একদিকে সর্বনাশা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের মাধ্যমে গরিব, দলিত, উদ্বাস্তু, সংখ্যালঘু মানুষকে বে-নাগরিক করার চক্রান্ত হয়েছে, অন্যদিকে মানুষকে মিথ্যা কথা বলে ধাপ্পা দিয়ে ভোট হাসিলের চেষ্টা চলছে বিজেপি-আরএসএস’র। আর এই সংবিধানবিরোধী কাজে পরোক্ষভাবে শরিক এরাজ্যের তৃণমূলও। এই চক্রান্ত অবিলম্বে বন্ধ করে সাধারণ মানুষকে অযথা হয়রানি ও আতঙ্কের থেকে রেহাই দিতে হবে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন সম্মিলিত কেন্দ্রীয় বাস্তুহারা পরিষদ, পশ্চিমবঙ্গ সামাজিক ন্যায় মঞ্চ, সংবিধান বাঁচাও মঞ্চ সহ বিভিন্ন উদ্বাস্তু ও সামাজিক গণসংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তাঁদের পরিষ্কার বক্তব্য ‘নো সিএএ, নো এনআরসি’। অবিলম্বে ২০০৩ সালের সংশোধনীর নির্দিষ্ট ৩টি বিপজ্জনক ধারাকে বাতিল করতে হবে।
সোমবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক বৈঠকে সংগঠনগুলির তরফে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ। ছিলেন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা সুজন চক্রবর্তী, রেখা গোস্বামী, প্রদীপ ভট্টাচার্য সহ অলকেশ দাস, মধু দত্ত, সুখবিলাস বর্মা, সুকৃতিরঞ্জন বিশ্বাস, মহম্মদ কামরুজ্জামান প্রমুখ।
সুজন চক্রবর্তী বলেন, আমাদের দাবি ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর বা তার পরের কোন তারিখকে ভিত্তিবর্ষ ধরে তার আগে থেকে ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী সবাইকে ভারতের নাগরিক হিসাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। তিনি বলেন, নাগরিকত্ব নিয়ে জটিলতা তৈরির চেষ্টা চলছে, বিপদে পড়ছেন গরিব মানুষ। দেশের দরিদ্র মানুষ পূর্ব পুরুষের দলিল কোথায় পাবেন? ২০০৩ সালে এনডিএ সরকারের আমলে এই চক্রান্তের শুরু। তখন মমতা ব্যানার্জির দল ছিল এনডিএ সরকারের শরিক। আইন সংশোধন করে দেশভাগ হয়ে ভারতে আসা প্রায় সমস্ত মানুষকে ‘বেআইনি অনুপ্রবেশকারী’ বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়। জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের সুযোগ ও অধিকারকে কেড়ে নিয়ে বে-নাগরিক সৃষ্টির ব্যবস্থা কায়েম হয়। শুধু তাই নয়, বাংলা-ভাষাভাষী মানুষকে ‘বাংলাদেশি’ আখ্যা দিয়ে দিল্লি সহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের ওপর শুরু হয় হেনস্তা। আর অন্যদিকে, এরাজ্যে উদ্বাস্তু মানুষকে অনুপ্রবেশকারী আখ্যা দিয়ে ভোটার তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ দেওয়ার দাবি করে তৃণমূল, এই নিয়ে সওয়াল করে সংসদেও।
তিনি বলেন, ২০১৯ সালে বলা হলো নাগরিকত্বের জন্য আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাংলাদেশ থেকে আগত কিছু নির্দিষ্ট অংশের মানুষ আবেদন করতে পারবে। এখানেও এক বড় ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। চার বছর আগে আইন পাশ হলেও এখনও পর্যন্ত এই আইনের রুলস প্রকাশিত হয়নি। আসলে বিজেপি ক্রমাগত ধাপ্পা দিয়ে চলেছে নাগরিকত্ব নিয়ে। আসলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাই আড়ালে স্বীকার করছেন নাগরিকত্ব নিয়ে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আসামে ১৯ লক্ষ বে-নাগরিক হয়ে গেছে নতুন আইনের ফলে। ভোটের আগে নাগরিকত্ব নিয়ে জিগির তুলে কার্য উদ্ধার করতে চায় বিজেপি। আর ভোট পাওয়া হয়ে গেলেই এই আইনের বলে লোকজনকে তাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে, যা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। আমরা বলছি, ২০১৯ সালের সংশোধনী আইনকেও বাতিল করতে হবে সরকারকে।
প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেছেন, আমরা স্পষ্ট জানাতে চাই ভারতের মানুষের প্রতি ভীতি প্রদর্শন করা যাবে না যা মোদী-শাহ’রা করতে চেষ্টা করছেন। আমরা বারবার বলছি, সংবিধান মেনে চলুন, ধর্মকে নাগরিকত্বের সঙ্গে জড়াবেন না। এই একনায়কতন্ত্র দেশের মানুষের পক্ষে মহা বিপদের কারণ হবে।
রেখা গোস্বামী বলেন, উদ্বাস্তুরা হঠাৎ কেন এবং কি করে ‘অনুপ্রবেশকারী’ হয়ে গেলেন তা স্পষ্ট করে বলতে হবে সরকারকে। কেন ধর্ম নিয়ে আসা হচ্ছে নাগরিকত্বের মধ্যে? ভুল তথ্যের ওপর দাঁড়িয়ে ২০০৩ সালের আইন পাশ হয়েছিল। এগুলি প্রত্যাহার করতে হবে। বিজেপি’র জোর করে আরোপিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের ফলে দেশের নারী ও শিশুদের অবস্থা অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। একে রুটিরুজি’র প্রচণ্ড অভাব, তার ওপর মাথার ছাদ হারানোর এক চরম আতঙ্ক-অস্থিরতা ক্রমশ বাড়ছে। অবিলম্বে এর মীমাংসা করতে হবে।
অলকেশ দাস বলেন, এ রাজ্যের তৃণমূল সরকার কৌশলে কাজ হাসিল করছে বিজেপি সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে। নাগরিকত্ব ইস্যুতে এমন অবস্থান নিচ্ছেন যাতে পরোক্ষে বিজেপি’র সুবিধা হয়ে যায়। আমাদের প্রশ্ন, সমস্ত ব্লকে ব্লকে আধার কার্ড বাতিল করা হচ্ছে কেন, কোন উদ্দেশ্যে। ভোটার তালিকা থেকে নাম কাটানো, বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া-এগুলিই তো মূল উদ্দেশ্য দেখা যাচ্ছে, আর এইভাবে মানুষের অধিকারকে ছেঁটে ফেলাও যাবে। ওদিকে সংখ্যালঘুদের মধ্যে মিথ্যা প্রচার করে তাদের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বানানো হচ্ছে। বিপদ ক্রমশ বাড়ছে মানুষের।
CAA
সিএএ-এনআরসি নয়, নাগরিকত্বের নামে ভোটের সময়ে ধাপ্পাবাজি বিজেপি-তৃণমূলের
×
Comments :0