Press Freedom under threat

সংবাদমাধ্যমের ওপর ফের আক্রমণ মোদী সরকারের

জাতীয়

অনলাইন পোর্টাল নিউজক্লিকের সাথে যুক্ত বেশ কয়েকজন সাংবাদিক এবং কর্মচারীর বাড়িতে আজ সকালে দিল্লি পুলিশ ‘চীন যোগসাজশের’ অভিযোগে হানা দেয়। পুলিশ ল্যাপটপ এবং মোবাইল ফোন সহ ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি বাজেয়াপ্ত করেছে এবং হার্ডডিস্কের ডেটা ডাম্প নিয়ে গেছে। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) দেওয়া ইনপুটগুলির উপর ভিত্তি করে দিল্লি পুলিশ হানা দেয় যা’তে বলা হয় সন্দেহভাজনরা বেআইনি কার্যকলাপের সাথে যুক্ত।

কিছু সাংবাদিককে লোধি রোড স্পেশাল সেল অফিসে আনা হয়েছে, তবে এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি, কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। নিউজক্লিকের ব্যাপারে দিল্লি পুলিশ CPI(M) এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির সরকারি বাসভবনেও তল্লাশি চালায়। অভিযান চালানো হয় সিপিআই(এম)-এর এক কর্মী শ্রী নারায়ণের ওপর। নারায়ণের ছেলে নিউজক্লিকে গ্রাফিক ডিজাইনারের কাজ করে।

সিপিআই(এম) এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি তার বাসভবনে অভিযানের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এবং বলেছেন, ‘‘পুলিশ আমার বাসভবনে এসেছিল কারণ আমার এক সঙ্গী যিনি সেখানে থাকেন, তার ছেলে নিউজক্লিকে কাজ করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আসে পুলিশ। তার ল্যাপটপ ও ফোন কেড়ে নেয় তারা। তারা কী তদন্ত করছে, কেউ জানে না। এটি যদি মিডিয়াকে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা হয় তবে দেশকে এর পিছনে কারণ জানতে হবে।’’ 

 

ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়া বলেছে যে নিউজক্লিকের সাথে যুক্ত সাংবাদিক ও লেখকদের বাড়িতে অভিযান চালানোর বিষয়ে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

স্বীকৃত জাতীয় দল সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সীতারাম ইয়েচুরির নামে বরাদ্দ করা বাড়িহলো- ৩৬ নং ক্যানিং লেন। সেখানেই  এসএফআই, কিষাণ সভা, ক্ষেত মজদুর, সহমতের কেন্দ্রীয় অফিস। এখানে পার্টির ও গণসংগঠনের বিভিন্ন কর্মীরাও থাকেন। কিছু পরিবারও থাকে পাশে। আজ হঠাৎই দিল্লি পুলিশ ইউএপিএ আইনে ভোরবেলা হানা দেয় এখানে। 
মোদি জমানায় গণতন্ত্রের সবগুলি স্তম্ভ আক্রান্ত। স্বভাবতই সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাও বিপন্ন। গত ৩ মে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম স্বাধীনতা দিবসে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স যে প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ১১ ধাপ পিছিয়ে গিয়েছে ভারত। ২০২২-এ ছিল ১৫০, ২০২৩-এ তা হয়েছে ১৬১। মোট ১৮০টি দেশকে নিয়ে এই তালিকা তৈরি হয়েছে। এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতের সাংবাদমাধ্যমের নিরাপত্তা সংকটে। ২০১৪ সালে বিজেপি সরকারে আসার পর মিডিয়াতে কর্পোরেট আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

অধিকাংশ বড়-বড় সংবাদপত্র এবং টিভি চ্যানেল মোদী সরকারের তাঁবেদারী যন্ত্রে পরিণত হয়েছে।  মোদীর গুণকীর্তনই তাদের কাজ। কিন্তু সংখ্যায় অল্প হলেও যে সমস্ত সংবাদমাধ্যম নিজেদের স্বাধীন সত্তাকে ধরে রাখে, ক্ষমতার মুখের ওপর সত্যি কথাটা বলে, সরকারের সমালোচনা করে, সেই সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকরা ‘দেশবিরোধী শক্তি’-র কাছ থেকে অর্থ সাহায্য নিয়ে ‘দেশপ্রেমিক’ সরকারকে উচ্ছেদের ‘বিশ্বব্যাপী চক্রান্তের অংশ’ হিসেবে কাজ করছেন- এই জিগির তুলে বেশ কিছু সাংবাদিক, টেলিভিশনের সঞ্চালক, ইউটিউব-এ যাঁরা জনশিক্ষামূলক ভিডিও জমা দেন, তাদের পুলিশ, গোয়েন্দা দিয়ে হেনস্তা খুব স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় পরিণত হয়েছে বর্তমানে। এমনকি সংঘ পরিবারের বিভিন্ন উগ্রবাদী গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে সরাসরি দাবী তোলা হয় কয়েকজনকে খুন করার, নিদেনপক্ষে ফাঁসি দেওয়ার। এই তালিকায় কে নেই? সাংবাদিক রানা আইয়ুব, ‘অল্ট নিউজ’ নামক সংবাদ সংস্থার কর্ণধার মহম্মদ জুবেইর, স্বাধীন সাংবাদিক ফায়ে ডিসুজা, বরখা দত্ত, ইউটিউব-এ সক্রিয় ধ্রব রাঠোর, রাভিশ শর্মা সহ আরও অনেকেই।

Comments :0

Login to leave a comment