স্থলপথ, জলপথ এড়িয়ে হেলিকপ্টার চড়ে মঙ্গলবার সকালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এলেন সুন্দরবন লাগোয়া হিঙ্গলগঞ্জের সামসেরনগরে। বনবিবি তথা পিরানীর পুজো দিলেন। প্রকৃতি ও বৃক্ষের পুজো করলেন।
মঞ্চ থেকে ভাষণ দিলেন। সরকারি বিভিন্ন পরিষেবা প্রকল্পের জন্য ‘দুয়ার সরকার’ কর্মসূচির প্রচার করলেন। চাদর, কম্বল, সোয়েটার বিলি করলেন। সেই সঙ্গে ‘মেজাজও হারালেন’। তাঁর কেনা ৫ হাজার চাদর, ৫ হাজার কম্বল, ৫ হাজার সোয়েটার নেই কেন মঞ্চে? কোথায় সেগুলি? ধমক দিলেন জেলাশাসককে। ডেকে পাঠালেন বিডিওকে। শেষে কিছু কম্বল চাদর সোয়েটার এলো। এক হাজার মহিলাকে বিলি করে জানান আরও বিলি হবে।
কিন্তু সুন্দরবনের বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরে এদিনই একের পর এক প্রশ্ন ছুঁড়েছে সিপিআই(এম)। পঞ্চায়েতে পুকুরচুরি, শিক্ষকবিহীন স্কুল, কাটমানি বা কাজের হাহাকারের প্রসঙ্গে সরব হয়েছেন সিপিআই(এম) নেতা এবং প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দার।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতে এবং নিজের ইমেজ বজায় রাখতে প্রশাসনকে দায়ী করছেন। সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। বনবিবির পুজো দিয়ে জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী ৪৫৬ কোটি ২০ লক্ষ টাকার প্রস্তাবিত অর্থ মূল্যের ৮টি জনমুখী প্রকল্পের শিলান্যাস করেন। কয়েকটি রাস্তা, জেটিঘাটের উদ্বোধন ঘোষণা করেন মঞ্চ থেকে। ১১টি ব্লকের বিভিন্ন স্থানে ২০টি বিদ্যালয়, বারাসত পৌরসভা এলাকায় কর্মতীর্থ, মিনাখাঁয় গার্লস হস্টেলের ঘোষণা করেন। বনবিবির মন্দিরটি পাকা করার নির্দেশ দিলেন।
সন্দেশখালির প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দার সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নে বলেন, বনবিবির পুজো দিলে সুন্দরবনের মানুষের জীবন জীবিকার পরিবর্তন হবে? পঞ্চায়েতের পুকুরচুরি বন্ধ হবে? আবাস যোজনার টাকা দেদার লুট হচ্ছে। নেতাদের বাটোয়ারা না দিলে পরের কিস্তির টাকা পান না উপভোক্তারা। আদিবাসীদের বার্ধক্য ভাতার টাকা বন্ধ। ১১ মাস ধরে একশো দিনের কাজ বন্ধ। অসংখ্য মানুষের কাজের মজুরি বকেয়া পড়ে আছে। এদের কী হবে?
সিপিআই(এম)’র রাজ্য কমিটি সদস্য সর্দার বলেন, ‘‘যেখানে পুজো দিলেন সেখানকার মানুষ আয়লায় ক্ষতিগ্রস্ত। নদী বাঁধ হলো না। টাকা ফিরে গেল। আম্ফান, ইয়াস ঘূর্ণিঝড়ে সুন্দরবনের ক্ষতি অনুমান করা যায় না। সেখানেও দুর্নীতি। গরিবের চালে খড় নেই, তাঁর নামে টাকা নেই। পাকা বাড়ি, চাকুরিজীবী, তৃণমূলের নেতা ও কর্মীদের নামে একাধিক ঘরের টাকা। রাস্তার কী বেহাল অবস্থা।’’
সর্দার বলেন, ‘‘সুন্দরবনের স্কুলে স্কুলে শিক্ষক নেই। গ্রামে গ্রামে, গরিব পাড়ায়, আদিবাসী পাড়ায় ড্রপ আউট আর ড্রপ আউট। অশিক্ষার পাহাড় তৈরি হচ্ছে। রেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। দুয়ারে রেশন মানে গরিবের ক্ষতি। ডিলার পাড়ায় এসে তৃণমূলের নেতার বাড়িতে বসে। সেখানে স্লিপ নিতে উপভোক্তাকে একদিন যেতে হয়। রেশন দোকানে মাল আনতে আবার আরও একদিন। দুয়ারে রেশন মানে দু’দিন কাজ কামাই। সুন্দরবনের ৩৫০০ কিলোমিটার নদীবাঁধ। মুখ্যমন্ত্রী বলছেন ১৫ কোটি ম্যানগ্রোভ চারা বসিয়েছে সরকার। ডাহা মিথ্যা কথা। নদীবাঁধগুলি ঘুরলেই দেখা যাবে। এত বীজ উনি কোথায় পেলেন? বনদপ্তরে এত বীজ থাকে না। উনি কী বিদেশ থেকে এনেছেন? ১৫ কোটি ম্যানগ্রোভ চারা বসলে বহু মানুষ কাজ পেতেন। তা’হলে সুন্দরবনে কেন এত কাজের হাহাকার?’’
Comments :0