IT Job Cut

তথ্য প্রযুক্তিতে বিপুল ছাঁটাই, মোদী বলছেন ‘বিকশিত ভারত’!

জাতীয়

শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সকাল ন’টা নাগাদ পাড়ার মোড়ে অফিসের গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে থাকত সেই যুবতী। গত কয়েকদিন তাঁকে আর বেরতে দেখা যাচ্ছে না। জানা গিয়েছে, সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে যে তথ্য প্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করতেন তিনি, সেই কাজ আর নেই। 

তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ছাঁটাই চলছে বিশ্বজুড়ে। পাল্লা দিয়ে ছাঁটাই চলছে ভারতে। গত বছর দেশে শুধুমাত্র তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ছাঁটাই হয়েছে ২ লক্ষ ৬২ হাজার ৫৯৫ জন। ১,১৮৭ টি তথ্য প্রযুক্তি সংস্থা ২০২৩ সালে কর্মী ছাঁটাই করেছে। চলতি বছর শুধু জানুয়ারি মাসে ৯১টি সংস্থা কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে হেঁটেছে। একমাসে মোট কর্মী ছাঁটাইয়ের সংখ্যা ২৪ হাজার ৫৬৪।

গুগলও জানিয়েছে তাদের কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত। তার আগেই বিশ্বজোড়া নাম মাইক্রোসফ্ট, টুইটার, আমাজন হাজার হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছে। 

উইপ্রো, ইনফোসিসের মতো দেশের ‘টেক জায়েন্ট’-রা কর্মী ছাঁটাই করছে। তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর পরিষেবা প্ল্যাটফর্মেও চলছে ছাঁটাই। 

কিন্তু কেন চলছে এই ছাঁটাই? ‘বিকশিত ভারত’-র চেহারা যদিও আরও সঙ্কটপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেবল তথ্য প্রযুক্তি না। সব ক্ষেত্রে সঙ্কট তীব্র। কেন্দ্রীয় বাজেটে তো বটেই, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রচারে এখন নতুন শব্দবন্ধ ‘বিকশিত ভারত’। 

বিশেষজ্ঞদের মত, সঙ্কটের মধ্যে অতি মুনাফার মাত্রা যাতে না কমে সে কারণেই চলছে ছাঁটাই। বিভিন্ন দেশেই সরকারি স্তরে উদাসীনতা রয়েছে। ফলে ছাঁটাই সহজ পথ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই সঙ্গে আলোচনায় রয়েছে চাহিদার সঙ্কটও। ভারতেও তাই। কয়েকজন বিলিওনেয়ারের সম্পদ লাফিয়ে বাড়ছে। বাকি বড় অংশের আয় কমছে বলেই সঙ্কট চাহিদার। তার জেরে পরিষেবা ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ছে। 

উল্লেখ্য কলকাতায় যে সব তথ্য প্রযুক্তির অফিস আমরা দেখি সেগুলি বেশিরভাগই কোনও না কোনও বড় সংস্থার ‘ব্যাক অফিস’। বহুজাতিক সংস্থার পাঠানো কাজ করে এরা। এদের নিজস্ব বাজার নেই। যার ফলে বাইরের মন্দার প্রভাব আমাদের এখানে এসে পড়ছে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তথ্য প্রযুক্তি কর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু আইন রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের সরকার ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র কথা মুখে বলেও তথ্য প্রযুক্তি কর্মীদের জন্য কোনও আইন তৈরি করেনি সরকার। যার ফলে যে কোন সময় ছাঁটাইয়ের মুখে পড়তে হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তি কর্মীদের। 

আলফাবেট গুগলের শতাধিক কর্মী ছাঁটবে এ বছরও। সিইও সুন্দর পিচাই অভ্যন্তরীণ বার্তায় এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন কর্মীদের। ভারতীয় স্টার্ট আপ সুইগি নতুন দফায় ছাঁটাই শুরু করেছে। অন্তত ৩৫০-৪০০ কর্মীর সরাসরি কাজ হারানোর শঙ্কা রয়েছে। সুইগি’র সঙ্গে যুক্ত ডেলিভারি বয়রা কেউ সরাসরি সংস্থার কর্মী নন। চাহিদার সঙ্কট যত বাড়ছে ততই তাঁদের কাজের শর্ত কঠিন হচ্ছে। 

ভারতীয় স্টার্ট আপ ফ্লিপকার্ট কিনে নিয়েছে বহুজাতিক ওয়ালমার্ট। সরকারি হিসেবের খাতায় বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। বাস্তবের জমিতে কাজ হারানো আড়ালে থাকছে। 

পেটিএম নিয়ে টালমাটাল চলছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। গত মাসে ১ হাজার কর্মীর কাজ কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment