TET Protesters

লড়াইয়ে রাস্তাতেই টেট উত্তীর্ণরা

রাজ্য

১৪৪ ধারা এড়াতে চারজন করে বসে বৃহস্পতিবার রাতে প্রতিবাদে অনড় আন্দোলনকারীরা।

বিধাননগর : ২০ অক্টোবর— বিধাননগরের করুণাময়ীতে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সামনে বৃহস্পতিবার থেকে ধর্নায় বসলেন ২০১৭ সালের টেট পরীক্ষায় সফল চাকরিপ্রার্থীরাও। ন্যায্য নিয়োগের দাবিতে এখানে আগে থেকেই অনশন আন্দোলনে নেমেছেন ২০১৪ সালের প্রাথমিক টেট উত্তীর্ণ প্রার্থীরা। আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ছে দেখে বৃহস্পতিবার রাতেই পুলিশের তৎপরতা দেখা গেছে অবস্থানস্থলে। অবস্থানকারীদের জোর করে তুলে দেওয়ার প্রস্তুতির ইঙ্গিত পাওয়ামাত্র নানা মহল থেকে আন্দোলনকারীদের প্রতি সংহতি ও সমর্থন বাড়তে শুরু করেছে।
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের করা মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট বৃহস্পতিবার বলেছে, পুলিশ ১৪৪ ধারা বলবৎ রাখতে পারে। বিচারপতি লপিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘পুলিশ কর্মচারীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে পারে।’’ যদিও আদালত অবস্থানকারীদের তুলে দেওয়ার কোনও নির্দেশই দেয়নি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও এদিনই বলেন, ‘‘আন্দোলনকারীদের আমি ভালোবাসি, যাঁরা ন্যায্য আন্দোলন করছেন তাঁদের।’’ মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগ বিষয়ে আর কোনও মন্তব্য না করে বলেন, ‘‘এই নিয়ে যা বলার ব্রাত্য বলবে।’’ এরপরেই আন্দোলনকারীদের ওপরে পুলিশের বলপ্রয়োগের আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে। অথচ পর্ষদ অফিস ও হাসপাতালে আসা যাওয়ার পথে কোনও অসুবিধা সৃষ্টি করা হচ্ছে না। তবুও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকেই বিরাট পুলিশ বাহিনী অঞ্চল ঘিরতে শুরু করেছে। রাতেই আন্দোলনকারীদের ওপরে আক্রমণ হবে কিনা সেই আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি জানাতে রাতে বামপন্থী যুব-ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও ঘটনাস্থলে চলে যান। 


