবো, কিন্তু আমাদের ‘মন কি বাত’ বলার শেষ মাধ্যমটাও আইন করে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা এই আইন।
কি আছে এই নতুন প্রস্তাবিত বিলে? খবর অনুযায়ী বিলটির অস্পষ্টতা আর উদ্বেগ বাড়িয়েছে ‘যেমন নির্ধারিত হতে পারে’ বাক্যাংশটি ৪২ বার এই বিলে উল্লেখ করে। এছাড়া কি আছে?
▪বিল পাশের এক মাসের মধ্যে সরকারকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সব তথ্য জানাতে হবে এবং লাইসেন্স নিতে হবে। সেই ব্যক্তি বা সংস্থাকে ‘কনটেন্ট ইভালুয়েশন কমিটি’ (বিষয়বস্তু মূল্যায়ন কমিটি) গঠন করতে হবে। এটা প্রকাশের আগে এই কমিটি কনটেন্ট চেক করবে। সরকার বা কোনও ব্যক্তি এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে এই কমিটিকে উত্তর দিতে হবে, না করলে শাস্তির মুখে পড়তে পারে।
▪ নিজেদের খরচে ‘একটি Grievance Redressal Officer’ (অভিযোগ নিষ্পত্তি কর্মকর্তা) নিয়োগ করতে হবে। যদি অভিযোগকারী তার অভিযোগের উত্তরে সন্তুষ্ট না হন, তাহলে তিনি সরকারি কমিটির কাছে যেতে পারেন।
▪ এ ছাড়াও যদি সরকার মনে করে, যে কোনও সময়ে অভিযোগ ছাড়াই যেকোনও অফিসে তল্লাশি চালাতে পারে। যদি প্রয়োজন মনে করে তাহলে যেকোনও কিছু বাজেয়াপ্ত করতে পারে।
সংশোধিত খসড়া বিল অনুসারে, ইনস্টাগ্রাম এবং ইউটিউবার সহ সব ধরনের সমাজমাধ্যমের ইনফ্লুএন্সারকে ‘ডিজিটাল নিউজ ব্রডকাস্টার’ হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হতে পারে এবং প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, তাদের আমাজন প্রাইম, নেটফ্লিক্স বা হটস্টারের মতো বিরাট ওটিটি পরিষেবাগুলির মতো তিন-স্তরের নিয়ন্ত্রক কাঠামোর অধীনে নথিভুক্ত হতে হবে।
এর সাথে একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো সরকারি স্তরে একটি ‘সম্প্রচার উপদেষ্টা পরিষদ’ গঠন করা হবে, যাতে আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে আর্থিক জরিমানা বা অন্য শাস্তি আরোপ করার জন্য কেন্দ্রের দ্বারা মনোনীত পাঁচ জন কর্মকর্তা এবং শিল্পের পেশাদারদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
যারা সোশাল মিডিয়াতে সংবাদ এবং বর্তমান বিষয় পোস্ট করেন একটি পদ্ধতিগত ব্যবসা, পেশাদার, বাণিজ্যিক কার্যকলাপের অংশ হিসাবে, তারাও এর আওতার থাকবেন। এইভাবে, একটি পডকাস্ট, যেটিতে খবরের ভাষ্য রয়েছে বা একটি নিউজ ব্লগ যাতে Google AdSense capable করা আছে তাকেও নিয়ম মেনে চলতে হবে।
প্রস্তাবিত বিলের আরেকটি দিক হলো যে, আগের বিলের খসড়ায় শুধু ভারতীয় নাগরিক বলে উল্লেখ ছিল। এবারে এই আইন সমগ্র পৃথিবীর ব্যবহারকারীদের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে। মেটা, ইউটিউব এবং এক্স-এর মতো সোশাল মিডিয়া কোম্পানি, যেগুলিকে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে, যদি সরকারকে তাদের কাছ থেকে চাওয়া কোনও তথ্য সরবরাহ না করা হয়, তবে তারা ফৌজদারি দায়বদ্ধতার আইনে পড়তে পারে। গুগল অ্যাডসেন্স, ফেসবুক অডিয়েন্স নেটওয়ার্ক এবং ট্যাবুলার মতো বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্কগুলিকেও আইনের আওতায় আনার সম্ভাবনা রয়েছে এবং তাদের ‘বিজ্ঞাপন মধ্যস্থতাকারী’ হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হবে। খসড়া বিলটি নিয়ম মেনে চলা নিশ্চিত করার জন্য সামাজিক মিডিয়া মধ্যস্থতাকারীর পরিবর্তে ব্যবহারকারীকে দায়ী করবে।
তবে সরকার যদি মনে করে তাহলে বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংস্থাকে এই আইন থেকে ছাড়ের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
এবার নিশ্চয়ই সবটা স্পষ্ট হচ্ছে। এতদিন পর্যন্ত ব্যাপারটি ক্ষেত্র বিশেষে থানায় অভিযোগ, আইনি নোটিস বা ধরপাকড়ে সীমাবদ্ধ ছিল। এবার আর ক্ষেত্র বিশেষ নয়, পুরো ব্যাপারটিই আইনি জালে নিয়ে আসতে চলেছে নতুন নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার– এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ব্যাপারটি হলো আসলে স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের উপর আইনি খবরদারি। শুধু স্বাধীন সংবাদমাধ্যমই নয়, এই খবরদারি সমস্ত নাগরিকের উপরেই, যাঁরাই সংবাদ সংক্রান্ত নানা টিকা টিপ্পনী করে থাকেন সোশাল মিডিয়ায় বা ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহার করেন। কিন্তু উল্টোদিকে তাদের পছন্দের আইটি সেল বা ব্যক্তিদের মুক্ত রাখার সব ব্যবস্থা পাকা করতে চাইছে এই সরকার।
আবার নতুন করে এই কণ্ঠরোধের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার সময় এসেছে। আজ সব অংশের মানুষের কাছেই এটা একটা চ্যালেঞ্জ।
Highlights
আসলে স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের উপর আইনি খবরদারি। শুধু স্বাধীন সংবাদমাধ্যমই নয়, এই খবরদারি সমস্ত নাগরিকের উপরেই, যাঁরাই সংবাদ সংক্রান্ত নানা টিকা টিপ্পনী করে থাকেন সোশাল মিডিয়ায় বা ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহার করেন। উল্টোদিকে তাদের পছন্দের আইটি সেল বা ব্যক্তিদের মুক্ত রাখার ব্যবস্থাও পাকা করতে চাইছে এই সরকার।
Comments :0