NCRB Report

কেরালা স্টোরির মধ্যেই সামনে গুজরাটের কাহিনী, মোদী-শাহের রাজ্য থেকে নিখোঁজ ৪০ হাজার মহিলা

জাতীয়

NCRB Report

কেরালা থেকে ৩২ হাজার মহিলা নিখোঁজ হয়ে গেছেন। আসলে তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন এবং সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের যোগ দিয়েছেন। এমন প্রচারকে তুঙ্গে তুলেই মুক্তি পেয়েছে ‘কেরালা স্টোরি’। ছবির এবং প্রচারের মোদ্দা কথা, কেরালায় মুসলিম উগ্রপন্থীরা ফুঁসলিয়ে হিন্দু এবং খ্রিস্টান মেয়েদের মুসলিম বানাচ্ছে, তারপর তাদের নিয়ে যাচ্ছে আইএস বা তালিবানের মতো সংগঠনে কাজ করাতে। এভাবেই কেরালা থেকে ৩২ হাজার মেয়ে নিখোঁজ হয়ে গেছে। 


খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কর্ণাটকের বিধানসভা ভোটে এই নিয়ে প্রচারে নেমেছেন। কর্ণাটকের বিভিন্ন জায়গায় বিজেপি ছবিটির প্রদর্শন করছে ভোটে মেরুকরণের লক্ষ্যে। মধ্য প্রদেশ, উত্তর প্রদেশের বিজেপি সরকার ‘কাশ্মীর ফাইলস’ এর মতো ‘কেরালা স্টোরি’কে কর মকুব করে দিয়েছে। অর্থাৎ নামমাত্র মূল্য দিয়ে টিকিট কেটে বিপুল সংখ্যক দর্শক সিনেমাটি দেখতে পারবেন। বিজেপি শাসিত অন্য রাজ্যগুলিও সেই পথেই যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। মূল লক্ষ্য হচ্ছে এই ‘প্রোপাগান্ডা’ সিনেমাটিকে ছড়িয়ে দিয়ে তাদের ‘লাভ জিহাদ’ প্রচারকে আরও হাওয়া দেওয়া। 


কিন্তু এরমধ্যেই সামনে চলে এসেছে ‘গুজরাট স্টোরি’। ন্যাশনাল ক্রাইমস রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি)-র পরিসংখ্যান নিয়ে শুরু হয়েছে হইচই। সেখান থেকে দেখা যাচ্ছে শুধুমাত্র গত পাঁচ বছরেই মোদী-শাহের রাজ্য গুজরাট থেকে নিখোঁজ হয়ে গেছেন ৪১ হাজারের বেশি মহিলা। এনসিআরবি-কে হিসাব দেয় রাজ্যগুলিই। অর্থাৎ ধরে নেওয়া যায় এই হিসাব গুজরাট সরকারেরই। সেই হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ৭১০৫, ২০১৭ সালে ৭৭১২, ২০১৮ সালে ৯২৪৬, ২০১৯ সালে ৯২৬৮ এবং ২০২০ সালে ৮২৯০ জন মহিলা নিখোঁজ হয়েছেন গুজরাট থেকে। সব মিলিয়ে ৪১ হাজার ৬২১ জন। ২০২১ সালে ৪৭২২ জন মহিলা নিখোঁজ হয়েছেন বিশেষত আমেদাবাদ এবং ভদোদরা থেকে। দুটিই গুজরাটের বৃহৎ শহর। 


