শঙ্কর ঘোষাল
বৃষ্টি পড়ছে। সময় তখন সকাল সাড়ে ৮টা। এমন সময় প্রচন্ড ঝাঁকুনি দিয়ে ট্রেন টা কেঁপে উঠলো। আমরা বুজলাম কিছু একটা হয়েছে। আমরা ছিটকে পড়লাম ট্রেনের মধ্যেই। সে এক ভীষন ভয়ঙ্কর ঘটনা। বিভৎস্য ট্রেন দুর্ঘটনা চোখে দেখা যায়না। এখনো আমার চোখের সামনে সেই দৃশ্য, আহতদের আর্তনাদের স্বর ভাসছে। সোমবার রাতে দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেন কাঞ্চনজঙ্গা’তে চড়ে বর্ধমান স্টেশনে নেমে ট্রেন দুর্ঘটনার ভয়াবহতার কথা জানিয়েছেন। তাঁর বাড়ি পূর্ববর্ধমানের জামালপুরে।
তিনি এদিন বলেছেন, এখন আমার মাথা কাজ করছে না। চোখের সামনে ভাসছে সেই মর্মান্তিক দৃশ্যগুলো। জীবনে প্রথম এমন ঘটনার সাক্ষী হতে হলো আমাকে। তিনি পরিবার নিয়ে আসাম, কামরূপ কামাক্ষা গিয়েছিলেন বেড়াতে। জীবন নিয়ে বাড়ি ফিরতে পেরেছেন এটাই তার কাছে বড় ব্যাপার। ভয় এমন লেঘেছে, কিছছুতেই মন থেকে মুছে ফেলতে পারছেন না। তিনি জানিয়েছেন আমাদের ট্রেনটাকে পেছন থেকে এসে ধাক্কা মারলো। ভাবুনতো একই লাইনে দুটো ট্রেন কিভাবে আসে? যাদের গাফিলতি রেলের তাদেরকে খুঁজে বের করা উচিত। রেলে চাপতেই এখন ভয় লাগছে। রেলের গাফিলতিতে মানুষতো ছারপোকার মতো মরবে।
ঠিক এমনই রেল দুর্ঘটনার আতঙ্কের কথা শুনিয়েছেন দুর্গাপুরের সন্দিপন চৌধুরী। তিনিও পরিবার নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন। দুর্ঘটনার পর চরম উৎকন্ঠার মধ্যে সময় পেড়িয়েছে। তিনি ট্রেনে চেপেছিলেন নিউ ময়নাগুড়ি থেকে। হঠাৎ ট্রেনে প্রচন্ড ঝাঁকুনি। সেই দমকা ধাক্কায় পড়ে গিয়েছিলেন। বাইরে বেড়িয়ে একটি বগি মালগাড়ির ইঞ্জিনের উপরে উঠে গেছে। সে এক ভয়াবহ দৃশ্য। রক্তাক্ত হয়ে মানুষ মরে পড়ে আছে, কেউ যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন। এত জোরে ঝাউকুনি দেখে বুজে ছিলাম এটা ব্রেক মারার ঝাঁকুনি নয়। যে সময় ঘটেছে সেই সময় একটু তন্দ্রার মধ্যে ছিলাম। ট্রেন থেকে নেমে ডেডবডি দেখে ভয়ও পেয়েছিলাম। তিনি এদিন স্পষ্ট বলেছেন এটা সম্পূর্ণ রেলের গাফিলতি। না হলে একই লাইনে দুটো ট্রেন কিভাবে চলে আসে? তিনি বলেছেন, রেল যাত্রা মানে জীবন হাতে নিয়ে ট্রেনে চড়া। তাঁর সাথে ছিল স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে সকলেই চরম আতঙ্ক নিয়ে বাড়ি ফিরছেন।
জামালপুরের মান্তি ঘোষ বলেছেন, আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম, কোলে বাচ্ছা ছিল। হঠাৎ প্রচন্ড ধাক্কাতে ছিটকে পড়লাম। আমার বাবাও পড়ে গেলেন সিট থেকে। পড়ে দেখলাম আমাদের ট্রেনের বগি এস এন ফাইভ ট্রেন থেকে আলাদা হয়ে গেছে। তখন বৃষ্টি পড়ছিল হেঁটে গিয়ে সামনে ট্রেন দুর্ঘটনা দেখে এখনো আতঙ্কে আছি। ট্রেন যাত্রা যেন আমার কাছছে বিভিষিকার মতো হয়ে উঠেছে। এখন আমাকে আতঙ্ক যেন তাড়া করে ফিরছে। বাড়ি ফেরা না পর্যন্ত মন বড় ভারাক্রান্ত। কত মানুষ মরেছে জানিনা। তবে রেলের যাত্রী সুরক্ষা আরো বাড়ানো উচিত।
আরো এক দুর্ঘটনা কবলিত যাত্রী কল্যান মুখার্জি বলেছেন, সকাল থেকেই খুবইই টেনশনে আছি। কিভাবে বাড়ড়ি ফিরবো। যাক, রেল দপ্তর ঘোষণা করলো এই ট্রেন যাবে তারপর থেকেই মনে নানা দুশ্চিন্তা। ভাল করে খাবার খেতে পারিনি। খাবার তেমন কিছু ছিলও না। তার উপর উপরের সিটে শুয়ে ছছিলাম সেখান থেকে ছিটকে পড়ে গোটা শরীরের গা গতর খুব ব্যাথা। বুজে উঠতে পারিনি, খুব জোর ধাক্কা অনুভব করেছি। কতজন মারা গেছে জানিনা তবে চোখের সামনে আহতদের আর্তনাদ আমার হৃদয়কে বিচলিত করে তুলেছিল। এমনই একাধিক যাত্রী এদিন তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা যেমন শুনিয়েছেন তেমনই রেল’র সুরক্ষা বা নিরাপত্তা ব্যবস্থা যে একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে সে কথাও বলেছেন তীব্র ক্ষোভের সাথে। বছর বছর রেল দুর্ঘটনা হবে আর মানুষ মারা যাবে ছারপোকার মতো এ জিনি আর কত দিন চলবে? অনেক যাত্রী বলেছেন, স্টেশন রং করে ঝা চকচকে করলে হয়না সব থেকে লাখ টাকার প্রশ্ন যাত্রী সুরক্ষা একেবারে তলানিতে ঠেকেছে জনগনের কাছে তার কৈফিয়ত দিক রেল। দুর্ঘটনা হয়, যাঁরা অপরাধী তারা ছাড়া পেয়ে যায়, তদন্ত ধামাচাপা পড়ে আবার একটা দুর্ঘটনা মনে করিয়ে দেয় এ দেশে রেল যাত্রা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ।
Comments :0