রাজ্যে যেমন মমতা, দিল্লিতে তেমনি মোদী। আত্মপ্রচারে কাঙালিপণা এদের এতোটাই যে গরিবের জন্য সরকারি প্রকল্পের টাকা কাটছাঁট করে নিজেদের ব্যক্তিগত ও দলীয় প্রচারেও বিন্দুমাত্র সঙ্কোচবোধ নেই। মাঝে মাঝে আবার কার নাম বা ছবি প্রচারের আলোয় জ্বলজ্বল করবে সেটা নিয়েও দু’পক্ষের কাজিয়া কলতলার ঝগড়ায় নেমে আছে। নাগরিকদের করের টাকায় তৈরি হয় সরকারি প্রকল্প। গরিবের জন্য বরাদ্দকৃত সেই অর্থ থেকে কিছুটা নিজেদের প্রচারের কাজে খরচ করা শুধু মাত্র দৃষ্টিকটূ নয় নির্লজ্জও। এখানেই গুরুতর প্রশ্ন হিসেবে উঠে আসে রাজনৈতিক মূল্যবোধের। রাজনীতি যদি হয় দেশের সেবা, জনগণের সেবা তাহলে সেই সেবা হবে নিঃস্বার্থ। সেখানে প্রতিদান পাবার কোনও প্রশ্ন থাকে না। এখন রাজনীতিকরা মঞ্চে উঠে গদ গদ কণ্ঠে আত্মত্যাগের কথা, নিঃস্বার্থ সেবার কথা বলে থাকেন। কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে ধারণ করেন আসল রূপ। তখন জনসেবা বা দেশসেবা অপেক্ষা বেশ গুরুত্ব পেয়ে যায় আত্মসেবা। নানা কায়দায় দেশের সম্পদ, জনগণের সম্পদ লুটেপুটে খাওয়াই পাখির চোখ হয়ে পড়ে। কেউ প্রত্যক্ষভাবে নিজের বা নিকটজনের পকেট ভরানোর ব্যবস্থা করেন, কেউ সেটা করেন পরোক্ষে।
নরেন্দ্র মোদী নিজেকে ফকির বলে থাকেন। কিন্তু তাঁর মতো ফকিরের হালচাল দেশে বিশ্বসেবা আমীরেরাও নিজেদের আমীর ভাবতে লজ্জা পাবেন। একজন প্রধানমন্ত্রীর বিলাশবাহুল্যের সীমা কতটা সেটা বেঁধে দেওয়া নেই। তবে ভারতের অতীত প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে তুলনা করলে মোদী তো কল্পনাতীত উচ্চতায় পৌঁছে গেছেন।তার ব্যক্তিগত ব্যবহারের প্রতিটি উপকরণ বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের সঙ্গে তুলনীয়। একজন প্রধানমন্ত্রী যদি দিনে দশটা অনুষ্ঠানে যান তবে কি দশবার তাকে পোশাক বদলাতে হবে? তেমনি সেই পোশাকগুলি কি অতি মূল্যবান না হলে চলে না। আবার এক পোশাক দ্বিতীয়বার পরলে কি ভাবমূর্তি খারাপ হয়? আরএসএস’র হিন্দুত্ববাদী সাংস্কৃতিতে এমন বিধান আছে যে এক পোশাক একবারের বেশি পরা যাবে না। তেমনি প্রত্যেকটি নির্দিষ্ট অনুষ্ঠানের জন্য, বলা ভালো ফটো তোলার জন্য ডিজাইনার দিয়ে বিশেষ ধরণের পোশাক না বানালে কি প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা হানি হয়?
প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসে মোদী বলেছিলেন তিনি প্রধানমন্ত্রী নন প্রধান সেবক। সেবকদের তো এমন সাজ-পোশাকের বিলাসিতা থাকার কথা নয়, এমন আত্মপ্রচারের লাভও থাকার কথা নয়। তিনি যদি সত্যি সত্যি সেবক হবেন তাহলে গরিবের বিনামূল্যের রেশনের ব্যাগে নিজের ছবি ছাপিয়ে বিনামূল্যে বিতরণ করবেন কেন? ২০২০ সালে করোনাকালে চালু হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী গরিবকল্যাণ অন্ন যোজনা। দেশের প্রায় ৭০ কোটি মানুষের কাছে বিনামূল্যে চাল-গম পৌঁছে দিচ্ছে এই প্রকল্প। সরকারের কাছ থেকে বিনামূল্যে গরিব মানুষ চাল-গম পাবেন। তথাপি তার নামের আগে জোড়া হলো প্রধানমন্ত্রী। মোদীকে মহানুভব দাতা বানাবার চেষ্টা। যেন প্রধানমন্ত্রীর দয়াতেই গরিব ভারতবাসী খাদ্য পাচ্ছেন। এবার ঠিক ভোটের আগে আরও এক ধাপ এগিয়ে দশ কেজি খাদ্যশস্যের ব্যাগ বানিয়ে তাতে মোদীর ছবি ছাপিয়ে তার ভেতর রেশনের খাদ্য ভরে ঘরে ঘরে পৌঁছানোর বন্দোবস্ত হয়েছে। রাজ্যে রাজ্যে এফসিআই’র আঞ্চলিক দপ্তরগুলি খাদ্য কেনার টাকা খরচ করে এই ব্যাগ বানাচ্ছে। সারাদেশে ৭০ কোটি মানুষের কাছে এমন ব্যাগ পৌঁছে দিতে কয়েক’শো কোটি টাকা খরচ হয়ে যাবে। কেন এই অপচয়? মোদীকে ভোটে জেতাবার জন্য সরকারি অর্থে ভোট প্রচার?
RATION SHOP MODI
রেশনের টাকায় মোদীর প্রচার
×
Comments :0