Manipur Story

মণিপুর সামলাচ্ছে সেনারা, আশ্রয় ২৩ হাজার মানুষকে

জাতীয়

Manipur Story


বিশ্বজিৎ দাস, গুয়াহাটি


রবীন্দ্রনাথের ‘‘চিত্রাঙ্গদা’’- র রাজ্যে এখন শুধু আগুনে পোড়া গন্ধ। পুড়ছে মণিপুরের গ্রাম-নগর। বন্দুক, পিস্তল আর সেনার বুটের আওয়াজে গুমোট বেঁধে আছে রাজ্যের স্বাভাবিক জনজীবন। হিংসার আগুনে মুহুর্তে ধ্বংস করে দিয়েছে সাজানো গুছানো ছোট্ট রাজ্যকে। সেনা টহল চললেও আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন রাজ্যের মানুষ। রাজ্যের পরিস্থিতি সামলাতে প্রায় ১০ হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এমনকি আকাশ থেকেও টহলদারি চালাচ্ছে সেনারা। সেনাবাহিনী সূত্রে জানানো হয়েছে, ২৩ হাজার মানুষকে উদ্ধার করে সেনাদের আশ্রয়ে রাখা হয়েছে। 


তার মধ্যেই উপদ্রুত এলাকায় বিচ্ছিন্ন হামলার ঘটনা ঘটছে বলে খবর পাওয়া গেছে। শনিবার রাতে উগ্রপন্থী হামলায় পুলিশের এক ডিআইজি সহ তিন জওয়ান আহত হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে টেঙনোপাল বাজারে রাত সাড়ে দশটা নাগাদ। ডিআইজি নিঙসেন ওয়রগামের নেতৃত্বে পুলিশি টহল চলার সময় হামলা চালায় বন্দুকধারী একদল দুষ্কৃতি।  পুলিশও পালটা গুলি চালায়। তবে মুহুর্তে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। দুষ্কৃতী হামলায় রাজ্যের উদীয়মান হকি খেলোয়াড় নিহত হয়েছেন। লাইসরাম রিভাল্ডো (২২) নামের জাতীয় দলের ওই খেলোয়াড়কে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। 
চুরাচন্দ্রপুর জেলার পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হওয়ায় রবিবার সকাল সাতটা থেকে দশটা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা কারফিউ শিথিল করা হয় জেলায়। তবে ওই জেলার বেশিরভাগ বাজারের দোকানপাট পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তাই স্থানীয় বাজারগুলি বন্ধই ছিল। রাজ্যের অন্যত্র কারফিউ শিথিলের সময়ে মানুষজন বেরিয়ে প্রয়োজনীয় রসদ কিনেছেন। 


রাজ্যের চলমান হিংসাত্মক ঘটনার মধ্যে হঠাৎ করে মণিপুরের মুখ্য সচিব বদলি করে দিয়েছে কেন্দ্র। রবিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার নিয়োগ কমিটির সুপারিশ মতে মুখ্য সচিব ড. রাজেশ কুমারকে বদলি করে বিনীত জোশীকে মুখ্য সচিব পদে নিয়োগ করা হয়েছে। জোশী কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব ছিলেন। 
এদিকে, যে বিতর্ককে কেন্দ্র করে মণিপুর জ্বলছে, তা নিয়ে বিজেপি নিজের অবস্থান বদল করে নিয়েছে। মেইতেইদের উপজাতি মর্যাদার দাবিকে ঘিরেই জাতিদাঙ্গা বাধে রাজ্যে। মেইতেইদের উপজাতি মর্যাদা দিতে কেন্দ্রের কাছে এক মাসের মধ্যে সুপারিশ করতে গত ২৭ মার্চ রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয় মণিপুর হাইকোর্ট। সেই নির্দেশকে হাতিয়ার করে বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ করতে তৎপর হয়ে ওঠে রাজ্যের বিজেপি সরকার। একইসঙ্গে আদিবাসীদের বেপরোয়া উচ্ছেদ চালায়। যুগপৎ দুটি ঘটনার বিরুদ্ধে রাস্তায় নামেন আদিবাসীরা। নিজেদের উপজাতি মর্যাদার দাবিতে পালটা আন্দোলনে নামে মেইতেইরা। এই সুযোগকে কাজে লাগায় বিভেদকামী শক্তি। এর থেকেই জাতিদাঙ্গা হচ্ছে। এই দাঙ্গায় ষাট জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। বিপুল সম্পদ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ছারখার হয়ে গেছে একেরপর এক গ্রাম। লক্ষাধিক মানুষ গৃহহীন। এসবের পর এবার মেইতেইদের উপজাতি মর্যাদার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছে শাসকদল বিজেপি। দলের বিধায়ক তথা হিল এরিয়া কমিটির চেয়ারম্যান দিঙ্গাঙলাঙ গেঙ্গমেই শীর্ষ আদালতে মামলা দায়ের করে হাইকোর্টের নির্দেশ বাতিল করতে আরজি জানিয়েছেন। তিনি তাঁর আবেদনে বলেছেন, উপজাতির মর্যাদার বিষয়টি রাজনৈতিক। এখানে আদালত এতে হস্তক্ষেপ করায় হিতে বিপরীত হয়েছে। অবশ্য এবিষয়ে সরকারিভাবে কিছুই বলা হয়নি। 


কর্ণাটকের নির্বাচনী প্রচারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেছেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে কর্ণাটকে দাঙ্গা হবে। গত ২৩ এপ্রিল শাহের করা অভিযোগের এক সপ্তাহ কাটতে না কাটতে তাঁর দলের শাসিত মণিপুর দাঙ্গায় বিধ্বস্ত। এনিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা। বিরোধীদের অভিযোগ, মণিপুরে সাড়ে ছয় বছর ধরে শাসন করছে বিজেপি। মোদী-শাহ বরাবর  দাবি করেন, ডবল ইঞ্জিনের সরকার হলে নাকি উন্নয়নের গতি ঝড়ের বেগে ছুটবে। মণিপুরে ডবল ইঞ্জিনের শাসনে উন্নয়নের বদলে হিংসার আগুনে জ্বলছে। এনিয়ে শাহ এখন চুপ কেন? এই প্রশ্নও উঠছে। মণিপুরে হিংসাত্মক ঘটনা ছড়িয়ে পড়ার পর বিজেপি থেকে বলা হয়েছিল মণিপুরের পরিস্থিতির জন্য অমিত শাহ কর্ণাটকের প্রচার বন্ধ রেখেছেন। অথচ,একথা বলার পরদিনই শনিবার কর্ণাটকে একেরপর এক  নির্বাচনী সভা করেছেন অমিত শাহ। রবিবারও তিনি সভা করেছেন। এদিন কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, উত্তর পূর্বে বিজেপি যে খেলা খেলছে তার ফলাফল যে এমন হবে, তা নিয়ে আগেই সতর্ক করেছিল কংগ্রেস। 


রবিবার অরুণাচল প্রদেশ, ত্রিপুরা, সিকিম ও নাগাল্যান্ড সরকার তাদের  রাজ্যের মানুষদের বিশেষ নিরাপত্তা দিয়ে মণিপুর থেকে নিয়ে গেছে। নিজের রাজ্যের মানুষদের ফিরিয়ে আনতে বিমান দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার সাহায্য করছে না বলে অভিযোগ জানিয়েছে মিজোরাম সরকার।

Comments :0

Login to leave a comment