Balurghat

ডাইনি অপবাদ দিয়ে ২ লক্ষ টাকা আদায়, থানা ঘেরাও বালুরঘাটে

জেলা

ডাইনি অপবাদ দিয়ে এক ব্যক্তির থেকে ২ লক্ষের বেশি টাকা জরিমানা আদায় করার অভিযোগ। টাকা দেওয়ার পরও প্রাণভয়ে একঘরে দিন কাটাচ্ছে অসহায় আদিবাসী পরিবার। সবটা জেনেও নির্বিকার প্রশাসন। অবশেষে শুক্রবার প্রতিবাদে নামলেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন। এদিন দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন পুলিশ সুপার। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ডাইনি অপবাদ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য চাইলেও পুলিশ প্রশাসনের কেউ যায়নি বালুরঘাট ব্লকের এই গ্রামে। পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন তোলেন বিক্ষোবকারীরা।   
জানা গেছে আক্রান্ত পরিবারের বছর ষাটেকের সুনীল কিস্কুর সারদ উৎসবের সপ্তমীর দিন পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে দাশাই নাচ দেখতে গিয়েছিলেন। সেই সময় জুয়েল সরেন নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন তাঁর কারণেই তাঁর মেয়ে অসুস্থ হয়েছে। তখনই গ্রামের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে ডাইন অপবাদ। সেই সময় বিষটিতে কান দেননি সুনীল কিস্কু। দিন চারেক পর গ্রামের কয়েকজন জুয়েল সরেনের পরিবার এবং সুনীল কিস্কুর পরিবারকে নিয়ে বিহারের এক ওঝার কাছে যান। ওঝা দাবি করে বসেন, ‘‘সুনীল কিস্কুর কারণেই জুয়েলের মেয়ে অসুস্থ হয়েছেন। ডাইন বলে দাগিয়ে দেওয়া হয় সুনীলকে। 
সেখান থেকে ফিরে পরদিনই গ্রামে সালিশি বসায় মাতব্বররা। সুনীলকে দোষী ঘোষণা করে অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসার খরচ বাবদ দেড় লক্ষ টাকা দাবি করা হয়। টানা না দিলে মারধর করা হবে একঘরে করে রাখা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। প্রাণভয়ে একঘরে থাকার ভয়ে শেষমেশ জমি বন্ধক রেখে গ্রামের মোড়ল সুনীল হেমব্রমের হাতে দেড় লক্ষ টাকা তুলে দেন তিনি। তারপরেরও নেওয়া হয় ৮৫ হাজার টাকা। এখানেই শেষ নয় ওঝা নিদান দেয় তিন পরিবারকে সাতদিন নিরামিষ খেতে হবে। গ্রামের কেউ অসুস্থ হলে বা মারা গেলে তার দায় নিতে হবে তাদেরই। এমনকি অসুস্থ মেয়েটি মারা গেলে ডাইন সুনীল কিস্কুকে পিটিয়ে মারার হুমকিও দেওয়া হয়। এর পর সুনিল কিস্কু  পুলিশ প্রশাসনের সাহায্য চাইলেও মেলেনি কোন সাহায্য বা  পরিশেবা। এদিন আদিবাসী মানুষেরা বালুরঘাট থানায় বিক্ষোভ দেখিয়ে বলেন  ওহার পরামর্শে গ্রামের কিছু অসাধু লোক সুনিল কিস্কুকে ডাইনি অপবাদ দেয়। ডাইনি অপবাদের পর সুনীল বালুরঘাট থানায় এলেও তাকে পাত্তা দেওয়া হয়নি এমনকি লিখিত অভিযোগ দিলেও কোন  রিসিভ দেওয়া হয়নি। এদিন বিক্ষোভে আদিবাসীরা  আরও অভিযোগ করেন সালিশি সভার দিন পুলিশকে ফোন করলেও গ্রামে যায়নি কোন পুলিশ বা আধিকারিক। এদিন বিক্ষোভকারীরা জানায় যারা এই অসাধু প্রক্রিয়ায় যুক্ত তাদের অবিলম্বে  গ্রেপ্তার করতে হবে। আদায় করা জরিমানা বাজায়াপ্ত করে ফিরিয়ে দিতে হবে।  পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রামে ডাইনি অপবাদ সংক্রান্ত বিষয়ে সচেতনতার প্রচার সহ আলোচনা সভা করতে হবে। যদিও বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ সুপার।
ডাইনি অপবাদ দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে গোটা দেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলিতে। ডাইনি অপবাদে কখনও পিটিয়ে মারা, আবার কখনও শাস্তি হিসেবে করা হচ্ছে গ্রামছাড়া, আবার কখনও জরিমানাও করা হয়। সারা দেশে প্রায় ১২টি রাজ্যে ডাইনি সন্দেহে অত্যাচার বিরোধী আইন এবং মহারাষ্ট্র এবং কর্ণাটকে কুসংস্কার এবং কালাজাদু বিরোধী আইন প্রণয়ন হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এই জাতীয় কোনও আইন নেই। তারফলে ক্রমাগত বেড়ে চলা এই জাতীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে। এই কুসংস্কার দূর করতে বিজ্ঞান মঞ্চের তরফে উদ্যোগ নেওয়া হলেও সমস্যা সেই তিমিরেই রয়ে গেছে।

Comments :0

Login to leave a comment