Dengue

‘পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন না হওয়ায়
ডেঙ্গু মোকাবিলা করা যাচ্ছে না’
হাস্যকর যুক্তি মুখ্যমন্ত্রীর

রাজ্য

Dengue


‘গ্রামে পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন না হওয়ায় ডেঙ্গুর মোকাবিলা করা যাচ্ছে না!’ বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর কথা শুনে হতবাক রাজ্যের মানুষ। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে স্বাস্থ্য দপ্তর কী করছে? সোমবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এপর্যন্ত ৪৪০১টি ডেঙ্গু কেস ধরা পড়েছে, কিন্তু মৃত্যু সংখ্যা সঠিক করে তিনি বলেননি এদিন। তিনি এড়িয়ে গেলেও এপর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গুতে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। 
ডেঙ্গু যে ক্রমশ ভয়াবহভাবে গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ছে তা এদিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যেই উঠে এসেছে। কলকাতা, বিধাননগর, হাওড়া ছাড়াও নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলীতে ডেঙ্গির প্রাদুর্ভাব বেড়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথা অনুযায়ী রাজ্যে ডেঙ্গুর পজিটিভিটি রেট ১.৪৭ শতাংশ। পরীক্ষা হয়েছে ২৩৮৩২ জনের। কিন্তু বিভিন্ন বেসরকারি সূত্রের খবর বলছে, ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আরও অনেক বেশি। বিধাননগরে ডেঙ্গু বৃদ্ধির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেখানে মেট্রো রেলের কাজের জন্য ডেঙ্গু বেশি হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যে এদিন তীব্র আপত্তি জানিয়েছে মেট্রো রেল দপ্তর।

ডেঙ্গু বিশেষ করে গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ার কারণ ব্যাখ্যা করে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ না গঠন হওয়ার ফলে ডেঙ্গু মোকাবিলা ও প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। ব্লিচিং-এর কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। যদিও চিকিৎসকদের বক্তব্য, ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা যায় না। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে বিস্মিত গ্রামবাসীদের প্রশ্ন, যদি পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন করতে আরও দেরি হয় তাহলে কি ডেঙ্গুর আক্রমণে গ্রামকে গ্রাম উজার হয়ে যাবে? স্বাস্থ্য প্রশাসন তাহলে আছে কি করতে? দিন কয়েক আগেই কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছিলেন, গ্রামে এখন জোর উন্নয়ন হচ্ছে, শহরের বৈশিষ্ট্য গ্রামে ঢুকে পড়েছে বলে ডেঙ্গু বাড়ছে। 
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে এসেছে নদীয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, হুগলীর নাম যেখানে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি হয়েছে এবার। এর মধ্যে নদীয়ার এক ভয়াবহ চিত্র ধরা পড়েছে। হাসপাতালে চলছে বেডের হাহাকার। একটা বেডে কোথাও দুজন, কোথাও বা তিনজন ভর্তি। কোনও রোগীর ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালের মেঝেতে, তাই চিকিৎসা বিধিও কার্যত শিকেয় উঠছে। হাসপাতালে প্রতিটি বিছানায় মশারি দিতেও পারছে না কর্তৃপক্ষ। রানাঘাট ১ও ২ ব্লকে সবচেয়ে শোচনীয় পরিস্থিতি বলে জানা যাচ্ছে। নদীয়া জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১ মে মাস থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত ৭০০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। চলতি মাসের শুধুমাত্র এই শেষ সপ্তাহেই নদীয়াতে ৬৫০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। গত তিন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত ১৩৫০ জন। এছাড়াও জানা যাচ্ছে, গত দু’মাসে এই জেলায় ৫জন ডেঙ্গুতে মারা গিয়েছেন। মুর্শিদাবাদে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্তের চিকিৎসা চলছে বলে জানা যাচ্ছে। হুগলীতে এই মুহূর্তে গ্রাম-শহর মিলিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৪০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী এদিন ডেঙ্গু চিকিৎসায় বেসরকারি হাসপাতালগুলিকেও টাকার কথা না ভেবে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। তারা স্বাস্থ্যসাথী কার্ড গ্রহণ না করলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও দাবি মুখ্যমন্ত্রীর। বিরোধীদের বক্তব্য, এর আগেও কোভিডের সময়ে স্বাস্থ্যসাথী নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী গালভরা কথা বলেছিলেন। কিন্তু কার্যত বহু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে চিকিৎসা চালাতে অস্বীকার করেছে বেসরকারি হাসপাতালগুলি। ফলে স্বাস্থ্যসাথী নিয়ে গালভরা কথা মানায় না মুখ্যমন্ত্রীকে। 
চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, গ্রাম-শহরে প্রতিটি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অতিরিক্ত বেড ও মশারির ব্যবস্থা করতে হবে অবিলম্বে। জোগাড় রাখতে হবে রক্তের প্লেটলেট। ডেঙ্গু চিকিৎসায় এগুলিই প্রধান। সেইসঙ্গে মশার লার্ভা নিধন প্রক্রিয়া জোরদার করতে হবে। জমা জল, আবর্জনা পরিষ্কার রাখতে হবে। এই কাজে ‘কর্মী মিলছে না’ বলে সাফাই দিলে হবে না। সরকারি হিসাব অনুযায়ী গত বছর ৬৭ হাজারের ওপর মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন, মৃত্যু হয়েছিল ৩০ জনের। তবে বেসরকারি মতে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি।  

   

Comments :0

Login to leave a comment