বৃহস্পতিবার ডিভিসি’র মাইথনে প্রশাসনিক ভবন কম্বাইন্ড বিল্ডিংয়ের গেটে শান্তিপূর্ণ উচ্ছেদ বিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনী(সিআইএসএফ) বেপরোয়া লাঠিচার্জ করে। কেবল লাঠিচার্জ করেই ক্ষান্ত হয়নি সিআইএসএফ, আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে ইট পাথরও ছুঁড়েছে। সিআইএসএফ জওয়ানরা আন্দোলনকারীদের অনেকগুলি বাইক এবং চার চাকার গাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে বলে অভিযোগ। সিআইএসএফ’র তান্ডবে প্রশাসনিক ভবন চত্বর জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। কর্মস্থলে যোগ দিতে আসা কয়েকজন ডিভিসি কর্মী, যারা তাদের আই কার্ড দেখানো সত্ত্বেও তাদের লাঠি পেটা করেছে সিআইএসএফ। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। এদিন সকালের দিকে নৈরাজ্যকর ও আতঙ্ক জনক পরিস্থিতির জন্য একজন কর্মীও কাজে যোগ দিতে পারেন নি। অন্যদিকে সিআইএসএফ’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদেরও কয়েকজন আন্দোলনকারিদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন।
এদিন ঘটনাটি ঘটেছে বেলা ৯টা নাগাদ। মাইথন ড্যামের ওপর পশ্চিম বর্ধমান ও ধানবাদ দুই জেলার দিকে চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে অনেকগুলি গুমটি ও ঠেলার দোকান রয়েছে। পশ্চিম বর্ধমান জেলার অংশে শান্তি নিবাস, মজুমদার নিবাস এলাকায় কিছু দোকান রয়েছে। ধানবাদ জেলার টোল গেট, ফুল বাগান এলাকায় কিছু দোকান রয়েছে। সবগুলি দোকানই অস্থায়ী। কোনোটারই পাকা কাঠামো নেই। চা, মুড়ি, তেলে ভাজা, বিস্কুট, কেক ইত্যাদির দোকান।
ডিভিসি কর্তৃপক্ষ দোকান উচ্ছেদ করার জন্য নোটিস দিয়েছিল। দোকানদাররা উচ্ছেদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছিলেন। মার্কসিস্ট কো-অর্ডিনেশন কমিটি(এমসিসি) নেতা, প্রাক্তন বিধায়ক অরূপ চ্যাটার্জি উচ্ছেদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছিলেন।
এদিন প্রাক্তন বিধায়ক অরূপ চ্যাটার্জির নেতৃত্বে আগাম নোটিস দিয়ে প্রশাসনিক ভবনের গেটের সামনে উচ্ছেদের নোটিস পাওয়া দোকানদার এবং এমসিসি’র শ’দেড়েক কর্মী অবস্থান শুরু করা মাত্র লাঠি হাতে সিআইএসএফতেড়ে আসে। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনকারিদের অনেকে সিআইএসএফ’র লাঠি ও ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন। আহত ৬ জনকে মাইথন ডিভিসি বিপি নিয়োগী হাসপাতালে আনা হয় চিকিৎসার জন্য। অনেকেরই মাথা ফেটেছে। মুখ ফেটেছে। প্রাক্তন বিধায়ক অরূপ চ্যাটার্জি ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, গত তিন মাস ধরে ডিভিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে উচ্ছেদ নিয়ে আলোচনায় বসতে চেয়েছি। কর্তৃপক্ষ সাড়া দেয়নি। সিআইএসএফ পাঠিয়ে দোকানদারদের তুলে দেবার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল প্রায়ই। আন্দোলনকারি দোকানদার মন্টু মাহাতো বললেন, ‘‘ডিভিসিতে আমাদের জমি গেছে। নেহরু জী মাইথন ড্যাম উদ্বোধনের সময় থেকে আমরা ড্যামে দোকান দিয়ে পরিবার চালাচ্ছি। কত ট্যুরিস্ট আসেন। ড্যামে কোথাও চা, টিফিনের দোকান নেই। আমাদের মতন দোকানদাররা ইট্যুরিস্টদের ভরসা’’।
আন্দোলনকারিদের ওপর সিআইএসএফ’রলাঠিচার্জের ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে সিআইটিইউ। সিআইটিইউ ধানবাদ জেলা কমিটির সম্পাদক রামকৃষ্ণ পাসোয়ান বিবৃতি দিয়ে এই ঘটনার নিন্দা করেছেন ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সিআইটিইউ দাবি জানিয়েছে, ছোট দোকানদারদের প্রতি যেন অন্যায় না হয়।
ঘটনাস্থলে নরসার বিডিও বিনোদ কুমার, পুলিশের মাইথন ফাঁড়ি ও থানার আধিকারিকরা চলে আসেন। প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে ডিভিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আন্দোলনকারিদের নেতা অরূপ চ্যাটার্জি বৈঠক হয়। কর্তৃপক্ষকে সাফ জানিয়েদেওয়া হয়েছে, উচ্ছেদ মানবো না। কোনো দোকান তুলে দেওয়া মানবো না। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আপাতত: স্থিতাবস্থা বজায় রাখা হবে।
Comments :0