অনিন্দ্য হাজরা
‘‘নতুন শকুনির কাছে মমতা ব্যানার্জি রাজ্যের ভবিষ্যৎ, শিল্প, সম্প্রীতিকে বাজি ধরেছেন। বাংলাকে বাঁচাতে হবে। দেশকে বাঁচাতে হবে। জান বাজি রেখে দেশ এবং বাংলাকে বাঁচাবো আমরা। রক্ষা করব দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো, সংবিধান।’’
রবিবার ব্রিগেডে ডিওয়াইএফআই’র সমাবেশ থেকে একথা বলেছেন প্রাক্তন যুবনেতা এবং সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। মানুষের রুটি-রুজি কেড়ে বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াই গড়ে তোলা আহ্বান জানিয়েছেন সংগঠনের আরেক প্রাক্তন নেতা এবং সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আভাস রায়চৌধুরী।
সেলিম বলেন, ‘‘আমরা চোরকে চোর বলতে, সাম্প্রদায়িক শক্তিকে সাম্প্রদায়িক শক্তি বলতে আমরা ভয় পাইনা। এই ময়দানের প্রতিটা মানুষ ভয়কে জয়কে করে এখানে এসেছেন। ভয়কে জয় করতে ধক লাগে। সেই ধকের প্রমাণ এই সমাবেশ, ৫০ দিনের পদযাত্রা।’’ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাকে বাঁচাতে কোনও ৩৫৬ ধারা লাগবে না। বাংলার যৌবনই পারবে বাংলাকে বাঁচাতে।’’
রবিবার ব্রিগেডে ডিওয়াইএফআই’র সমাবেশে এ কথা বলেছেন প্রাক্তন যুবনেতা এবং সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, মিলিটারির ‘না’ কে ‘হ্যাঁ’ করে এই সমাবেশ হয়েছে।
সেলিম বলেন, ‘‘রাজ্যের মানুষ চুরি, মিথ্যাচার দেখে ক্ষুব্ধ। ১০০ দিনের কাজের টাকা, রেশনের খাদ্য যারা চুরি করছে, মানুষ তাদের ঘৃণা করছে। মানুষ আমাদের ফের ভরসা করতে শুরু করেছেন।’’ তিনি বলেন, ‘‘কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিন্হা এজলাসে ইডি’কে বলেছেন অভিষেক ব্যানার্জির সংস্থা লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের সম্পত্তি বেড়েছে ২০১৪’র পর। মানে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে।’’
সেলিম বলেন, ‘‘লড়াই জারি রাখতে হবে। ইনসাফ এখানে শেষ নয়। নতুন শপথ নিয়ে গোটা রাজ্যে সেই বারতা ছড়িয়ে দিতে হবে। যৌবনের দূতরা রাজ্যের ভূতকে রাজ্য ছাড়া করবে।’’
কেমন বাংলা, কেমন দেশ- ব্যাখ্যা করেন সেলিম। তিনি বলেন, ‘‘স্কুল, কলেজ, রাস্তাঘাট, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। তারজন্য লাল ঝান্ডাকে মজবুত করতে হবে। তৃণমূল বিজেপি বাংলার স্মৃতি থেকে লালকে মুছতে চেয়েছিল। পারেনি। তৃণমূল বিজেপি ১০০ দিনের কাজের টাকা নিয়ে নাটক করছে। আমরা বলছি, কত পেলে, আর কত খেলে, তার হিসেব দিতে হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি ১০০ দিনের কাজ বাতিল করতে চেয়েছিল। আমরা বলছি, ৩৬৫ দিন কাজের গ্যারেন্টি দিতে হবে। যুবরা কাজ করতে চায়। তাদের কাজ দিতে হবে। যুবরা কাজ করলে তৃণমূল বিজেপির হয়ে ভোট করানোর লোক কমে যাবে। তাই ওরা চায় না রাজ্যের যুব সমাজ বেকার থাকুক।’’
সেলিম বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতে মানুষ বলল চোর ধর। পুলিশ ধরল না। তারপর বললাম, গ্রাম জাগাও চোর তাড়াও। গ্রাম জাগল। পঞ্চায়েতে প্রতিরোধ হল। মিথ্যা মামলা, জেল জরিমানা করে আমাদের আটকে রাখা যায় না। মইদুল মিদ্দ্যা, আনিস খান, স্বপন কোলে, সুদীপ্ত গুপ্তদের তৃণমূল খুন করেছে। মমতা ভাবেন একটা চাকরি দিলেই সব সেট হয়ে যাবে। হবে না। সব অন্যায়ের বিচার হবে।’’
সেলিমের আহ্বান, ‘‘সমস্ত মানুষের কাছে যেতে হবে। সরকার বাঁচাতে আইএএস, আইপিএস, ডাব্লিউবিসিএস-দের পুষছে। তাদের দিয়ে ব্যালট বাক্স বদল করিয়ে পঞ্চায়েতে বামপন্থীদের হারয়েছে। সেই অফিসারদের বলছি, দিদি কিন্তু আসল সময়ে আপনাদেরও ছুড়ে ফেলে দেবে। মানুষের ক্ষোভ আপনাদের নিজে সামলাতে হবে। সাবধান।’’
সেলিম বলেন, ‘‘ওরা বলেছিল, লাল হটাও। লাল হটলেও দেশ বাচেনি। দেশকে বাচাতে এবারে লালকে মজবুত করতে হবে। লালঝান্ডাকে মজবুত করুন। কৃষক ফসলের দাম পাবে। তেভাগায় লড়েছি। আবার লড়ব।কাস্তে মজবুত হলে চালকল মালিকরা চাষিদের ঠকাতে পারবে না। কাস্তের পাশে হাতুড়িকে প্রয়োজন। হাতুড়ি দরকার রাজ্যকে মেরামত করতে। দুই মিলিয়ে নতুন রাজ্য তৈরি করব আমরা। উত্তর, দক্ষিণবঙ্গ, রাজবংশী, হিন্দু মুসলিম করা হচ্ছে মানুষের ঐক্যকে দুর্বল করতে। আমরা বাংলাকে মণিপুর হতে দেব না।’’
তিনি বলেন, ‘‘উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, হরিয়ানায় বুলডোজারের হামলা রোখেন সিপিআই(এম) নেত্রী বৃন্দা কারাত। হিজাব পরে মমতা ব্যানার্জি হামলা রুখতে যান না। বিভেদের সাজানো স্ক্রিপ্টের নাটক বন্ধ করতে হবে। বুথে বুথে গিয়ে মানুষের আসল ইস্যু তুলে ধরতে হবে।’’
Comments :0