প্রতীম দে: দমদম
"গত পৌরসভা নির্বাচনে ভোট দিতে পারিনি। এবার পারব তো?’’
পানিহাটি পৌরসভার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারের মধ্যে সুজন চক্রবর্তীকে সোজা এ কথাটিই বললেন বিমল সরকার। আরও একটু এগিয়ে সিপিআই(এম) প্রার্থীকে বললেন, ‘‘আপনারা কিন্তু ব্যবস্থা করে দেবেন। ভোট যাতে দেওয়া যায়।’’
শুক্রবার দমদম লোকসভা কেন্দ্রের পানিহাটি অঞ্চলে প্রচার চালিয়েছে সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী। প্রচার চলাকালীন বহু মানুষ এগিয়ে এসে জানালেন এলাকার ব্যাপক জলকষ্টের কথা।
কেবল পানিহাটি নয়। দমদম লোকসভা কেন্দ্রের একাধিক এলাকায় প্রচারে এই অভিজ্ঞতার মুখে পড়ছেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। ভোট ১ জুন। কিন্তু লোকসভা এলাকায় মহল্লা মহল্লা এর মধ্যেই চষে ফেলেছেন। বাসিন্দারা বলছেন, আবার আসবেন। প্রার্থীও পৌঁছে যাচ্ছেন। প্রচার ঘিরে উৎসাহের পরিবেশ চোখ এড়ানোর নয়। সাড়া যে মিলছে তা-ও স্পষ্ট।
ঘোলা বাজারের এক ব্যবসায়ী প্রার্থীকে বললেন, ‘‘সকাল ৯টার আগেই জল চলে যাচ্ছে। আপনি জিতলে এই সমস্যা মেটাবেন, এই আবেদন রইল।’’
সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আপনারা সুযোগ দিলে নিশ্চয়ই করব।’’
সিপিআই(এম) প্রার্থী বললেন, ‘‘পাইপ বসেছে। কিন্তু জল আসছে না। সর্বত্র দুর্নীতি হচ্ছে। মানুষ এর বিরুদ্ধে রায় দেবেন।’’
পৌর পরিষেবা লোকসভা নির্বাচনে কতটা প্রভাব ফেলে?
এ নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু পানিহাটিতে দেখা যাচ্ছে পৌর পরিষেবার সমস্যা নিয়ে ক্ষোভ বেরিয়ে আসছে বারবার। বস্তুত পানিহাটি, কামারহাটি, বরাহনগর জুড়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানুষ ক্ষিপ্ত। তাঁদের কথায়, গত নির্বাচনে তাদের ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। এলাকা জুড়ে চলছে দুর্বৃত্তদের দাপট। মধ্যবিত্ত এলাকায় ক্ষোভ বোঝা যাচ্ছে।
পৌর পরিষেবাই নয়, বিস্তীর্ণ তল্লাটে তার সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে গণতন্ত্রের প্রশ্ন। তুমি যা-ই কর, ভোটে কিছু বদলাতে পারবে না- ভোট লুটের এমন শাসানির প্রতিক্রিয়া স্পষ্ট।
আর বিজেপি? যারা তৃণমূল করত তারাই এখন বিজেপি-তে। তার ওপর বিজেপি’র কর্মীদের মধ্যে প্রার্থী শীলভদ্র দত্তকে নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। অন্তত পানিহাটির এই এলাকায় বাইরের প্রচারে সেভাবে বিজেপি নেই। দেওয়ালে কয়েকটি ফ্লেকস লাগিয়েছে বিজেপি। তার বাইরে বিশেষ কোনও প্রচার চোখে পড়ল না।
সকালেই দেখা গিয়েছে পৌরসভার গাড়ি থেকে জল ভরার জন্য বাসিন্দাদের লম্বা লাইন দিতে। খোলা নর্দমা, পরিষ্কার হয় না। বলার, প্রতিবাদ করার উপায় নেই।
চক্রবর্তী স্পষ্ট বলছেন, ‘‘জনতার সঙ্গে থাকা, বেআইনি কাজ বন্ধ করা, পরিবেশ রক্ষা করা, বন্ধ কারখানা খোলা এবং নতুন করে কর্মসংস্থান তৈরি করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’’
জনতা কী বলছে?
আসার পথে টোটোচালক বললেন, ‘‘ভোট যদি মানুষ দিতে পারে ফলাফল অন্যরকম হবে। সুজন চক্রবর্তী জিততে পারেন।’’ কথায় কথায় ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রসঙ্গও এল। প্রান্তিক এই শ্রমজীবী বলছেন, ‘‘হাজার টাকা দিয়ে মুখ সবসময় বন্ধ রাখা যায় না।’’
সিপিআই(এম) কর্মী সমর্থকরা জানাচ্ছেন, ভোটের আগে উত্তেজনা তৈরি করার চেষ্টায় রয়েছে তৃণমূল। ভোটের আগে বাধা তৈরির চেষ্টা হবে। জনতা সঙ্গে রয়েছে। প্রতিরোধও হবে।
Comments :0