Editorial

হিন্দুত্ববাদী হলে সাত খুন মাপ

সম্পাদকীয় বিভাগ

ফ্যাসিস্ত চরিত্রের জায়নবাদী ইজরায়েল তাদের রাজ্যের পরিসর প্রসারের লক্ষ্যে সমগ্র প্যালেস্তাইন ভূখণ্ড দখলের হিংস্র অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে। পৈশাচিক হামলা চালিয়ে প্যালেস্তাইনবাসীদের খুন করে এবং ভিটে মাটি ছাড়া করে একের পর এক প্যালেস্তাইনি ভূখণ্ড দখল করে চলেছে ইজরায়েলের উগ্র, হিংস্র জাতীয়তাবাদী শাসক। ইজরায়েলের এই নির্বিচার গণহত্যাকে শুধু মদত নয় স‍‌র্বোতোভাবে সাহায্য করে যাচ্ছে ফ্যাসিবাদে প্রাণিত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এবং তাদের দোসর পশ্চিমী দুনিয়ার সাম্রাজ্যবাদীরা। বস্তুত মার্কিন রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, আর্থিক, সামরিক ও স্ট্র্যাটেজিক সাহায্য ও সহযোগিতা না পেলে ইজরায়েলের পক্ষে এক পাও এগনো সম্ভব হতো না।
ইজরায়েলী গণহত্যাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমী দুনিয়া যেভাবে বৈধতা দিয়ে যাচ্ছে অনেকটা সেভাবেই ভারতের বুকে হিন্দুত্ববাদ ও হিন্দু সাম্প্রদায়িকতাবাদের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত মুসলিম, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের এমনকি দলিত-আদিবাসীদেরও নৃশংসভাবে খুন করাকে বৈধতা দিতে চাইছে এদেশের হিন্দুত্ববাদী শাসকরা। আধুনিক সভ্য মানব মানব সমাজের যে প্রধান বৈশিষ্ট্য মানবিকতা তাকেও চিরতরে বিসর্জন দিচ্ছে মানবতাবিরোধী অমানবিক হিন্দুত্ববাদীরা।
সঙ্ঘ পরিবারের গেরুয়াবাহিনী ধর্মান্ধ হিন্দুত্ববাদী মানসিকতা প্রসারের লক্ষ্যে যেকোনও ধরনের অপরাধ, নৃশংসতা, বর্বরতা, অমানবিকতাকে আশ্রয় করতে পারে। তারা ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়াতে পারে ভিন্ন ধর্মের ধর্ম ধর্মস্থান আক্রমণ করতে পারে, ধ্বংস করতে পারে। অন্যদের ধর্মাচরণে বাধা দিতে পারে, এমনকি বন্ধও করতে পারে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর যেকোনও অজুহাতে হামলা চালাতে পারে, এমনকি খুনও করতে পারে, অর্থাৎ হিন্দুত্বের প্রসারে যেকোনও ধরনের অপরাধ তা সে যত নৃশংস ও যত পৈশাচিকই হোক না কেন, হিন্দুত্ববাদীদের কাছে বৈধতা পায়। তাই হিন্দুত্ববাদী শাসকের কাছে গেরুয়া অপরাধীরা সম্মানিত হয়। তাদের গুরু অপরাধকে লঘু অপরাধ হিসাবে দেখে মার্জনা করা হয়। অর্থাৎ হিন্দুত্ববাদী শাসকের কাছে তারা প্রশ্রয় পায়, নিরাপত্তা পায়, উৎসাহ পায়। এমনকি আগে এমন কুকর্মের জন্য আদালতের বিচারে কড়া সাজা হলেও হিন্দুত্ববাদীরা ক্ষমতায় এসে সেই সাজা মকুব করে দেয়।
প্রায় ২৬ বছর আগে ওডিশায় হিংস্র গেরুয়া বাহিনী অস্ট্রেলীয় মিশনারি গ্রাহাম স্টেইন এবং তাঁর দুই নাবালক পুত্রকে গাড়ির মধ্যে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে। সেই ঘটনার অপরাধী মহেন্দ্র হেমব্রম এবং গেরুয়া পান্ডা দারা সিংয়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। এতকাল তারা জেলেই ছিলেন। সম্প্রতি ওড়িশায় ক্ষমতায় আসে হিন্দুত্ববাদী আর এস এস-বিজেপি। ক্ষমতায় এসেই হিন্দুত্ববাদী খুনিদের পুরস্কৃত করার সিদ্ধান্ত নেয়। যথারীতি মুক্তি পায় হেমব্রম। শীঘ্রই মুক্তি পাবে দারা সিং। মুক্তি পর সঙ্ঘ পরিবারের ধর্মান্ধ গেরুয়াবাহিনী হেমব্রমকে মালা পরিয়ে বিজয় মিছিল করে; ঘটা করে সংবর্ধনাও দেয়। একইভাবে গুজরাটের হিন্দুত্ববাদী সরকার বিলকিস বানুর পরিবারের ১১ জনের খুনিদের  মুক্তি দিয়েছিল। তার আগেই অবশ্য নানা অজুহাতে খুনিদের প্যারোলে জেলের বাহিরে থাকার ব্যবস্থা করেছিল। হরিয়ানায় এক ধর্ষক খুনি ধর্মগুরুকেও একই কায়দায় হরিয়ানার হিন্দুত্ববাদী সরকার বেশিরভাগ সময় প্যারোলে জেলের বাইরে রাখছে। এটাই হিন্দুত্ববাদী আরএসএস-বিজেবি’র চরিত্র। হিন্দুত্ববাদী ক্ষমতার রাজনীতির স্বার্থে তারা যেকোনও অপরাধকে বৈধতা দিতে দ্বিধা করে না। এমনকি সেই অপরাধীকে সম্মানিত করতেও দ্বিধা করে না।
 

Comments :0

Login to leave a comment