প্রতি বছর এই বিপুল পরিমাণ মহিলা রাজ্য থেকে নিখোঁজ হলেও প্রধানমন্ত্রী মোদীর নিজের রাজ্যে পুলিশের ভূমিকা কেমন, জানিয়েছেন গুজরাট পুলিশের প্রাক্তন অতিরিক্ত ডিজি রাজন প্রিয়দর্শী। তিনি বলেন, যখন আমি খেদা জেলায় পুলিশ সুপার ছিলাম, একটা ঘটনা সামনে এসেছিল। উত্তর প্রদেশের একটা লোক গরিব একটি মেয়েকে অপহরণ করে তার রাজ্যে বিক্রি করে দিয়েছিল। সেখানে তাকে খেতমজুর হিসাবে ব্যবহার করা হতো। সেই মেয়েটিকে আমরা উদ্ধার করেছিলাম শেষ পর্যন্ত। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেটা হয় না। প্রাক্তন পুলিশকর্তা জানিয়েছেন, আমি দেখেছি অপহৃত মহিলাদের বেআইনি মানব পাচার দলগুলো অন্য রাজ্যে এবং অন্য দেশে বিক্রি করে দেয়। 
প্রাক্তন আইপিএস অফিসার এবং গুজরাট মানবাধিকার কমিশনের সদস্য সুধীর সিনহা জানিয়েছেন, এই নিখোঁজ তরুণী এবং মহিলাদের একটা অংশকে জোর করে বিদেশে পাঠানো হয় যৌন কর্মী হিসাবে ব্যবহারের জন্য। তাঁর মতে, পুলিশ নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগকে বিশেষ গুরুত্ব দেয় না। হত্যার মতোই নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। আমি বলব, খুনের ঘটনার থেকেও নাবালিকা নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। নিখোঁজ নাবালিকাদের পরিজনরা বছরের পর বছর অপেক্ষায় বসে থাকেন সন্তানের জন্য। 


‘কেরালা স্টোরি’ নিয়ে বিজেপি’র প্রোপাগান্ডার মধ্যেই গুজরাট থেকে বিপুল পরিমাণ মহিলার নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এক প্রশ্নের জবাবে সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদিকা মারিয়ম ধাওয়ালে বলেছেন, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতেই মহিলাদের উপরে অপরাধের ঘটনা বেশি। গোটা দেশ দেখছে দিল্লিতে কুস্তিগিরদের সঙ্গে কি হচ্ছে! যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা বিজেপি’র সাংসদ, মন্ত্রী। মহিলা কুস্তিগিরদের ন্যায়বিচার দেওয়া সরকারের কর্তব্য ছিল। পরিবর্তে নরেন্দ্র মোদীর সরকার অভিযুক্তদের মদত দিচ্ছে। এইভাবেই সর্বত্র অপরাধীদের মদত দিচ্ছে বিজেপি সরকার। 


মারিয়ম ধাওয়ালে কেরালার প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেন, সেখানে মহিলাদের সঙ্গে অপরাধের ঘটনা ঘটলে পুলিশ প্রশাসন মহিলা কমিশন পদক্ষেপ করে। এখন ‘কেরালা স্টোরি’র মাধ্যমে সেখানের বাম গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে বিজেপি। তার কারণ, সেখানের এলডিএফ সরকার বিকল্প নীতি নিয়ে চলছে। তা জনপ্রিয় হচ্ছে। এতেই ভয় পাচ্ছে বিজেপি, কারণ আদানি-আম্বানিদের কাছে দেশবেচার যে নীতি নিয়ে চলছেন মোদী-শাহরা, তা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে মানুষের সামনে। তাই কেরালাকে যে কোনোভাবে বদনাম করার চেষ্টা শুরু করেছে। 
গুজরাট কংগ্রেসের মুখপাত্র হিরেন বাঙ্কের বলেছেন, বিজেপি নেতারা কেরালার মহিলাদের নিয়ে কথা বলছেন। বিরাট দুশ্চিন্তা তাদের। অথচ পাঁচ বছরের মধ্যে ৪০ হাজারের বেশি মহিলা গুজরাট থেকে নিখোঁজ হয়ে গেছেন। দেশের প্রধানমন্ত্রী আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর রাজ্য গুজরাট, মনে করিয়ে দিয়েছেন কংগ্রেস মুখপাত্র।


 

Comments :0

Login to leave a comment