ভারতের ধসে পড়া অর্থনীতিকে বিশ্বের বৃহত্তম উন্নত অর্থনীতির মোড়ক দিয়েই বাজেটে হাজির করতে চলেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। লোকসভা ভোটের আগে বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট পেশ করতে চলেছেন সীতারামন। তাতে ভোটের প্রতিশ্রুতির কোনও খামতি থাকবে না বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে বাজেটে শেষ পাঁচ বছরে কর্মসংস্থান থেকে কৃষকের আয় বৃদ্ধি সহ জনজীবনের নানা প্রতিশ্রুতির হিসাব মেলে না, তা ফাঁকা প্রতিশ্রুতি থেকে যায়। এবারে আংশিক বাজেটে তার কোনও ব্যতিক্রম হবে না মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বছরে ২ কোটি চাকরি, মূল্যবৃদ্ধি রোধ, কৃষকের ফসলের ন্যায্য দাম, তাদের দ্বিগুণ আয় বৃদ্ধি—সবই মিলিয়ে গিয়েছে। দেশের বেহাল অর্থনীতিতে প্রতিদিন মানুষের আয় কমছে। বিভিন্ন সরকারি সমীক্ষায় আয় কমার প্রবণতা দেখা গেছে। এই সময়ে দারিদ্রের জরুরি প্রশ্ন সামলাতে মোদীর সংস্থা নীতি আয়োগ তার নিজস্ব মাপকাঠিতে জানিয়ে দিয়েছে দারিদ্র বাড়েনি কমেছে। যে হারে মোদী জমানায় দারিদ্র কমছে আগামী পাঁচ বছর মোদী ক্ষমতায় থাকলে তাহলে দেশে দরিদ্র বলে কেউ থাকবে না বলেই জানিয়ে দিয়েছে আয়োগ। তাতে ভরসা রেখে অর্থমন্ত্রী বিবর্ণ অর্থনীতি চকচকে মোড়কে সাজিয়ে মোদীর নতুন যুগের বাজেট হাজির করতে চলেছেন। রামমন্দিরের সমারোহে এই নতুন যুগের কথাই জানিয়েছেন মোদী।
সংসদে ভোটের মুখে জনমোহনী বাজেটের যে তৈরি স্ক্রিপ্ট হবে তা কারও অজানা নয়। এদিন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর ভাষণে দেশের অর্থনীতির উন্নতির যে চিত্র দাবি করা হয়েছে তাতে বোঝা গিয়েছে দেশের ভেঙে পড়া অর্থনীতি স্বীকার করতে চাইছে না সরকার। তাঁর দাবি, বিশ্বের পাঁচ উন্নত অর্থনীতির দেশের মধ্যে অন্যতম হলো ভারত। এদিকে তথ্যে প্রমাণিত, ভারতের মাথাপিছু মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি)-র হার নিয়ে বিশ্বে অনেক পিছিয়ে রয়েছে ভারত। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, চীনের যেখানে মাথাপিছু জিডিপি ১২ হাজার ৫৫৬ মার্কিন ডলার সেখানে বর্তমানে ভারতের মাথাপিছু জিডিপি পরিমাণ যেখানে ২ হাজার ২৫০ মার্কিন ডলার। ফলে পাঁচ উন্নত দেশের অর্থনীতির সঙ্গে ভারতের অর্থনীতি এক সারিতে আসে না। তা বহু মাইল পিছিয়ে আছে। রাষ্ট্রপতির ভাষণে বেকারি কমানোর কথা শোনা যায়নি কিন্তু গাড়ি বিক্রি বেড়ে চলার কথা শোনা গিয়েছে। তার ভাষণে দাবি ইউপিএ আমলে ১০ বছরে গাড়ি বিক্রি বছরে ১৩ কোটি ইউনিট থেকে বেড়ে মোদীর ১০ বছরে ২১ কোটি ইউনিট হয়েছে। তিনি জানাননি সম্প্রতি গাড়ি কারবারে মন্দা চলছে। বিক্রি চলতি ডিসেম্বর মাসেই কমেছে ৫৫ হাজার ইউনিট। রেকর্ড পরিমাণে চলতি দুই বছর ধরেই গাড়ি বিক্রি কমেছে। বলা হয়েছে, রপ্তানি বেড়ে মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্প সাড়া জাগিয়েছে। কিন্তু মন্ত্রক জানাচ্ছে, রপ্তানি কমেছে। ২০২২সালে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৬৫১ বিলিয়ন ডলার। তা ২০২৩ সালে কমে হয়েছে ১ হাজার ৬০৯ ডালার। রপ্তানি হ্রাস পয়েছে ২.৬ শতাংশ। দাবি করা হয়েছে, নতুন প্রজন্মের স্টার্ট আপ সংস্থা মোদী আমলে ৯৪ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ১ লক্ষ ৬০ হাজার। বলা হয়নি বেহাল অর্থনীতির জন্য স্টার্ট আপ সংস্থা শুধু ২০২৩ সালে বন্ধ হয়েছে ৩৪ হাজার ৮৪৮টি।
এদিকে মোদী সরকার কৃষকদের আয় বাড়াতে কৃষির উৎপাদন খরচ কমানোর দিকে নজর দিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে রাষ্ট্রপতির ভাষণে। কিন্তু বাস্তব হলো পেট্রোল, ডিজেল, সার, বিদ্যুৎ সব কিছুর দাম মোদীর জমানায় বিপুল হারে বেড়ে চলায় কৃষিতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এদিকে, কৃষকরা ন্যূনতম সহায়ক মুল্য নিশ্চিত করতে কৃষকদের দাবি মতো আইন না করায় ফসলের ন্যাকয্য দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা। ফলে ধারে ঋণে বিপর্যস্ত কৃষক আত্মহত্যার পথ নিচ্ছেন তাতেও কোনও ছাপ নেই কেন্দ্রের আর্থিক পর্যালোচনা রিপোর্টে। অর্থমন্ত্রীর বাজেটে তা নিয়ে আশ্বাস মিলবে না বলেই ধরে নিয়েছেন কৃষকরা। প্রসঙ্গত, মোদী সরকার সমস্ত রাজ্যকে বাজেটে আর্থিক ঘাটতি কমানোর নির্দেশ দিলেও মোদীর বাজেটে আর্থিক ঘাটতিতে চলেছে। মোদী সরকার ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার সময় কেন্দ্রীয় বাজেটে আর্থিক ঘাটতি ছিল জিডিপি’র ৪.৬ শতাংশ তা ২০২৩ সালে বেড়ে হয়েছে ৫.৯ শতাংশ।
গত বাজেটে যে শিল্পের বিকাশ দাবি করে প্রচুর কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী তাতে কোনও সাফল্য মেলেনি। উলটে কমেছে শিল্পের উৎপাদন বৃদ্ধি। গত ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ৮টি বুনিয়াদি শিল্প উৎপাদনে যেখানে বৃদ্ধির হার ছিল ৮.৩ শতাংশ তা ২০২৩ সালের ডিসেম্বর কমে হয়েছে ৩.৮ শতাংশ। শিল্পের উৎপাদনের এই ধসে পড়া অবস্থায় নতুন কর্মসংস্থান হয়নি, উলটে কাজ হারিয়েছেন বহু মানুষ। বাজেটে তবু মোদীর ঘোষিত রাম রাজত্বের নতুন যুগের সম্ভাবনা দেখাবেন মন্ত্রী সীতারামন।
Union Budget 2024
পেশ হবে বাজেট, ‘রামরাজত্বে ভোট রথই কি আজ ছুটবে?
×
Comments :0