Palestine footballer dead

প্যালেস্তাইনের ফুটবলারকে হত্যা করল ইজরায়েলী সেনারা

খেলা আন্তর্জাতিক

বিশ্বকাপের উচ্ছ্বাস এখনও শেষ হয়নি। তার মধ্যেই প্যালেস্তাইনের এক উদীয়মান, প্রতিভাবান ফুটবলারকে গুলিতে হত্যা করল ইজরায়েল। প্যালেস্তাইনের নাবলুসে ইজরায়েলী সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন আহমেদ দারাগমেহ। ২৩ বছরের এই ফুটবলার ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব থাকাফি তুলকারেমের হয়ে খেলতেন। এই মরশুমে ছ’গোল করে দলের শীর্ষ গোলদাতাও ছিলেন। নজর কেড়েছিলেন গোটা প্যালেস্তাইনের। 
ফিফার কাছে এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে অভিযোগ জানিয়ে প্যালেস্তাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, কাতারে চমৎকার বিশ্বকাপ শেষ হবার পরে যখন উৎসবের মরশুম, নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে সকলে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখনই প্যালেস্তাইনের এক শীর্ষস্তরের ফুটবলারকে হত্যা করা হয়েছে। ইজরায়েলী দখলদারির জাতিবিদ্বেষী চরিত্র আরও ভালো করে খতিয়ে দেখতে হবে ফিফাকে। ইজরায়েল ক্রমাগত আন্তর্জাতিক ক্রীড়া নিয়মবিধি লঙ্ঘন করছে, প্যালেস্তাইনের ফুটবলারদের খেলতে ও নিজেদের উন্নত করার প্রয়াসকে বঞ্চিত করছে। প্যালেস্তাইনের প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ শাতায়েহ ফিফার কাছে দাবি জানিয়েছেন, এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ইজরায়েলের নিন্দা করতে হবে, তাদের দায়ী করতে হবে। 
অধিকৃত ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের শহর নাবলুসে ইজরায়েলী সেনারা ঢুকেছিল গত বৃহস্পতিবার। সেখানে প্যালেস্তিনীয়দের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। সেই সময়েই সেনাদের গুলিতে প্রাণ হারান আহমেদ। পায়ে গুলি লাগার পরে তিনি দৌড়ে পালাতে গেলে সেনারা পরপর তিনটি গুলি করে তাঁর পিঠে। এমনকি চিকিৎসা করানোর কোনও সুযোগও দেওয়া হয়নি। পরিকল্পিত ভাবেই এই হত্যাকাণ্ড। আরও পাঁচ প্যালেস্তিনীয়কে গুলি করা হয়। ২০২২-এই অধিকৃত ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে ১৭৫জন প্যালেস্তিনীয় নিহত হয়েছেন ইজরায়েলী আক্রমণে। 
বিশেষ করে জেনিন ও নাবলুসে ইজরায়েলের আক্রমণ তীব্র হয়েছে। গত সপ্তাহে জেনিনে ইজরায়েলী সেনাদের গুলিতে নিহত হয় ১৬ বছরের প্যালেস্তিনীয় কিশোরী জানা মজিদ জাকারনেহ। নিজের বাড়ির ছাদে বিড়াল নিয়ে খেলছিল সে। সোজা মাথায় গুলি করে ইজরায়েলের সেনারা। 
আহমেদের মৃত্যুর পরে তুবাসে তাঁর বাড়ির সামনে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন। 
আহমেদ দারাগমেহ ফরওয়ার্ডে খেলতেন। প্যালেস্তাইনের অলিম্পিক দলেও সুযোগ পেয়েছিলেন। যদিও আঘাত থাকায় খেলতে পারেননি। তাঁর ক্লাবের কোচ মাহমুদ হাফেজ দারাগমেহ বলেছেন, আহমেদ বিশেষ জাতের খেলোয়াড় ছিল, তেমনই ব্যক্তিত্ব ছিল ওর। প্লেয়ার হিসাবে ছিল অক্লান্ত, বেশ কয়েকটি নির্ণায়ক গোল করেছিল। ও অন্য কয়েকটি বড় লিগে ডাক পেয়েছিল। কিন্তু যায়নি, বলেছিল ক্লাবকে চ্যাম্পিয়ন করবে। স্বপ্ন দেখত প্যালেস্তাইন জাতীয় দলে খেলবে, মানচিত্রে প্যালেস্তাইনকে প্রতিষ্ঠা করবে। ওকে আমি ছোটবেলা থেকে দেখেছি। তুবাসে ও বয়সে বড় খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধেও খেলত। দক্ষতা ছিল। 
সাম্প্রতিক বিশ্বকাপের আসরে প্যালেস্তাইন শিরোনামে এসেছিল স্টেডিয়ামে, রাস্তায় বিভিন্ন দেশের সমর্থকরা প্যালেস্তাইনের পতাকা বহন করায়। প্যালেস্তাইনের নামে গান শোনা গেছে অবিরত। মরক্কোর প্লেয়াররা স্পেনের বিরুদ্ধে ম্যাচে জেতার পরে প্যালেস্তাইনের পতাকা নিয়ে মাঠেই আনন্দ করার পরে তা বিশ্বের নজরে পড়ে। অনেকেই বলছিলেন, এবারের বিশ্বকাপে প্যালেস্তাইন ছিল ‘৩৩’ নম্বর দল। 
কিন্তু সেই প্যালেস্তাইনেই ফুটবলকে হত্যা করতেও উদ্যত ইজরায়েল। প্যালেস্তাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন অতীতেও অভিযোগ করেছে, বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জনের পথেও ইজরায়েল বাধা দিচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি সুসান শালাবি বলেছেন, আহমদ প্যালেস্তাইনের প্রথম শহীদ ফুটবলার নন, শেষও নন। ফুটবলারদের স্বপ্ন ধ্বংস করছে ইজরায়েল। শুধু হত্যাকাণ্ডই নয়, ইজরায়েলের দখলদারিই আসল যন্ত্রণার। প্যালেস্তাইনের এক শহর থেকে অন্য শহরে যাবার স্বাধীনতা নেই। চেকপয়েন্টে খেলোয়াড়দের আটকে রাখা হয়, অনেক সময়ে তারা ম্যাচে উপস্থিত হতে পারে না। কেউ গাজার অধিবাসী হয়, রামাল্লায় জাতীয় দলের অনুশীলনে যোগ দিতে পারে না। শুধু ফুটবলাররাই এই দমবন্ধ অবস্থার মধ্যে খেলে তা নয়, সমর্থকদেরও আক্রমণের মুখে পড়তে হয়। ম্যাচ চলাকালীন স্টেডিয়ামে কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়া হয়। গাজায় স্টেডিয়াম ভেঙে দেওয়া হয়। ইজরায়েলীরা ফুটবল খেলোয়াড়, সাংবাদিক, ডাক্তারদের মধ্যে কোনও পার্থক্য করে না। তারা যে কোনও এবং সব প্যালেস্তিনীয়কেই খুন করে। কেউ প্রতিরোধ যোদ্ধা কিনা, তা কোনও বিষয় নয়। এটি যেন প্যালেস্তাইনে এক টিভি সিরিয়াল, আহমেদের হত্যাকাণ্ড একটি এপিসোড। ইজরায়েল চায় জনহীন এক ভূখণ্ড।

Comments :0

Login to leave a comment