DYFI Brigade Rally

বামপন্থীরাই ভবিষ্যত প্রত্যয়ী নেতৃত্ব

রাজ্য

 লড়াইয়ের পথে বাংলার ভবিষ্যতকে বাঁচানোর শপথ উচ্চারিত হলো উত্তাল ব্রিগেডের মাঠে। ভরা ব্রিগেডের ময়দান দেখিয়ে রবিবার সমাবেশ মঞ্চ থেকে ডিওয়াইএফআই নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ময়দানের দখল নিয়েছে যৌবন, রাজ্যের রাজনীতির দখলও নেবে বামপন্থীরাই। বাংলার ভবিষ্যৎ আমরা লুট হয়ে যেতে দেবো না, বাংলাকে বাঁচানোর জন্য জানকবুল লড়াই হবে। বামপথে বাংলার পুনর্জাগরণেই দেশকে বাঁচানো সম্ভব হবে। 
লড়াকু যৌবন এবং তাঁদের পাশে এসে দাঁড়ানো সমস্ত শ্রমিক, কৃষক, খেতমজুর শ্রমজীবী মানুষকে সেলাম জানিয়ে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আভাস রায়চৌধুরি আবেদন করেছেন, ইনসাফের জন্য এই লড়াইকে এবার গ্রাম শহরে বুথে বুথে নিয়ে যান। পঞ্চায়েত নির্বাচনে মানুষের যে প্রতিরোধে তীব্র স্পৃহাকে দেখা গেছে, এবার লোকসভা নির্বাচনে সেটাকেই চূড়ান্ত রূপ দিতে হবে। 
মহম্মদ সেলিম বলেছেন, পুলিশ প্রশাসন সেনা বাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে যারা সমবেত হয়েছেন, যারা ৫০ দিন পথ হাঁটায় যুবদের রসদ জুগিয়ে সাহায্য করেছেন সবাইকে সেলাম। হক চাইতে গেলে ধক লাগে। বাংলার যৌবন সেই ধক দেখিয়ে দিয়েছে। কিন্তু ইনসাফের জন্য পথ চলা এখনও বাকি। রাজ্যের মানুষ চুরি জোচ্চুরি দেখে ক্ষিপ্ত, বীতশ্রদ্ধ। নবান্নকে ঠেকাতে যারা ৫৬ ইঞ্চি কিংবা ৩৫৬-র কথা বলছিল তারাও এখন ভেগে গেছে। ধর্ম জাতি ভাষা নির্বিশেষে মানুষ এভাবে ঐক্যবদ্ধ হলেই বাংলার থেকে ভূত তাড়ানো যাবে, কোনও ওঝা চাই না। লাল হঠাও বলে বাংলার মানুষকে দুর্বল করা হয়েছে। বাংলার আবার পুনর্জাগরণ ঘটাতে বামপন্থার পুনর্জাগরণ ঘটাতে হবে।
দেশ বাঁচানোর শপথে সমাবেশ স্থলেই সংবিধানের প্রস্তাবনা পাঠ করা হয়েছে সমবেত কন্ঠে। সমাবেশ মঞ্চের পাশেই সবার ওপরে ওড়ানো হয়েছে জাতীয় পতাকা। জাতীয় পতাকা আর দেশের সংবিধান রক্ষা করবে কে? বাংলাকে দুর্নীতি আর দুষ্কৃতীরাজ থেকে বাঁচাবে কে? ডিওয়াইএফআই’র রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি সোচ্চারে বলেছেন, লড়তে এসেছি আমরা, এক ইঞ্চি জমিও ছেড়ে দেব না। বাংলায় লুট বন্ধের ব্যবস্থা বিজেপি করবে না, দেশকে বাঁচাতে মোদীকে হঠাতে তৃণমূল লড়বে না। কুত্তা যতই মোটা হোক, শের হয় না। নিজের গলিতে নিজেকে শের মনে করে। যে বামপন্থীরা ৫০ দিন ধরে পথ হেঁটেছে, যাঁরা তাঁদের সাহায্য করেছে তাঁরাই বাংলাকে বাঁচাতে পারে, দেশের জাতীয় পতাকাকে বাঁচাতে পারে। শহীদের লাশ আমাদের চোখের সামনে সবসময় ভাসে, মানুষের সঙ্গে বেইমানি আমরা করতে পারব না।
তৃণমূল আর বিজেপি’র তৈরি করা রাজনৈতিক ভাষ্য ভেঙে মানুষের ভাষ্য তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, গলির ফুটো মস্তানি নয়, আমাদের লড়াই বড় মাঠের, সেখানে ধর্ম, ভাষা, মাথার টুপি কিংবা কপালের টিকা দেখিয়ে লড়াইকে ভাগ করা যাবে না। কারণ লড়াইটা হবে কাজের জন্য, ভাতের জন্য, চুরি দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছতার জন্য। এই জন্যেই ওরা বামপন্থীদের লড়াইকে ভয় পায়। কারণ আমরা নকল যুদ্ধ ছেড়ে আসল কথা বলি। এই লড়াইকে শক্তিশালী করার জন্য বিধানসভায় লোকসভায় সেই প্রতিনিধিদেরই পাঠাতে হবে যারা গরিব মানুষের কথা বলবে। মানুষের কাছে আমাদের প্রত্যাশার হাত বাড়ানো রইল। 
