Carnival

মমতাকে ‘দশভুজা’ বানিয়ে পাঁচ ঘণ্টার মোচ্ছব

রাজ্য

কলকাতা, ৮ অক্টোবর— দশভুজার মুখ ঢাকল মমতার ছবিতে! 
সরকার পোষিত কার্নিভালে নতুন মাত্রা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রেড রোড ধরে এগিয়ে গেছে ট্যাবলো। আর সেই সুসজ্জিত ট্যাবলোর মধ্য থেকেই স্পষ্ট হয়েছে দশভুজার প্রতিকৃতি। কিন্তু উধাও মূর্তি। কার্নিভালে তার জায়গা নিয়েছে মমতা ব্যানার্জির মুখ! একাধিক ট্যাবলোতে এদিন দেখা গেছে দশ হাতের মমতা ব্যানার্জিকে! 
রাজবাড়ির আদলে জাঁকজমকের প্যাভিলিয়ন যখন পার করেছে মমতার ছবি সাঁটা ১০হাতের প্রতিকৃতি। দু’হাত তুলে নমস্কার করতেও দেখা গেছে শাসক দলের নেতামন্ত্রীদের। কিন্তু নিন্দুকেরা বলছেন অন্যকথা। কার্নিভাল শেষে তো এদিনই প্রতিমার বিসর্জন হওয়ার কথা। তাহলে মমতা ব্যানার্জির মুখের ছবি দিয়ে দশভুজার যে প্রতিকৃতি নিয়ে এদিন রেড রোড ধরে পথ হাঁটলো তৃণমূল নেতামন্ত্রীদের দুর্গাপুজো, তারাও কি মুখ্যমন্ত্রীর বিসর্জনই চাইছেন?  
মমতা ব্যানার্জির ঢাউস কাটআউট দিয়ে সততার প্রতীক লেখা আর দেখা যায় না। সততার প্রতীকের দফারফা হওয়ার পর এখন তৃণমূল নেত্রীকে দশভুজার অবতারে রাজ্যবাসীর কাছে তুলে ধরার নয়া উদ্যোগ শুরু হলো সরকারি দেদার টাকা খরচের কার্নিভালে। এদিন কার্নিভালে ডাক পাওয়া এমন একটাও পুজো কমিটি বাদ ছিল না, যারা মমতা ব্যানার্জির ছবি নিয়ে আসেননি। সততার প্রতীক থেকে ‘দেবীর’ আসনে মমতা ব্যানার্জিকে বসানোর এক সচেতন নির্মাণ শুরু হলো কার্নিভ্যালের মঞ্চ থেকে। 
এদিন কার্নিভালের জন্য ধরনায় বসতে দেওয়া হয়নি চাকরিপ্রার্থীদের। রবিবার তাঁরা ফের বসছেন গান্ধী মূর্তির সামনে। মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশে। রবিবার তাঁদের চাকরির দাবিতে ধরনার ৫৭৪দিন পড়বে। এদিন বসতে না দেওয়ার জন্য তাঁরা দিনটিকে হিসাবের মধ্যেই রাখছেন। চাকরিপ্রার্থীদের দাবি, ‘‘ আমরা তো স্বেচ্ছায় চলে আসিনি। আমাদের পুলিশ ও প্রশাসন বাধ্য করেছে এদিন না বসার জন্য। আমাদের বহু ছেলেমেয়ে উত্তরবঙ্গ সহ দূরের জেলা থেকে এসে কলকাতার আশেপাশে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকে। তারা তো কেউই বাড়ি ফিরতে পারেনি। আমরা তাই আজকের দিনটিকেও আমাদের প্রতিবাদ ধরনার মধ্যেই রেখেছি।’’  
মফস্বলে একসঙ্গে কোনোরকমে মাথা গুঁজে পড়ে থাকা চাকরিপ্রার্থীরাও টিভি-তে দেখেছেন রেড রোডে সরকারের জমকালো উৎসব। মুখ্যমন্ত্রীকে কাঁধে ঢাক বাজাতে দেখেছেন। কাঁসর নিয়ে বাজাতে দেখেছেন ৫৭৪দিন চাকরির জন্য ধরনায় আসা চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁদের প্রতিক্রিয়া,‘‘ দেশ বিদেশ থেকে লোকদের এনে জাঁকজমক উৎসব দেখাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর তাঁর নিজের রাজ্যের ছেলেমেয়েরা চাকরির জন্য কলকাতায় ৫৭৪দিন ধরে ধরনায় পড়ে আছে। কারণ, সরকারের নেতামন্ত্রীরা তাদের চাকরি বিক্রি করে দিয়েছে। এর থেকে লজ্জার আর কী হতে পারে।’’ 