২০১৪ সালের টেট উর্ত্তীণরা সোমবার থেকে বিধাননগরে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কার্যালয়ের থেকে প্রায় একশো মিটার দূরে ধর্না ও পরে আমরণ অনশন শুরু করেন। আর বৃহস্পতিবার দুপুরে হঠাৎ করে পর্ষদ অফিসের কাছেই ২০১৭ সালের টেট উর্ত্তীণরা পৃথকভাবে সমবেত হয়ে আন্দোলন শুরু করেন। তাঁরাও এদিন দাবি করেন, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ দায় ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, গন্ডগোল বাধাতে চাইছে। ২০১৭ সালের উত্তীর্ণ দত্তপুকুরের হুমায়ুন সরকার বলেন, ‘‘বিপুল শূন্যপদ আছে। সকলকে নিয়োগ করলে সমস্যা থাকে না। স্কুলগুলোও শিক্ষকের অভাব থেকে মুক্ত হয়।’’ অন্যদিকে ২০১৪ সালের উত্তীর্ণদের পক্ষে অর্ণব ঘোষ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি পূরণের দাবিই আমরা করছি। অস্বচ্ছ নিয়োগ পদ্ধতির শিকার আমরা। ওঁদের ছয় বছর, আমাদের আট বছর পেরিয়ে গেলেও নিয়োগ সম্পূর্ণ করা হয়নি। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, আমরা খাদের কিনারায়। আমরা হয় নিয়োগ নয় মৃত্যুর দাবিতে অনড়।’’
 আন্দোলনকারীদের এমন মনোভাব থাকলেও দুর্নীতিতে ক্ষতিগ্রস্ত দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ বাধিয়ে দেওয়ার জন্য শাসকদল এবং সরকারি তরফেই চেষ্টা হচ্ছে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাস্তা জুড়ে বিশাল সংখ্যায় জমায়েত। পুলিশ মাইকিং করে ১৪৪ ধারা জারির কথা বলেছে। অবস্থানকারী আন্দোলনকারীরা ৪ জন করে নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে গিয়েছেন এবং দূরে সরে সরে অবস্থান শুরু করেছেন। এদিন অনশনকারীদের মধ্যে রোকেয়া খাতুন, পিয়ালী দে, জয়িতা মণ্ডল গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। চারদিনে প্রায় পঁচিশজন কম বেশি অসুস্থ হয়েছেন। অনেক মহিলা সন্তান নিয়েও রাস্তায় ধর্নায় উপস্থিত। তাঁদের স্লোগানে বর্তমান পর্ষদ সভাপতি এবং গ্রেপ্তার হওয়া সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের প্রতি ক্ষোভ, ঘৃণা শোনা যায়। নিয়োগ নিয়ে ভয়ঙ্কর দুর্নীতির কারণেই সকল টেট উত্তীর্ণরা বিপদাপন্ন বলে দুই শিবিরেই স্লোগান উঠেছে। ২০১৪ এবং ২০১৭ সালের সব চাকরি প্রার্থীরাই দাবি জানান, সরকার পরীক্ষার প্যানেল, নম্বর সহ তালিকা প্রকাশ করে স্বচ্ছতার প্রমাণ দিক। অযোগ্যরা টাকা দিয়ে শিক্ষক হয়েছে, আমরা রাজপথে রাত দিন কাটাচ্ছি। আর পুলিশ আমাদের তুলে দেওয়ার জন্যই বলপ্রয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছে? এটা কেমন গণতন্ত্র!


এদিন সিপিআই(এম) নেতা পলাশ দাশ সহ এসএফআই’র সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস, সিআইটিইউ নেতা ইন্দ্রজিৎ ঘোষ, ছাত্র নেতা ডা. দীপ্তজিত দাস, তারিক আনোয়ার, যুবনেতা কলতান দাশগুপ্ত, মানব লাহা প্রমুখ আন্দোলনকারীদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন। আন্দোলনকারীদের মধ্যে সরকারের বিভাজনের চেষ্টার ঘৃণ্য নীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন তাঁরা। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমন করার চক্রান্তের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ময়ূখ বিশ্বাস আন্দোলনকারীদের সাথে মিলিত হয়ে বলেন, ‘‘সব টেট পাশ যোগ্যদের নিয়োগ করতে হবে। নজর ঘোরানোর সব চেষ্টা ব্যর্থ হবে। আমরা ছাত্র, যুব, রাজ্যের মানুষ আন্দোলনকারীদের পাশে ছিলাম, থাকব।’’ রাত দশটা নাগাদ যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জি, বিকাশ ঝা অনশনকারীদের সাথে মিলিত হন।
এদিন পশ্চিমবঙ্গ কলেজ শিক্ষাকর্মী ইউনিয়নের রাজ্য সম্পাদক সুব্রত চক্রবর্তী সহ চঞ্চল কুমার রায়, উপনন্দ মণ্ডল আন্দোলনকারীদের প্রতি সংহতি জানাতে গিয়েছিলেন। ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল অ্যা ন্ড সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ ইউনিয়নের সদস্যরাও সংহতি জানান।
সংহতি জানিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন বামপন্থীরা। এদিন সন্ধ্যায় স্বচ্ছ নিয়োগের দাবি জানিয়ে সিপিআই(এম)’র বিরাটি বিশরপাড়া পূর্ব এরিয়া কমিটি বিরাটি অঞ্চলে মিছিল করে।

Comments :0

Login to leave a comment