আক্রান্ত নির্মাণ শ্রমিকরা
১) নির্মাণ শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের ১৪০০ কোটি টাকা রাজ্য সরকার নিজেদের কোষাগারে নিয়ে গেছে। এর ৬০০ কোটি টাকা অন্য খাতে খরচ করেছে সরকার।
২) নির্মাণ শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিল থেকে পাওয়া যেত সাইকেল, কাজের যন্ত্রপাতি, চশমা, সন্তানদের শিক্ষার অনুদান, বাড়ি তৈরির অনুদান/ঋণ, মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, সন্তানদের বিয়ের অনুদান - সবই এখন বন্ধ। অনেক শ্রমিক চিকিৎসার সুবিধা পান না। পেনশন হয়েছে অনিশ্চিত।
ন্যূনতম মজুরি নেই
১) ন্যূনতম মজুরি ৯২টি শিল্পে বর্তমান মূল্যসূচক অনুসারে হওয়ার কথা ২৬ হাজার টাকা। রাজ্য ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি করেনি।
২) রাজ্যে ন্যূনতম মজুরি অদক্ষ শ্রমিকদের মাসে ৮,৯৩০টাকা। কেরালায় ১১,৮০০টাকা।
৩) পুরুষ খেতমজুরদের দৈনিক মজুরিতেও পশ্চিমবঙ্গ আছে ১৩ নম্বরে। পশ্চিমবঙ্গের পিছনে আছে বিহার, গুজরাট, মধ্য প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ওডিশা, উত্তর প্রদেশ। শীর্ষে কেরালা। সেখানে খেতমজুররা দৈনিক ৭২৬ টাকা ৮০ পয়সা দৈনিক মজুরি পান।
(সূত্রঃ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া)
দমন সরকারি কর্মচারীদের
১) সরকারি কর্মচারীদের ধর্মঘট ঠেকাতে ‘ডাইস নন’চালু মমতা ব্যানার্জি’র। যদিও রাজ্যের বেসরকারি কারখানাগুলিতে মালিকদের লক আউট আটকায়নি তৃণমূল সরকার।
২) সরকারি কর্মচারী এবং সরকার অধিগৃহীত সংস্থার কর্মচারীদের প্রাপ্য ৩৬% মহার্ঘ ভাতা বকেয়া।
৩) মমতা ব্যানার্জি জানিয়েছেন রাজ্যে সরকারি দপ্তরে শূন্য পদ ৫ লক্ষ। গত ১২ বছরে যে ক’জনের নিয়োগ হয়েছে সবাই অস্থায়ী। তাঁদের কাজের ঘণ্টার কোনও সীমা নেই, ন্যূনতম মজুরি নেই।
৪) ৪৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা মিশিয়ে দেওয়ায় অনেক অস্থায়ী কর্মী কাজ হারিয়েছেন। অনেক পদ লুপ্ত হয়েছে।
অঙ্গনওয়াড়িতে অত্যাচার
১) অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের স্মার্ট ফোনের জন্য ২৫০ কোটি টাকা রাজ্য সরকারের তহবিলে আছে। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই স্মার্ট ফোন দেয়নি।
২) ৫৭৬টি আইসিডিএস প্রকল্প আছে। বেশিরভাগ প্রকল্পে জল, বিদ্যুৎ, শৌচাগার নেই।
৩) বিনা পারিশ্রমিকে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের নানা কাজ করানো হয়।
সমকাজে সমবেতন
১) সমকাজে সমবেতন দেওয়ার জন্য ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে কাজ করেনি রাজ্য সরকার।
বিড়ি শিল্পে তৃণমূলই মালিক
বিড়ি শ্রমিকদের ৯৩% মহিলা। তাঁদের উপর নিদারুণ শোষণ চলে। অনেক জায়গায় হাজার বিড়ি বাঁধতে ১১০-১২০ টাকা মজুরি দেয় মালিকরা। সরকার কিছু বলে না। কারণ, বিড়ি কোম্পানির মালিকরা তৃণমূলের নেতা, সাংসদ, বিধায়ক।
বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে বিড়ি শ্রমিকরা বাড়ি বানাতে দুই কিস্তিতে ৪০ হাজার টাকা এবং ১০ হাজার টাকা সরকারি সহায়তা পেতেন। কেন্দ্র থেকে ১০ হাজার টাকা অনুদান পাওয়া যেত। বিদ্যুতের জন্য রাজ্য সরকারের ২৫০০ টাকা অনুদান এবং পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য ১০ হাজার টাকা পেতেন। সব বন্ধ এখন।
দুর্দশায় পরিযায়ীরা
রাজ্য থেকে প্রায় ৪০ লক্ষের ওপর যুবক ভিনরাজ্যে কাজে যায়, ঘোষণা ছিল মমতা ব্যানার্জির। এঁর মধ্যে লকডাউনে কাজ হারানো মাত্র ১৮ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক সরকারি সহায়তা পেয়েছে — বিধানসভাতেই তিনি নিজেই জানিয়েছে। ৫০ হাজার টাকা সাহায্যপ্রাপ্ত ১৮ হাজার জনের আদৌ কতজন পরিযায়ী শ্রমিক সেই প্রশ্ন বিধানসভাতেই তুলেছিলেন বামফ্রন্টের বিধায়করা, জবাব মেলেনি।
বন্ধ কারখানা
