Bangla Bachao Yatra

বানারহাটে ব্লক অফিস গড়ে তোলার দাবি উঠবে বাংলা বাঁচাও যাত্রায়

বাংলা বাঁচাও যাত্রা

কৌশিক দাম

খাতায়-কলমে ব্লকের মর্যাদা জুটলেও বাস্তবে জুটলো শুধুই বঞ্চনা। দীর্ঘ পাঁচ বছর অতিক্রান্ত, অথচ বানারহাটে আজও গড়ে ওঠেনি পূর্ণাঙ্গ ব্লক অফিস। কৃষি থেকে স্বাস্থ্য, ভূমি থেকে পঞ্চায়েত, সমস্ত প্রশাসনিক কাজের জন্য আজও মানুষকে ছুটতে হচ্ছে ধূপগুড়িতে। 
শাসকদলের এই ‘প্রশাসনিক প্রহসনে’র বিরুদ্ধেই এবার তীব্র জনমত গড়ে উঠছে ডুয়ার্সের চা-বাগান অধ্যুষিত এই জনপদে। আগামী ২৯ নভেম্বর কোচবিহারের তুফানগঞ্জ থেকে শুরু হওয়া সিপিআই(এম)'র ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’য় বানারহাটের এই বঞ্চনার ইস্যুকে অন্যতম হাতিয়ার করতে চলেছে সিপিআইএম নেতৃত্ব।
পাঁচ বছর আগে সরকারি ঘোষণা হয়েছিল ঢাকঢোল পিটিয়ে। কিন্তু পাঁচ বছর পার হয়ে গেলেও বানারহাটের বাসিন্দাদের প্রাপ্তির ঝুলি শূন্য। ব্লকের নিজস্ব ভবন নেই। কৃষি দফতর, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর, পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী পরিকাঠামো—সবই অদৃশ্য। ফলে জমি-জায়গার রেকর্ড সংশোধন, পর্চা তোলা, কৃষি যন্ত্রপাতির ভর্তুকির আবেদন, জাতিগত শংসাপত্র বা দৈনন্দিন সরকারি নথিপত্রের সামান্য কাজের জন্যও মানুষকে পাড়ি দিতে হয় সেই ধূপগুড়িতে। স্থানীয় মানুষের প্রশ্ন, “যদি সব কাজের জন্যই ধূপগুড়ি যেতে হয়, তবে বানারহাটকে ব্লক ঘোষণা করার নাটক কেন?”
চা-বাগান ঘেরা এই ব্লকের অধিকাংশ মানুষই শ্রমজীবী ও নিম্নবিত্ত। তাঁদের অভিযোগ, সামান্য কাজের জন্য ধূপগুড়ি যাওয়া মানেই সারাদিনের ধকল, যাতায়াতের মোটা খরচ এবং কর্মদিবস নষ্ট। চা শ্রমিকদের ক্ষেত্রে একদিনের হাজিরা কামাই করা মানে সাংসারিক বাজেটে বড় ধাক্কা। অথচ হাতের কাছে ব্লক অফিস থাকলে এই দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।
​এলাকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়েও ক্ষোভ চরমে। বানারহাটে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও সেখানে না আছে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, না আছে আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম। সামান্য জটিলতা দেখা দিলেই রোগীকে রেফার করা হয় ধূপগুড়ি মহকুমা হাসপাতালে। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে এই যাতায়াত অনেক সময় প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়ায়।
প্রশাসনিক উদাসীনতার বিরুদ্ধে স্থানীয়দের ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে। বানারহাট আদর্শপল্লীর বাসিন্দা কালা সরকার ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, ​“ব্লকের বাসিন্দা হয়েও আমাদের ধূপগুড়ি দৌড়তে হয়। ব্লক অফিস নেই, কৃষি-ভূমি-স্বাস্থ্য কোনও অফিসই নেই। তাহলে ব্লক ঘোষণার মানেটা কী? এটা কি আমাদের সঙ্গে মশকরা?”
​বিন্নাগুড়ির বাসিন্দা পৌলোমী করের গলায় শোনা গেল হতাশা ও প্রতিবাদের সুর। তিনি বলেন, ​“চা-বাগান এলাকার মানুষ অন্তত ন্যায্য পরিষেবা পাবেন এই আশাতেই ব্লক ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছিলাম। কিন্তু পাঁচ বছর পেরিয়েও সবটাই কাগজে-কলমে রয়ে গেল। উন্নয়ন শুধুই নেতাদের বুলি।”
স্থানীয় মানুষের এই দীর্ঘদিনের বঞ্চনাকেই এবার আন্দোলনের রূপ দিতে চলেছে সিপিআই(এম)। বানারহাটের ১ নং গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য মুক্তি দাস স্পষ্ট জানিয়েছে, ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’র অন্যতম প্রধান দাবি হবে অবিলম্বে বানারহাটে পূর্ণাঙ্গ প্রশাসনিক পরিকাঠামো গড়ে তোলা।
সিপিআই(এম) জেলা নেতা দীপক কুন্ডু এ প্রসঙ্গে বলেন, “বানারহাটের মানুষকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক করে রাখা হয়েছে। ব্লক ঘোষণা করে পরিষেবা না দেওয়াটা প্রতারণা। কৃষি, ভূমি, স্বাস্থ্য ও পঞ্চায়েত দফতরের পৃথক অফিস এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসক সহ উন্নত স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দাবিতে আমাদের সংগ্রাম চলবে। মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’ এই বঞ্চনার জবাব চাইবে।”
প্রশাসনের এই দীর্ঘসূত্রিতার বিরুদ্ধে বানারহাটের মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ এখন গণ-আন্দোলনের চেহারা নিতে চলেছে, তা বলাই বাহুল্য।

Comments :0

Login to leave a comment