YECHURY on UCC

বহুর মধ্যে ‘দুই আইন’ বাছাই মেরুকরণের ফন্দি: ইয়েচুরি

জাতীয়

YECHURY on UCC

দেশে অসংখ্য আলাদা ব্যক্তিগত আইন রয়েছে। হিন্দুদের মধ্যেই আলাদা আলাদা রীতি রয়েছে? তা’হলে প্রধানমন্ত্রী কেবল দু’টি আইনকে বেছেছেন কেন? কেন কেবল হিন্দু এবং মুসলিমদের ব্যক্তিগত আইনের ফারাকের কথা বলছেন? 

শনিবার কোঝিকোড়ে এই প্রশ্ন তুললেন সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি।

ইয়েচুরির ব্যাখ্যা, ‘‘অভিন্নতা অর্জন প্রধানমন্ত্রী বা বিজেপি’র লক্ষ্য নয়। লক্ষ্য অভিন্ন দেওয়ানি বিধিকে সামনে রেখে হিন্দু এবং মুসলিম ধর্মীয় মেরুকরণ বাড়ানো। ২০২৪’র লোকসভা নির্বাচনের জন্যই এই মেরুকরণ তাঁর প্রয়োজন।’’ 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর থেকে ফিরেই মধ্য প্রদেশের ভোপালে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির আলোচনা খুঁচিয়ে তোলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২২তম জাতীয় আইন কমিশন অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়েই বিভিন্ন অংশের মতামত চেয়েছে। বিজেপি’র বুথ স্তরের নেতাদের সভায় মোদী বলেছিলেন, ‘‘এক দেশে দুই আইন থাকবে কেন। দুই সন্তানের আলাদা আলাদা আইন হবে কেন?’’ বিজেপি নেতারাও বরাবরের মতোই বলছেন, মুসলিমদের জন্য আলাদা ব্যক্তিগত আইন থাকবে কেন। 

বিয়ে, সম্পত্তির উত্তরাধিকার, দত্তকের মতো বিষয়গুলি দেওয়ানি বিধির মধ্যে পড়ে। বিজেপি বলছে, দেশের একতার জন্যই দরকার অভিন্ন দেওয়ানি বিধি। বাস্তবে দেশে আসলে দুই নয়, সম্প্রদায় ও জনজাতি ভিত্তিক বহু রীতিই আইনসম্মত বলে বিবেচিত হয়, এদিন বলেছেন ইয়েচুরি।

শনিবার কোঝিকোড়ে পালিত হয় চলচ্চিত্রকার ও সাহিত্যিক এমটি বাসুদেবন নায়ারের ৯০ তম জন্মবার্ষিকী। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক অংশ এদিন কোঝিকোড়ে এই সভায় অংশ নেয়। বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) কেরালা রাজ্য সম্পাদক এমভি গোবিন্দনও। 

বক্তব্যে একই ধর্মীয় অংশের বিভিন্ন অঞ্চলে পালিত বিভিন্ন রীতির উল্লেখ করেন ইয়েচুরি। যেমন তেলুগুদের কোনও কোনও গোষ্ঠীতে মামা এবং ভাগ্নির বিয়ে চালু রীতি। আবার চেন্নাইয়ে বা পূর্বতন মাদ্রাজে তুতো ভাইবোনের মধ্যে বিয়ে বিশেষ মান্য রীতি। গোয়ায় বিজেপি যে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর কথা বলছে সেখানে স্ত্রী পুত্রসন্তানের জন্ম না দিতে পারলে স্বামীর ফের বিয়ে আইনসম্মত করা হয়েছে। 

