MODI ELECTORAL BOND

এমন নির্লজ্জ হতে মোদীই পারেন

সম্পাদকীয় বিভাগ

যে নির্বাচনী বন্ডকে অবৈধ, অসাংবিধানিক বলে সুপ্রিম কোর্ট ঘোষণা করেছে, তার পক্ষে নির্লজ্জের মতো সওয়াল করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। নির্বাচনী বন্ডকে সুপ্রিম কোর্ট অসাংবিধানিক এবং অবৈধ বলে ঘোষণা করার পরেও। প্রথমে কিছুটা চুপ থেকে সময় নিয়েছেন। শিয়রে নির্বাচন তাই, অবশেষে মুখ খুলেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রথমে পছন্দের টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে, তারপরে জনসভাতেও। সাক্ষাৎকারে মোদীকে প্রশ্ন ছিল নির্বাচনী বন্ড আপনার সরকারের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ?  কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে জবাবদিহির সুযোগের মতো মোদী বলেছেন, আগেও তো নির্বাচন হতো, কে কাকে চাঁদা দিত জানা যেত না। এখন নির্বাচনী বন্ডের জন্য সেটা তো জানা যাচ্ছে। মোদীর এই বক্তব্য মিথ্যা শুধু নয়, সুপ্রিম কোর্টে খারিজ হওয়া যুক্তি। মোদী নির্বাচনী বন্ডের তথ্য সম্পূর্ণ গোপন রেখেছিলেন, বলা ভালো রাখতে চেয়েছিলেন শেষপর্যন্ত। সেভাবেই আইন তৈরি করা হয়েছিল। কে টাকা দিচ্ছে, কাকে দিচ্ছে তা জানা যাবে না। ২০১৮ সাল থেকে ২০২৪ , কোনও তথ্য পাওয়াও যায়নি। সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচনী বন্ডকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করার পরে সেই তথ্য সামনে এসেছে। শেষ দিন পর্যন্ত আদালতে মোদী সরকার নির্বাচনী বন্ডের তথ্য গোপন রাখার চেষ্টা করে গেছে। শেষ রক্ষা হয়নি। নির্বাচনী বন্ডে সরকার এবং বিজেপি’র পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতি প্রমাণ হয়ে গেছে।  প্রধানমন্ত্রীর বরাবরের ভাষণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি লড়াই করছেন। কিন্তু দেখা গেল উনি নিজেই গোটা দেশে দুর্নীতি বিলি করছেন। যাকে যত বড় দুর্নীতিগ্রস্ত বলা হয়েছে, তাকে বিজেপি দপ্তরে তত বড় লাল কার্পেট বিছিয়ে স্বাগত জানানো হয়েছে। ইডি, আয়কর এবং সিবিআই’র মতো সংস্থাগুলিকে স্থানীয় তোলাবাজির এজেন্টে পরিণত করেছে টাকা তুলেছে বিজেপি। ওই দল দুর্নীতিগ্রস্তদের অভয়ারণ্য। মোদী সরকারের পরিচয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘দুর্নীতিগ্রস্তদের গ্যারান্টি’। প্রধানমন্ত্রী এখন যাই বলুন না কেন, সুপ্রিম কোর্টে তাঁর আইনজীবী সওয়াল করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি কোথা থেকে চাঁদা পাচ্ছে, তা জানার অধিকার নেই সাধারণ মানুষের। 
মোদী এখন সাফাই গাইছেন ইডি একটি স্বশাসিত সংস্থা। তিনি বা তাঁর সরকার তাদের কাজে কোনও হস্তক্ষেপ করে না। বিরোধীদের বিরুদ্ধে ইডি এবং অন্য সংস্থাকে ব্যবহার করা নাকি দূরের কথা। কিন্তু নির্বাচনী বন্ডের তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির তদন্তের মুখে পড়েছেন এমন ৪১টি সংস্থা প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে দিয়েছে বিজেপি’কে। নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে কোন সংস্থা কবে বিজেপিকে টাকা দিয়েছে সামনে চলে আসার পরে স্পষ্ট হয়ে গেছে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে দিয়ে ভয় দেখিয়ে কিভাবে বন্ডে কোটি কোটি টাকা নিয়েছে বিজেপি। শুধু তাই নয়, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ঘটনায় এটাও স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে, জেলে ঢুকিয়ে, উৎপীড়ন করার রাজনৈতিক মহান কর্তব্যটি মোদী সরকার নিরলসভাবে করে গেছে। যখন নির্বাচনী বন্ডের তথ্য বিজেপি’র বিপুল দুর্নীতিকে উলঙ্গ করে দিয়েছে, দেশজুড়ে বিজেপি’র লুট এবং তোলাবাজির ছবি স্পষ্ট হয়ে গেছে, তখনও গলা চড়িয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব থাকছেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। কিন্তু চমকপ্রদ বিষয় হলো, বিজেপি’র সোশাল মিডিয়া সাইটগুলিতে যেখানে মোদীর ভাষণ পোস্ট করা হলে আগে মোদী বন্দনায় ভরে উঠত কমেন্ট ব্ক্স , সেখানে এখন অসংখ্য মানুষ কটাক্ষ এবং আক্রমণাত্মক  পোস্ট উপচে পড়ছে। শুধু বিরোধীরা নয় পিএম কেয়ার্সের হিসাবও চাইছেন বহু মানুষ। কিন্তু এতদসত্ত্বেও দুর্নীতি নিয়ে মোদীর ভাষণ থামানো যাচ্ছে না। এমন নির্লজ্জতা মোদীকেই মানায়।

Comments :0

Login to leave a comment