Mamata Banerjee on DA

ছুটি দিচ্ছি, তাই ডিএ দেব না বিচিত্র যুক্তি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী

রাজ্য

ডিএ দেওয়া তো পরের কথা, বিধানসভায় দাঁড়িয়ে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদেরই আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সোমবার বলেছেন, ‘অনেক বেশি ছুটি দিচ্ছি। আর কত চাই? টাকা আকাশ থেকে পড়বে? এর বেশি দিতে পারব না।’ 
মহার্ঘ ভাতার দাবিতে রাজ্য সরকারি কর্মচারী শিক্ষক সহ সবাই একজোট হয়ে আন্দোলন করছেন, কর্মবিরতি পালনের পরে আগামী শুক্রবার ধর্মঘটেরও ডাক দিয়েছেন। এর আগে আদালতেও তাঁদের দাবির যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু সব যুক্তি উড়িয়ে দিয়ে মমতা ব্যানার্জি সোমবার বিধানসভায় আন্দোলনকারীদের নন্দলাল বলে কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘৬ শতাংশ ডিএ দিয়েছি। আর কী কী পেলে এই নন্দলালরা সন্তুষ্ট হবে? এর বেশি দিতে পারব না।’  
এর আগে রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা মহার্ঘ ভাতার দাবি করায় তাঁদের ‘ঘেউ ঘেউ’ করতে বারণ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কয়েকদিন আগেই তাঁর মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম মহার্ঘ ভাতার দাবি করার জন্য রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ‘না পোষালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে যোগ দিন।’ এদিন ফিরহাদ হাকিমের শাসানিই উঠে এল বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর কন্ঠে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘যতটা পেরেছি করেছি। কত দিলে সন্তুষ্ট হবেন, বলতে পারেন? এর থেকে বেশি দেওয়া সম্ভব নয়। আমাকে পছন্দ না হলে আমার মুণ্ডুটা কেটে নিন।’ 
আন্দোলনকারীদের কাছে মমতা ব্যানার্জির এই বার্তা পৌঁছলে তাঁরা জানিয়েছেন, ‘ওঁর মুণ্ডু দিয়ে আমরা কী করব! আমরা তো প্রাপ্য ডিএ চাইছি। মুণ্ডু চাই না, উনি নিজের মুখ দিয়ে ২০১০ সালে ডিএ নিয়ে যা বলেছিলেন সেটাই কাজে করে দেখান।’ বামফ্রন্ট সভাপতি বিমান বসুকে সাংবাদিকরা এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, এত কথা না বলে রাজ্য সরকার বেহিসাবি খরচ, সরকারি টাকায় দলীয় প্রচার, এসব বন্ধ করুক। সরকারি টাকার অপচয় বন্ধ হলে কর্মচারীদের প্রাপ্য দেওয়া যায়, কর্মচারীদেরও রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হয় না। আমরা রাজ্য সরকারি কর্মচারী শিক্ষকরা যৌথভাবে বৃহস্পতিবার যে ধর্মঘট ডেকেছেন তাকে পূর্ণ সমর্থন করি।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী যে মহার্ঘ ভাতাকে কর্মচারীদের প্রাপ্য বলে মনে করেন না তা বুঝিয়ে দিয়েছেন একের পর এক অপ্রাসঙ্গিক তুলনা টেনে। যেমন, নিজের সরকারেরই বিলোনো ছুটির উল্লেখ করে বিধানসভায় এদিন তিনি বলেছেন, ‘অন্য রাজ্যের তুলনায় অনেক বেশি ছুটি দিই আমরা। এখানে বছরে ৪০ দিন ছুটি দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় সরকার এখন ২৫ ডিসেম্বরে ছুটি দেয় না, উলটে পুজোতেও মাত্র একদিন ছুটি দেয়। আমরা দুর্গাপুজোয় দশদিন ছুটি দিই।’ আবার পেনশনের দায়ভারের প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, ‘পেনশন না দিলে আমাদের ২০ হাজার কোটি টাকা বেঁচে যায়। অন্য রাজ্যে পেনশন দেয় না। আমরা কি পেনশন বন্ধ করে দেব?’
এই তথ্যটি একেবারেই অসত্য। রাজ্য কর্মীদের অনেকেরই মত, পেনশনের বদলে ডিএ-র তত্ত্ব অত্যন্ত বিপজ্জনকও। 
এরপরে আরও অসত্য তথ্য দিয়ে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর মুখে সেই পুরানো দাবি উচ্চারিত হয়েছে, ‘সিপিএম আমলে ৩৪ বছরে ডিএ দেয়নি। ৯৯ শতাংশ ও ৬ শতাংশ মিলিয়ে আমরা ১০৫ শতাংশ ডিএ দিয়েছি।’ 
এদিন বিধানসভায় রাজ্য মন্ত্রীসভার বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু বিস্ময়করভাবে তারপরে বিধানসভাতেই রাজ্যের ৫ মন্ত্রীকে নিয়ে তিনি বৈঠক করেছেন এবং সাগরদিঘিতে তৃণমূলের পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধান করতে তাঁদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন বলে জানা গেছে। এটা সরকারি তদন্ত নাকি দলীয় তদন্ত তা সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। কিন্তু জানা গেছে, জাকির হোসেন, সিদ্দিকুল্লা চৌধুরি, গোলাম রব্বানি, সাবিনা ইয়াসমিন এবং তাজমুল হোসেনকে নিয়ে গঠিত এই কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী সংখ্যালঘুদের ‘বিস্তর সুবিধা’ দেওয়া সত্ত্বেও তাদের ভোট তৃণমূলের বিরুদ্ধে বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থীর দিকে কেন গেছে তা এই মন্ত্রীদের কাছে জানতে চান। কিন্তু মন্ত্রীরা কেউ মমতা ব্যানার্জিকে মুখের ওপরে সোজাসুজি দুষ্কৃতী-দুর্নীতি রাজত্ব ও গ্রামবাসীদের জীবনজীবিকার দুর্দশার কথা উল্লেখই করতে পারেননি। মুসলিমদের মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে ‘ভোটব্যাঙ্ক’ হিসাবে দেখছেন সেটাই এই কমিটির সদস্যদের বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে। সাগরদিঘিতে হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে মানুষ তৃণমূল এবং বিজেপি উভয়কেই প্রত্যাখ্যান করেছেন তা দুই দলের ভোট হ্রাস থেকেই স্পষ্ট। নাগরিক হিসাবে অধিকারের দাবিতে তাঁরা সোচ্চার হয়েছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী এখনও পুরানো কৌশলে সেই সিদ্দিকুল্লা চৌধুরিদের সামনে এনে অমর্যাদাকর ভঙ্গিতে সংখ্যালঘুদের ‘ম্যানেজ’ করতে নেমেছেন। একদিকে আরএসএস’এর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমে একই পথে সরকারি খরচে পুজো আরতির ঢল নামিয়েছেন, অন্যদিকে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় পরিচয়ে সুড়সুড়ি দিয়ে হালে ফের পানি পাওয়ার চেষ্টা করছেন মমতা ব্যানার্জি।

Comments :0

Login to leave a comment