২০২১ সরকারের পরিবেশ দপ্তরের রিপোর্ট, প্রথম খণ্ডে আছে রাজ্যের শিল্পের অবস্থা। ২০১৬ সালের রিপোর্ট —পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ অনুমোদিত শিল্পের সংখ্যা ছিল ৬০,৯৮০টি। ২০২১-র রিপোর্ট, এই শিল্পের সংখ্যা ৩৯,৩৫৯টি। অর্থাৎ শুধু পাঁচ বছরে রাজ্যে বন্ধ হয়েছে ২১, ৫২১টি শিল্প।
চা বাগানের অবস্থা
রাজ্যে এখন ১৮টি চা বাগান বন্ধ, আরও অনেকগুলি ধুঁকছে। চা শ্রমিকদের মজুরি, বোনাস নিয়ে মালিকরা টালবাহানা করে। তাঁদের অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও কমেছে গত ১৩ বছরে। সরকার নীরব — তারা চা বাগানের মালিকদের পক্ষে।
চটকলে অত্যাচার
রাজ্যে অনেকগুলি চটকলও বন্ধ। চটকলে স্থায়ী শ্রমিক কমছে, বড় অংশই ঠিকা বা অস্থায়ী। তাঁদের প্রাপ্য দেওয়া হয় না। লকডাউনের সময়ের মজুরি শ্রমিকরা পাননি। চটকলে তৃণমূলের লোকজনই ঠিকাদার হয়ে আছে। মালিকের দালাল ঠিকাদাররা, শ্রমিকদের কম মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য করে। মিলগুলোতে ছয় থেকে সাত রকমের মজুরি আছে। একই মেশিনে কাজ করে শ্রমিকদের বিভিন্ন ধরনের মজুরি দিচ্ছে মিল মালিক। এর ওপর এখন এজেন্সি শ্রমিক দিয়ে মিল চালাচ্ছে মালিক। এই এজেন্সির মালিকরা তৃণমূলেরই লোকজন। কর্মরত অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে যে এজেন্সি শ্রমিকদের তাঁদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিলেও তা মেলে না।
বেহাল দুর্গাপুর
দুর্গাপুর রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল। সেখানেই বন্ধ আছে ৮২টি সংস্থা। তার মধ্যে ২৩টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। সেগুলির মধ্যে এমএএমসি, বিওজিএল, জেশপ, হিন্দুস্থান কেবলসের মতো সংস্থা আছে। এছাড়া ওই এলাকায় ২০টি বেসরকারি সংস্থা এবং ৩৫টি সেকেন্ডারি ইস্পাত শিল্প সংস্থা বন্ধ আছে। রাজ্য সরকারের কারখানাগুলি খোলার কোনও উদ্যোগ নেই। অসংখ্য শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন।
কী হাল হলদিয়ার?
হলদিয়াতে দীর্ঘদিন শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির চুক্তি হয়নি। চলছে শ্রমিক ছাঁটাই। মালিকদের সঙ্গে বোঝাপড়া করে তৃণমূল শ্রমিকদের কাজ দেয়। তার জন্য শ্রমিকদের মজুরি থেকে কাটমানি নেয়। মজুরির কাটমানি তৃণমূলকে না দিলে কাজ মেলে না।
জুলুম ফলতায়
ফলতা শিল্প এলাকা সহ রাজ্যের আরও কিছু জায়গায় কারখানাগুলির শ্রমিকরা তৃণমূলের জুলুমের শিকার। মালিকদের থেকে টাকা নেয় তৃণমূল। শ্রমিকদের দাবি দমন করতে তৃণমূলই মালিকদের মজুত বাহিনী। বামফ্রন্টের সময় ১৪ হাজার শ্রমিক ফলতায় কাজ করতেন, এখন তা নেমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার।
গৃহ সহায়িকা
সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী ৯০% গৃহসহায়িকা মহিলা। অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই করুণ। শ্রমিক হিসাবে শোষণের সাথে সাথে তীব্র সামাজিক শোষণের ও শিকার এরা। গৃহসহায়িকাদের দাবি — ভারত সরকারকে অবিলম্বে আইএলও ১৮৯ নং (গৃহসহায়িকা সংক্রান্ত) কনভেনশন কার্যকর করতে হবে, রাজ্য সরকারকে অবিলম্বে গৃহসহায়িকাদের ন্যূনতম বেতন ৭৫ টাকা ঘণ্টা ঘোষণা করতে হবে, ওয়েলফেয়ার বোর্ড তৈরি করতে হবে, সবাইকে পরিচয়পত্র দিতে হবে এবং সামাজিক সুরক্ষা আইন ২০০৮-এর অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ৫৫ বছর বয়স হয়ে গেলে ন্যূনতম ৩০০০ টাকা পেনশন চালু করতে হবে। এর কিছুই মানতে রাজি নয় কেন্দ্র, রাজ্যের সরকার।
ক্যাব চালক, গিগ শ্রমিকদের বেহাল দশা
রাজ্যে ক্যাব চালক আছেন অনেকে। আছেন এমন অনেকে যাঁরা বাড়ি বাড়ি খাবার সহ নানা উপকরণ পৌঁছে দেন। ক্যাবচালকরা পুলিশি জুলুমের শিকার হন। আবার মালিকের শোষণেরও শিকার তাঁরা। অন্যদিকে গিগ শ্রমিকদের কাজের কোনও নিরাপত্তা নেই । সামান্য মজুরিতে তাঁদের কাজ করতে হয়। রাজ্য সরকার তাঁদের জন্য কোনও উদ্যোগ নেয়নি।
Comments :0