মুখ্যমন্ত্রীকে দেখে, তাঁর সরকারের নেতা মন্ত্রীদের সীমাহীন দুর্নীতি চাক্ষুষ করে রাজ্যবাসীর ঘৃণা যাতে না বাড়ে তাই উৎসব দিয়ে ভুলিয়ে রাখা। ইন্ডোর স্টেডিয়ামে যেদিন দুর্গাপুজোর ক্লাবকে ৬০হাজার টাকা করে অনুদানের ঘোষণা করে মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন, ‘ওদিকে তাকানোর দরকার নেই।’  দলের নেতাদের বাড়ি থেকে কোটি, কোটি টাকা উদ্ধার থেকে গ্রামে গত ডিসেম্বর মাস থেকে ১০০দিনের মতো কাজ বন্ধ থাকার পরও এদিন রেড রোডে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে উৎসবে মাতলেন খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তাতেও এড়ানো যায়নি রাজ্যের সঙ্কটকে। ধরনা মঞ্চের চারপাশ কাপড় দিয়ে ঘিরে যেমন এড়ানো যায়নি চাকরিপ্রার্থীদের ক্ষোভ। তেমনই মুখ্যমন্ত্রীর ফেসবুক লাইভেও উঠে এসেছে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের চাকরি পরীক্ষায় বসা চাকরিপ্রার্থীদের চাকরি প্রসঙ্গ। ‘‘ আমাদের মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ দিন।’’ লেখা ভেসে এসেছে মমতা ব্যানার্জির ফেসবুক লাইভের কমেন্টে। মুখ্যমন্ত্রী তখন অবশ্য তাঁর মেয়রের পুজোর গানের তালে হাত কাশফুল ধরে দোলাচ্ছিলেন।  
নাচলেন। গানের তালে হাত তালি দিলেন। আর গোটা রেড রোডজুড়ে মমতা ব্যানার্জির মঞ্চের কাছে এগিয়ে আসা পুজো কমিটির তরফে কেউ লিখে আনলেন, উই লাভ দিদি। কারোর বিপুলাকার সুসজ্জিত ট্রেলারের দুর্গা প্রতিমার থেকেও উঁচু করে আনলেন মমতা ব্যানার্জির বিশালাকার কাট আউটকে। রেড রোডে গান গাইলেন ক্লাবের শিল্পীরা। সেটাও লেখা মমতা ব্যানার্জির কথা ও সুরে।  
প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে আলোর রোশনাইয়ের সঙ্গে জাঁকজমকের অনুষ্ঠানে মমতা ব্যানার্জির সঙ্গী ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি থেকে কলকাতার পুলিশ কমিশনার। এদিনই দশমীর রাত থেকে নিখোঁজ এক কিশোরীর মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে হুগলীর জাঙ্গীপাড়ায়। অক্টোবর মাস পার হওয়ার পরেই রাজ্যের মুখ্যসচিবের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারীদের প্রাপ্য ডিএ নিয়ে আদালতের রায় না মানার জন্য অবমাননার রুল জারি নিয়ে শুনানি হতে চলেছে। আর সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা টানা পাঁচ ঘণ্টা ব্যস্ত থাকলেন গান, নাচের অনুষ্ঠানে।

Comments :0

Login to leave a comment