ভ্রমণ — মুক্তধারা
কেদারকন্ঠ ট্রেক:এক মেঘবরফের আশিয়ানার গল্প
অভীক চ্যাটার্জী
গত সংখ্যার পর
আমাদের যাত্রা শুরু হয় নিউ দিল্লী কাশ্মিরীগেট বাসস্ট্যান্ড থেকে দেরাদুনের রাত ১২টার বাসে। আমরা দেরাদুন পৌঁছলাম ভোর সাড়ে তিনটে নাগাত। সেখানেই একটা ছোট্ট হোটেলে ঘণ্টা দুয়েকের জন্যে ঢুকে সকালের কাজ সেরে আমরা বেরিয়ে পড়লাম মুসৌরি বাস স্ট্যান্ডের উদ্দেশ্যে। সাড়ে ছয়টায় সেখান থেকে বাস ছাড়ল সাঁকরির উদ্দেশ্যে। এই সাঁকরি হলো কেদারকন্ঠ যাত্রার প্রথম গ্রাম। কত গ্রাম, কত ছোট ছোট জনপদ, কত ঝর্না পেছনে ফেলে আমাদের বাস এগিয়ে চলল সাঁকরির পথে। দূরত্ব নেহাত কম নয়। প্রায় ২০০ কিলোমিটার পথ আমরা পার করলাম ১১ ঘণ্টাতে। যখন আমরা সাঁকরী পৌঁছলাম, তখন বেলা পড়ে গেছে। হালকা বৃষ্টিও নেমেছে। আমি ও প্রতীক, দুজনেই তখন যথেষ্ট ক্লান্ত। একটা ছোট্ট দোকানে গরম স্যুপ খেয়ে আমাদের ট্রেক অর্গানাইজারের হোটেলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। এক কিমি দূরেই তার ছোট্ট হোটেল। আমাদের আজ রাতের থাকার ব্যবস্থা সেখানেই। এরই মধ্যে বৃষ্টির জোর বেড়েছে। আমরা আকাশের অবস্থা দেখে ভাবছি যে এবার পূর্ণিমার আলোতে কেদারকন্ঠ দেখার স্বপ্ন, স্বপ্নই না থেকে যায়। কিন্তু পরদিন সকালে যখন ঘুম থেকে উঠলাম, বৃষ্টি ধরে গেছে। আকাশে মেঘের লেশ মাত্র নেই। চোখের সামনে জ্বলজ্বল করছে "স্বর্গরোহিনী", হিমালয়ের এক অসম্ভব সুন্দর শৃঙ্গ!
হাঁটা শুরু হলো।এদিন আমাদের গন্তব্য "জুড়া কা তালাব"। সাঁকরি থেকে এর দূরত্ব মোটামুটি পাঁচ কিমি, কিন্তু খাড়া চড়াই এর জন্যে সময় লাগে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা। পথ বড়ই মনোরম।গোবিন্দ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং জাতীয় উদ্যানের উচুঁ মহীরূহ আর অনন্ত প্রশান্তি পথকে করে তোলে আরও আকর্ষণীয়। চারপাশে সুউচ্চ দেবদারু আর পাইন গাছের মাঝে পাথুরে পথ যেন নিজের মতো করে স্বপ্ন দেখছে। আমরা ১২টা নাগাত পৌঁছলাম জুড়া কা তালাবে। আমাদের তাবু সেদিন সেখানেই পড়বে। দুপুরের খাওয়া সেরে আমি আর প্রতীক গেলাম জুড়া কা তালাবের পাড়ে।সবুজে ঘেরা এই নির্মল হ্রদটি কেদারকণ্ঠের পাদদেশে অবস্থিত। জনশ্রুতি আছে যে এই হ্রদটি ভগবান শিব তাঁর চুলের একটি জটা খুলে দিয়ে জল ঝরিয়ে সৃষ্টি করেছিলেন। বিশ্বাস করা হয় যে জুদা-কা-তালাবের পবিত্র জলে স্নান করলে পাপ ধুয়ে যায়। বিশ্বাস যাই থাকুক, প্রাকৃতিক দৃশ্য বড় মনোমুগ্ধকর।
চলবে
Comments :0