সভায় সভাপতিত্ব করে ডিওয়াইএফআই’র রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহা বলেছেন, আজকের ব্রিগেড বুঝিয়ে দিচ্ছে বিভাজনের রাজনীতি শেষ কথা বলবে না। ভাইপোর যাত্রায় হাজার হাজার পুলিশ হাঁটে, ইনসাফ যাত্রায় লক্ষ লক্ষ যুবরা। ৫০ দিনের ইনসাফ যাত্রায় আমরা দেখেছি এক অসহায় পশ্চিমবঙ্গকে। আমরা দেখেছি চা শ্রমিক থেকে বিড়ি শ্রমিকদের দুর্দশা, দেখেছি ধর্ষিতা মহিলাদের আর্তনাদ, কান্না, বেকারদের হাহাকার, কিছু বলতে গেলেই পুলিশের বাড়বাড়ন্ত। আমরা যেখানেই গেছি, শুনেছি অসহায়তার নানা বিবরণ। সেইসব নিপীড়িত মানুষগুলিই আমাদের শক্তি। 
ডিওয়াইএফআই’র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিমঘ্নরাজ ভট্টাচার্য বলেছেন, মোদী সরকারে বছরে ২ কোটি টাকার চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছাঁটাই করছে, কারখানা বেসরকারি হাতে তুলে দিচ্ছে। মমতা ব্যানার্জি সরকারে আসার আগে বছরে ২ লক্ষ চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে সিঙ্গুরে ডিনামাইট দিয়ে কারখানা গুড়িয়ে দিয়েছে। বাংলার যুবদের স্বপ্নও গুড়িয়ে দিয়েছে। মোদী পকৌড়া বেচতে বলছেন, আর মমতা ব্যানার্জি ঘুঘনি বেচতে বলছেন। এগুলো বেচেই কি কালিঘাটের এত সম্পত্তি বেড়েছে? এই দুই জালিয়াত দলকেই হারাতে হবে আগামী নির্বাচনে।
ডিওয়াইএফআই’র সর্বভারতীয় সভাপতি এ রহিম সমাবেশকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধংস করে এখন দুর্নীতি আর ভ্রষ্টাচারেরও ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হয়ে উঠেছে মমতা ব্যানার্জির স্নেহস্পর্শে। দেশ জুড়েই বেকারত্ব ভয়াবহ। তার বিরুদ্ধে গোটা দেশেই লড়ছে ডিওয়াইএফআই। বাংলার যৌবনের লড়াই সারা দেশকে প্রতিরোধের শক্তি জোগানোর বার্তা দিচ্ছে। সঙ্ঘ পরিবার ও বিজেপি অপ্রতিরোধ্য নয়। ভবিষ্যৎ আমাদের। 
এসএফআই’র রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য বলেছেন, রাজ্যে একের পর এক স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, আদিবাসী হস্টেলগুলির সমস্যা মারাত্মক, স্কলারশিপ মিলছে না, মিড ডে মিল চুরি হচ্ছে, ওদিকে বাড়ছে ফি। এক কথায় শিক্ষাক্ষেত্রে এক ভয়াবহ অরাজকতা চলছে। চুরির তালিকায় বোঝাই যাচ্ছে এরাজ্যে তৃণমূলের প্রবীণ, নবীন- কেউ চুরি করতে ছাড়েনি। বাংলার ছাত্র-যুবরা তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ময়দানেই থাকবে। 
আভাস রায়চৌধুরি বলেছেন, বাংলার এই হাল হওয়ার কথা ছিল না। কৃষির উন্নয়নের ভিতের ওপরে শিল্পে কাজের সম্ভাবনা তৈরি করেছিল বামফ্রন্ট সরকার। আজ কৃষকেরও ফসলের দাম নেই, খেতমজুরের কাজ নেই, শ্রমিকের মজুরি নেই, বেকারের কাজ নেই। বেকার মজুত বাহিনী তৈরি করে আম্বানি আদানিদের তন্ত্র তৈরি করা হচ্ছে। এমন তো হওয়ার কথা ছিল না, স্বপ্নকে হত্যা কারা করেছে? আজ হোক, কাল হোক, ইতিহাসের কাঠগড়ায় এর বিচার হবেই। 
এরাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিজেপি’র নকল লড়াইকে উন্মোচিত করে দিয়ে তিনি বলেছেন, বিরোধী দলনেতা ঢেঁকুর তুললেও সেই দুর্নীতির পচা গন্ধই বের হবে। রেগায় দুর্নীতির শাস্তি চাইলে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার একটাও এফআইআর দায়ের করেনি কেন? এরাজ্যের তৃণমূল সরকার দুর্নীতি মামলা থেকে বাঁচার জন্য মামলা করতে পারে, রেগার টাকা আদায় করতে মামলা করেনি কেন? দুই চোর কেউ কারো বিচার করবে না, জনগণের আদালতেই এদের বিচার করতে হবে।
 

Comments :0

Login to leave a comment