অবশেষে মমতা ব্যানার্জি অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন, রাজ্যে কোনও জোটে তিনি থাকবেন না। তৃণমূল একাই লড়বে ৪২টি আসনে। এই ঘোষণার পাশাপশি তাঁর তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, সারা ভারতে কি হবে সেটা ভোটের পরে ঠিক করবেন। রাজ্যে বিজেপি’র বিরুদ্ধে একা লড়বেন বলেছেন। কিন্তু দেশে তাঁর অবস্থানটা স্পষ্ট না করে ঝুলিয়ে রাখলেন কেন? সারা দেশেও যে তিনি বিজেপি’র বিরুদ্ধে থাকবেন সেটা প্রকাশ্যে বলতে দ্বিধা কেন? ভোটের পরে ঠিক করবেন মানে তো হাওয়া বুঝে যে কোনও দিকে যাবার রাস্তা খোলা রাখা। তাহলে কি ভোটের পরে সরাসরি বিজেপি’র দিকে না থাকলেও পরোক্ষে বিজেপি’র দিকে থাকতে পারেন বলে বার্তা দিয়ে রাখলেন?
মমতা ব্যানার্জিকে যারা চেনেন, তাঁর রাজনৈতিক জীবনে পক্ষ বদলের ইতিহাস যাঁরা জানেন তাঁরা কেউই মমতা ব্যানার্জির এহেন মন্তব্যে বিস্মিত হচ্ছেন না। বিজেপি অচ্ছুৎ নয় বা বিজেপি’কে ফ্রন্টে এনে লড়ার ঘোষণা যার মুখ থেকে নিঃসৃত হয় তিনি যে শেষপর্যন্ত আরএসএস-বিজেপি’র শিবিরের বলয়েই থাকবেন তাতে সন্দেহ থাকার কথা নয়। বরং বিজেপি’র বিরুদ্ধে ইন্ডিয়া জোট নিয়ে তাঁর মাতামাতিতেই সন্দেহ উঁকি মারছিল। কিছুদিন পর থেকেই নানা অজুহাত ও বাহানা হাজির করে তিনি দূরত্ব বাড়াতে শুরু করেন। তারপর জোটের মধ্যেই উপজোট তৈরি করে জোটে ফাটল ধরানোর কৌশল নেন। তাঁর আচরণ অনেকের চোখে জোটের মধ্যে বিজেপি’র এজেন্টের মতো মনে হয়েছিল। অবশেষে যা হবার ছিল সেটাই হয়েছে।
বাংলায় বাম রাজনীতির শক্তিশালী প্রভাব থাকায় আরএসএস অনেক চেষ্টা করে এরাজ্যে পায়ের নিচে শক্ত জমি পাচ্ছিল না। তাই বিকল্প পথে তাদের এজেন্ট তৈরি করে কাজ হাসিলের চেষ্টা করে। বাম জমানায় কংগ্রেসকে ভেঙে তৃণমূল গঠনের মধ্য দিয়ে আরএসএস’র সেই পরিকল্পনা একধাপ এগোয়। এটা কারোরই অজানা নয় তৃণমূল গঠনের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল আরএসএস’র। তাই স্বাধীনতা সংগ্রামে যাদের কোনও ভূমিকা ছিল না, সেই আরএসএস’কে মমতা ব্যানার্জি দেশের সত্যিকারের দেশপ্রেমী সংগঠন বলে ভূয়শী প্রশংসা করতে পারতেন না। বিনিময়ে আরএসএস নেতাও মমতাকে ‘মা দুর্গা’ বলতেন না। আরএসএস’র রাজনৈতিক শাখা যেমন বিজেপি তেমনি তৃণমূলও আরএসএস’র রাজনৈতিক প্রকল্প রূপায়ণে সহযোগী শক্তি। তাই মমতা ব্যানার্জি কোনোদিন আরএসএস সম্পর্কে কোনও বিরূপ মন্তব্য করেননি। বিজেপি’র বিরুদ্ধে তিনি হুঙ্কার ছাড়েন কিন্তু বিজেপি’র আদর্শগত অভিভাবক সম্পর্কে পুরোপুরি নীরব। তৃণমূল বিজেপি একে অন্যের বিরুদ্ধে নকল যুদ্ধ করে কিন্তু কেউই আরএসএস’র বিরুদ্ধে কিছু বলে না। আরএসএস’র নির্দেশেই তৃণমূল বিরোধী শিবিরে থেকে বিজেপি বিরোধী বলে ভাব দেখায়। আসলে বিরোধী মহলে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বিরোধী ঐক্যকে দুর্বল করাই তাদের কাজ। বাংলায় গোড়া থেকে নানাভাবে কংগ্রেস ও বামেদের দুর্বল করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। একইভাবে অন্য রাজ্যে বিজেপি’কে সুবিধা করে দিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। ত্রিপুরায় বিজেপি’কে ক্ষমতায় আনতে এবং ক্ষমতায় রাখতে তৃণমূল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আসামে কংগ্রেসকে দুর্বল করে বিজেপি’র রাস্তা চওড়া করেছে তৃণমূল। মেঘালয়েও ঠিক সেটাই করেছে। আর গোয়ায় বিজেপি’র নিশ্চিত পতন থেকে উদ্ধার করে তৃণমূল কংগ্রেস ভাঙিয়ে। এমন উদাহরণ অজস্র আছে। কেন্দ্র ও অন্যান্য রাজ্যে বিজেপি’র ক্ষমতা দখলে তৃণমূল সমস্ত রকমভাবে সাহায্য করে। বিনিময়ে রাজ্যে তিনি ক্ষমতায় থাকার গ্যারান্টি চান। আরএসএস‘র ছক অনুযায়ী তৃণমূল বিজেপি’র গোপন বোঝাপড়া এভাবে এগিয়ে চলেছে।
Comments :0