আজ নয়, দশ বছর আগেই সতর্ক করেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সরকার পরিবর্তনের পরেই মমতা ব্যানার্জি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে বলে দিয়েছিলেন, ‘দুষ্কৃতীদের ভাষায় কথা বলছেন উনি। অপরাধীদের বুকের পাটা বেড়ে গিয়েছে, তারা মনে করছে তাদের সরকার এসে গেছে।’ যত দিন যাচ্ছে, সেই সত্য ক্রমশ স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসেই নিজের বাড়ির পাশের থানা থেকে দুষ্কৃতীদের ছাড়িয়ে এনেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। তিনি সরকারে বসার একবছরের মধ্যে গার্ডেনরিচের হরিমোহন কলেজে ছাত্র সংসদের নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলী দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন কলকাতা পুলিশের সাব ইনস্পেক্টর তাপস চৌধুরি। মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের ঘনিষ্ঠ তৃণমূলের বরো চেয়ারম্যান মুন্না ও তার সঙ্গীদের হাত স্পষ্ট ছিল পুলিশের কাছে। পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পছনন্দা দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিতেই মুখ্যমন্ত্রী তড়িঘড়ি অপসারণ করেন পচনন্দাকে। সেই শুরু, তারপর একে একে রায়গঞ্জে অধ্যক্ষকে মার, অধ্যাপিকাদের হেনস্তা করা আরাবুলকে নেতা বানানো, কামদুনি, মধ্যমগ্রাম, ধুপগুড়িতে ধর্ষণকারী খুনিদের আড়াল, একের পর এক ঘটনায় স্পষ্ট বার্তা গিয়েছে দুষ্কৃতীদের কাছে। বার্তা গেছে পুলিশের কাছেও। কখনো ভারতী রায়ের মতো পুলিশ অফিসার মুখ্যমন্ত্রীর প্রিয় হয়ে উঠেছেন, কখনো রাজীব কুমার। আইনের শাসন কবরে গেছে, দুষ্কৃতীরাজ কায়েম হয়েছে রাজ্যজুড়ে। দুষ্কর্মে অবাধ লাইসেন্স মিলেছে তৃণমূলের। গার্ডেনরিচের পুলিশ কর্মী তাপস চৌধুরির মৃত্যু যেমন কেবল একজন পুলিশ কর্মীর মৃত্যু ছিল না, তেমনই সন্দেশখালিতে ইডি অফিসারদের মাথা ফাটানো নিছক একটি দুষ্কর্ম নয়। এগুলি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে মানুষের নিরাপত্তার, দুর্নীতি ঠেকানোর কোনও আইনি সাংবিধানিক ব্যবস্থা এরাজ্যে আর নেই। মানুষকে অসহায় বানানো হয়েছে।
দুষ্কৃতীদের দিয়ে এভাবেই প্রতিবাদী কণ্ঠ দমন করার প্রয়োজন ছিল অবাধে দুর্নীতি চালাতে। চিট ফান্ডের দুর্নীতিগ্রস্তদের আড়াল করতে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন ‘যা গেছে তা গেছে’। যারা প্রতিবাদ করেছে তাদের দিকে লেলিয়ে দিয়েছেন সেই সব দুষ্কৃতীদের যাদের খুনখারাবিকে মুখ্যমন্ত্রী ‘দুর্ঘটনা’ বলেছেন, ধর্ষণকে ‘ছোট ঘটনা’ বলেছেন, মজুত বোমার বিস্ফোরণে প্রাণহানিকে ‘বাজি কারখানায় আগুন’ বলেছেন। তারপরে বগটুই দেখিয়েছে বখরা নিয়ে লড়াইতে কীভাবে পুড়ে খাক হয়ে যায় মানুষ। একদিনে নয়, বাংলাকে তিলে তিলে বারুদের স্তূপের ওপরে বসানো হয়েছে। যাতে ‘কালীঘাটের কাকু’রা স্পর্ধার সঙ্গে বলতে পারেন, ‘আমার সাহেবকে কেউ ছুঁতে পারবে না’।
লুট আর সন্ত্রাসের এই রাজত্বকেই সোজাসুজি চ্যালেঞ্জ করেছিলেন সুদীপ্ত গুপ্ত, সইফুদ্দিন মোল্লা, মইদুল মিদ্দ্যা, আনিস খানরা। বাংলার বুকে অন্যায়ের অবসানে ইনসাফ চেয়ে প্রাণ দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু বীরের এই রক্তস্রোত মমতা ব্যানার্জির তৈরি করা মরুভূমিও শুষে নিতে পারেনি, নতুন প্রজন্ম বীরের মতোই ইনসাফের দাবিতে সোচ্চার হয়ে আরও বেশি করে মুখরিত হয়েছে। শহীদের বীরগাঁথা সংক্রামিত হয়েছে। তৃণমূলের ভীতি কিংবা প্রলোভন, বিজেপি’র সাম্প্রদায়িক বিভাজনের চেষ্টা, কোনোকিছুই বিভ্রান্ত করতে পারছে না বাংলার নতুন প্রজন্মকে। দক্ষিণপন্থার সব হিংস্রতা ও লোলুপতাকে তারা ধরে ফেলছে, বামপন্থার প্রতিই আস্থা রেখে পথ হাঁটতে শুরু করেছে। রাজ্যের উত্তর প্রান্ত থেকে দক্ষিণ প্রান্ত পর্যন্ত পথ হাঁটার পরে রবিবার তারাই ব্রিগেডে সমাবেশ ডেকেছে। এই স্পর্ধাই সমাজের অন্য সব বঞ্চিত নিপীড়িত মানুষকে উৎসাহিত করেছে। তাঁরাও শামিল হতে চলেছেন ইনসাফের দাবিতে ব্রিগেড সমাবেশে।
DYFI Brigade
দুষ্কৃতীদের সরকার থেকে নিষ্কৃতি চাইবে ব্রিগেড
×
Comments :0