ইয়েচুরি বলেছেন, ‘‘প্রতিটি উদাহরণ অন্য অংশের কাছে অপরাধ। যেমন মাদ্রাজের একই অংশে মামা ভাগ্নির বিয়ে অবৈধ। আবার তেলুগুদের সংশ্লিষ্ট অংশে ভাইবোনের বিয়ে অপরাধ। দেশে আসলে কেবল বৈচিত্র্যই নেই। তার সঙ্গে বহুত্ব রয়েছে। কোনও রীতি সমাজের কোনও অংশকে নিপীড়ন করছে কিনা দেখা দরকার। সেই পর্যালোচনা সব রীতি নিয়েও হওয়া দরকার। কিন্তু বিজেপি’র এমন পর্যালোচনা নিয়ে মাথাব্যথা নেই। দেখাচ্ছে যেন কেবল হিন্দু আর মুসলিমদের মধ্যে দু’টি আলাদা রীতি রয়েছে। বলা হচ্ছে ‘এক দেশে দুই আইন কেন’।’’ 

নতুন করে গঠিত ২২তম আইন কমিশন অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে বিতর্ক শুরু করতেই, কেবল মুসলিম সংগঠন নয়, বিভিন্ন ধর্মীয়, জনজাতি ভিত্তিক সংগঠন আপত্তি তুলেছে। শিখদের বিভিন্ন সংগঠন তাঁদের প্রস্তাবিত বিধির বাইরে রাখার দাবি তুলেছে। আদিবাসী এবং জনজাতি বিভিন্ন সংগঠনও সেই দাবিতে সরব। নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। তারপর সংবাদমাধ্যমে তিনি জানান, খ্রীস্টান এবং জনজাতিদের এই বিধির বাইরে রাখার আশ্বাস মিলেছে। পার্সিরাও এই দাবি তুলেছেন। 

ইয়েচুরি পরপর ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, ‘‘তা’হলে বাকি কারা রইল? কেবল মুসলিমরা। বাকিদের আলাদা বিধি থাকবে। সেক্ষেত্রে দেওয়ানি বিধি অভিন্নই বা হয় কী করে?’’

সংবিধানে এই বিধির উল্লেখ থাকলেও তার সঙ্গে যে বিজেপি-আরএসএস’র মতলবের বিপক্ষে, তাও ব্যাখ্যা করেন ইয়েচুরি। তিনি বলেন, ‘‘সংবিধান কেবল বৈচিত্রের কথাই বলেনি। বহুত্বকেও স্বীকৃতি দিয়েছে। সে কারণেই ৩৭০ বা ৩৭১ক থেকে পরপরপর উপধারায় বিভিন্ন অঞ্চলের পৃথক বৈশিষ্ট্যকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল।’’

ইয়েচুরি বলেন, ‘‘সংবিধানে ৪৪ ধারায় অভিন্ন দেওয়ানি বিধির কথা বলা হয়েছে ঠিকই, আবার বাবাসাহেব আম্বেদকর সংবিধান পরিষদের বিতর্কে বলেছিলেন এ দিকে এগতে হলে সব অংশের সমন্বয় সহযোগিতার মাধ্যমে তা করা উচিত। সে কারণে এই ধারা রাখা হয়েছে নির্দেশমূলক নীতিতে, বাধ্যতামূলক বিবেচ্য হিসেবে নয়।’‘ ইয়েচুরি বলেন, ‘‘আমাদের পার্টি মনে করে এই আলোচনায় কেবল সব অংশই নয়, পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা উচিত।’’ 

সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো এর আগে নতুন আইন কমিশনের বিজ্ঞপ্তি নিয়ে বক্তব্য জানায়। বলা হয় ব্যক্তিগত আইন সংস্কারে গুরুত্ব পাওয়া উচিত সব অংশের মহিলাদের অধিকার। 

ইয়েচুরি বলেন, ‘‘আরএসএস এবং তার রাজনৈতিক শাখা বিজেপি’র আসল লক্ষ্য চরম অসহিষ্ণু ফ্যাসিস্ট লক্ষণসম্পন্ন হিন্দুরাষ্ট্র গড়া। দেশের ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক চরিত্রের সংবিধানকে আসলে বদলাতে চায় তারা। সেই অভিমুখে মেরুকরণের হাতিয়ার অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বিতর্ক। এই প্রয়াস রুখতে হবে আমাদের।’’

Comments :0

Login to leave a comment