কৃষকদের আয়বৃদ্ধি, তাদের জীবন-জীবিকার মানোন্নয়ন সহ কৃষকদের জন্য মোদী সরকারের হাজারো প্রকল্পের সাফল্যের ফিরিস্তি শোনা যায় প্রায় প্রতিদিন। প্রতিমাসে মন কি বাত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর তো কৃষক দরদ উথলে ওঠে। এখন তো ভোটের মুখে মোদীর গ্যারান্টিতে আকাশ বাতাস ম ম করছে। তেমনি কৃষক আন্দোলন শুরু হবার পর কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীর তেড়েফুঁড়ে রাস্তায় নেমেছেন কৃষকের মোদীর কাজের ফিরিস্তি দিতে। কিন্তু কৃষকদের জন্য মোদীর কাজের সাফল্যের সেই ফানুস ফাটিয়ে দিয়েছে মোদী সরকারেরই সমীক্ষা রিপোর্ট। সদ্য প্রকাশিত পারিবারিক ব্যয় সংক্রান্ত জাতীয় নমুনা সমীক্ষার রিপোর্ট স্পষ্ট করে দিয়েছে এদের কৃষকরা, কৃষিতে কর্মরত মজুররা ভালো নেই। তাদের আয় তলানিতে গিয়ে ঠেকে। কৃষিতে এবং কৃষকদের জীবনধারণের সঙ্কটই আন্দোলনের জমি উর্বর হচ্ছে। বাঁচার তাগিদে তারা জীবন করে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন।
পারিবারিক ব্যয়ের নিরিখে স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম গ্রাম ভারতে সামগ্রিকভাবে মাথাপিছু গড় ব্যয় থেকে কৃষক পরিবারের ব্যয় কমে গেছে। অতীতে দেখা গেছে কৃষি ক্ষেত্রে নিযুক্ত পরিবারের মাথাপিছু মাসিক ব্যয় সব সময় গ্রামীণ অকৃষি কাজে যুক্ত পরিবার থেকে বেশি হতো। ১৯৯৯-২০০০ সালের পারিবারিক ব্যয় সমীক্ষায় দেখা গেছে গ্রাম ভারতে সামগ্রিকভাবে মাথাপিছু পারিবারিক ব্যয় ছিল ৪৮৬ টাকা। আর শুধু কৃষক পরিবারের মাথাপিছু ব্যয় ছিল ৫২০ টাকা। ২০১১-১২ সালেও কৃষকদের ব্যয় অন্যদের থেকে বেশি ছিল। ২০২২-২৩ সালে দেখা যাচ্ছে কৃষকদের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৭০২ টাকা। সামগ্রিকভাবে ব্যয় হয়েছে ৩৭৭৩ টাকা। অর্থাৎ গ্রামীণ অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব ও ভূমিকা কমে গেছে। কৃষি ও কৃষির অগ্রগতিতে সরকারের নজর নেই। প্রধানমন্ত্রী কৃষকের আয় দ্বিগুণ করার গালভরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কয়েক বছর আগে। বলেছিলেন ২০২২ সালে স্বাধীনতার ৭৫ বছরে কৃষকের আয় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। গত লোকসভা ভোটের আগে কৃষকদের নগদ টাকা দেবার প্রকল্প চালু হয়। কিন্তু পেছনের দরজা দিয়ে হু হু করে বাড়ানো হলো সারের খরচ, বিদ্যুতের খরচ, বীজের খরচ, কীটনাশকের খরচ। ফলে চাষের খরচ বেড়ে চলেছে। অন্যদিকে মিলছে না ব্যাঙ্ক ঋণ। বিপর্যয়ে মিলছে না ক্ষতিপূরণ। আবার সরকার ঘোষিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য না পাবার নিশ্চয়তা থাকায় ফসলের দামও মিলছে না। চাষের খরচ বাড়ছে অথচ ফসল বেচে উদ্বৃত্ত থাকছে না। অর্থাৎ আয় বাড়ছে না। কেন্দ্রীয় সমীক্ষা রিপোর্টে সেই ছবি স্পষ্ট ধরা পড়েছে। এটাও পরিষ্কার হয়ে গেছে কৃষকের স্বার্থে মোদীরা এতদিন যা বলে আসছে তার সঙ্গে বাস্তবের কোনও মিল নেই। কৃষিতে অগ্রগতি স্তব্ধ। কৃষকের জীবন যন্ত্রণা বাড়ছে। ঋণের বোঝা বাড়তে বাড়তে ফেরতের সামর্থ্য হারাচ্ছে। কৃষকের পিঠ ঠেকে যাচ্ছে দেওয়ালে। তারা তো বিদ্রোহে নামবেনই।
Comments :0