নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা পড়েছে কিছুক্ষণ আগে। স্টেটব্যাঙ্কের সূত্র উদ্ধৃত করে এই তথ্য জানিয়েছে প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া।
ইয়েচুরী বলেছেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের সময়সীমা আজ বিকেল পাঁচটাতে ফুরিয়েছে। তার মধ্যে নির্বাচন কমিশনে তথ্য জমা দেওয়ার কথা এসবিআই’র। অস্বচ্ছতার বন্দোবস্ত বজায় রাখতে স্টেট ব্যাঙ্ক তথ্য চাপার সবরকম চেষ্টা করেছিল। সুপ্রিম কোর্ট তা খারিজ করে দিয়েছে।’’
সোমবার এসবিআই’র সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন খারিজ করে দিয়ে সর্বোচ্চ আদালত বলেছিল, ১২ মার্চের মধ্যে নির্বাচনী বন্ডের তথ্য জমা করতে হবে সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কটিকে।
এনডিটিভি, লাইভ মিন্ট সহ একাধিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে তথ্য জমা দেওয়ার জন্য তৎপরতা চালায় এসবিআই-এ। কিন্তু কখন তথ্য জমা দেওয়া হবে, সেই সংক্রান্ত কোনও উত্তর মেলেনি ব্যাঙ্কের তরফে।
কোন দল কোন সংস্থার থেকে কত টাকা পেয়েছে সবিস্তারে তা জনগণকে জানানোর নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ১৫ মার্চের মধ্যে স্টেট ব্যাঙ্কের থেকে তথ্য নিয়ে তা জানানোর কথা নির্বাচন কমিশনের। এই মামলায় আবেদনকারী ছিল সিপিআই(এম)। স্টেট ব্যাঙ্কেরবিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলাও দায়ের করেছেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। দেশের সর্বত্র স্টেট ব্যাঙ্কের দপ্তরের সামনে বিক্ষোভও দেখাচ্ছে সিপিআই(এম)। এদিন যেমন বিক্ষোভ হয়েছে মালদহে।
নির্বাচনী বন্ডকে সাংবিধানিক ভাবে অবৈধ আখ্যা দিয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি সেটিকে খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট। নির্বাচনী বন্ডের বিধি অনুযায়ী, একমাত্র এসবিআই’র মারফৎ এই বন্ড কেনা এবং জমা দেওয়া সম্ভব ছিল। সেই সূত্রে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ এসবিআই’কে নির্দেশ দেয় ২০১৯ সালের ১২ এপ্রিল থেকে এখনও অবধি নির্বাচনী বন্ড ব্যবহারের সমস্ত তথ্য ৬ মার্চের মধ্যে আদালতে জমা দেওয়ার।
সময়সীমা শেষের সামান্য আগে এসবিআই’র তরফে আইনজীবী হরিশ সালভে আদালতকে জানান, তাঁর মক্কেলের আরও সময় লাগবে। এবং আদালত সময়সীমা বৃদ্ধির নির্দেশ না দেওয়া সত্ত্বেও ৬ মার্চের সময়সীমা লঙ্ঘন করে এসবিআই।
এর বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয় সিপিআই(এম)। এসবিআই’র বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনে সিপিআই(এম)। সোমবার সেই মামলার শুনানি হয়। সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানায়, এসবিআই’কে মঙ্গলবারের মধ্যে সমস্ত তথ্য জমা দিতেই হবে। নইলে ইচ্ছাকৃত ভাবে আদালত অবমাননার দায়ে পড়বেন ব্যাঙ্কের শীর্ষ আধিকারিকরা।
একইসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, তথ্য জমা দেওয়া দূরের কথা, প্রায় এক মাসের মধ্যে কাজের কতদূর অগ্রগতি হয়েছে, সেই তথ্যও আদালতকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করেনি এসবিআই।
সিপিআই(এম) সহ বিরোধীদের অভিযোগ, স্টেট ব্যাঙ্কের এই তৎপরতা চলছে ছক কষে। যাতে নির্বাচনের আগে বন্ড সংক্রান্ত তথ্য জনতার সামনে না আসে। বিশ্বাস করার কোনও কারণ নেই যে স্টেট ব্যাঙ্ক, যার পুরো কর্মপদ্ধতি ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় চলে, নির্বাচনী বন্ডের সব তথ্য কয়েকদিনের মধ্যে একত্রিত করতে পারবে না।
সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো বলেছে, স্টেট ব্যাঙ্ক যে অসঙ্গত অবস্থান নিতে পারল তার পিছনে রয়েছে মোদী সরকারের চাপ। সুপ্রিম কোর্টকে নিশ্চিত করতে হবে যাতে স্টেট ব্যাঙ্ক এখনই সব তথ্য নির্বাচন কমিশনকে দেয়।
বিরোধীরা বলছেন, প্রতিটি বন্ডের একটি বিশেষ নম্বর রয়েছে, যাতে প্রয়োজনে দ্রুত তাদের চিহ্নিত করা যায়। একইসঙ্গে বন্ডের ক্রেতাকে এসবিআই’র কেওয়াইসি বা ‘নো ইয়োর কাস্টোমার’ ফর্ম পূরণ করতে হয়েছে। এসবিআই প্রতিটি বন্ডের গ্রাহক এবং সংশ্লিষ্ট বন্ডের পরিচয় জানে। একইসঙ্গে এসবিআই’র মাত্র ১৯টি ব্রাঞ্চ এই বন্ড বিক্রি করেছে, এবং মাত্র ১৪টি ব্রাঞ্চের মাধ্যমে সেই বন্ড ভাঙানো হয়েছে। এই গোটা প্রক্রিয়ায় ব্যাঙ্কের খুবই সীমিত পরিকাঠামো জড়িত। তাই সময়ের অভাব অজুহাত ছাড়া কিছুই নয়।
Comments :0