Police Order Rejected

পুলিশি নির্দেশ খারিজ, যৌথ মঞ্চের অভিযানে অনুমতি হাইকোর্টের

রাজ্য

High Court Nabanna

যৌথ মঞ্চের নবান্ন অভিযানকে শেষ পর্যন্ত ঠেকাতে পারলো না রাজ্য সরকার।
প্রশাসনিক নির্দেশিকা জারি করে নবান্ন অভিযানকে অনুমতি দিতে চায়নি সরকার। হাওড়া পুলিশের সেই নির্দেশিকা চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে যৌথ মঞ্চ। মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা প্রশাসনের ভূমিকাকে কার্যত কাঠগড়ায় তুলে খারিজ করে দিয়েছেন সরকারি নির্দেশিকাকে। একইসঙ্গে হাওড়া ফেরিঘাট থেকে নবান্ন অভিযানের মিছিল কোন পথে যাবে সেটাও জানিয়ে দিয়েছেন বিচারপতি।


এদিন আদালতে বিচারপতি তাঁর একের পর এক পর্যবেক্ষণে সরকারকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, শাসকদল কর্মসূচি নিলে প্রশাসন একরকম ভাবে। আর বিরোধী হলে প্রশাসন উলটো রাস্তা নেয়। ‘‘৩০ থেকে ৪০টি মামলা আমার কাছে এসেছে মিছিল করার অনুমতি চেয়ে। কেন আদালতকে বারবার হস্তক্ষেপ করতে হবে?’’ পর্যবেক্ষণে মন্তব্যে করেছেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। আগামীদিনে যে কোনও কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে প্রশাসন কী ভূমিকা পালন করবে তারও গাইডলাইন তৈরি করে দিয়েছেন বিচারপতি। 
হাইকোর্টের এই রায়কে নবান্ন অভিযানের আগে কর্মচারীদের স্বার্থে বড় জয় হিসাবেই দেখছেন সরকারি কোষাগার থেকে বেতন প্রাপক শ্রমিক কর্মচারীদের যৌথ মঞ্চ। মঞ্চের অন্যতম নেতা, রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ গুপ্ত চৌধুরি জানিয়েছেন,‘‘ হাইকোর্ট থেকে রাজ্য পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশিকাকে বরখাস্ত করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের পরিকল্পনায় নবান্ন অভিযানে ১০ হাজার শ্রমিক কর্মচারীর অংশগ্রহণ করার কথা ছিল। জেলা থেকে যে খবর আসছে তাতে সংখ্যাটা ২৫ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।’’


যৌথ মঞ্চের তরফে মামলার অন্যতম আইনজীবী শামিম আহমেদ জানিয়েছেন, ‘‘সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগের জন্য পুলিশের অনুমতি নেওয়ার কার্যত কোনও প্রয়োজন নেই। আদালত এদিন সরকারের নবান্ন অভিযান বাতিলের নির্দেশিকাকে বরখাস্ত করে দিয়েছে।’’ শহীদ মিনারে অবস্থানরত সংগ্রামী যৌথ মঞ্চও বকেয়া মহার্ঘভাতা, স্বচ্ছতার সঙ্গে শূন্যপদ পূরণের দাবি নিয়ে ৬ মে হাজরা থেকে মিছিলের ডাক দিয়েছে। হাজরা মোড় থেকে কালীঘাট এলাকা, হরিশ চ্যাটার্জি রোড ঘুরে ফের হাজরা মোড়ে জনসভা করবে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। এই কর্মসূচিতেও এখনও অনুমতি নিয়ে গড়িমসি করছে পুলিশ প্রশাসন। ফলে আদালতে দ্বারস্থ হয়েছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের অন্যতম আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ জানিয়েছেন, ‘‘৪ মে নবান্ন অভিযান কর্মসূচিতে আমাদের নেতৃত্ব উপস্থিত থাকবেন।’’ যৌথ মঞ্চের নেতা বিশ্বজিৎ গুপ্ত চৌধুরি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছেন, ‘‘কর্মচারী স্বার্থে যে কোনও আন্দোলনকে আমরা সমর্থন করি। দুটি পৃথক কর্মসূচি হলেও ৪ মে’র নবান্ন অভিযানে আমরা ওঁদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। একইসঙ্গে ৬ মে মিছিলে ওঁরাও আমাদের যোগ দিতে আহ্বান করেছেন।’’


বকেয়া ডিএ, শূন্যপদে স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ, অনিয়মিত কর্মচারীদের স্থায়ীকরণের সঙ্গে বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে ৪ মে নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে যৌথ মঞ্চ। হাওড়া ফেরিঘাট থেকে নবান্ন অভিযানের কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা। নবান্ন অভিযানের প্রস্তুতির অঙ্গ হিসাবেই গত ২৪ এপ্রিল হাওড়া সিটি পুলিশের কমিশনারকে চিঠি দিয়ে কর্মসূচি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে অবহিত করা হয়। কিন্তু ৫ দিন পর গত ২৯ এপ্রিল হাওড়া পুলিশ কমিশনারের তরফে এক অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদমর্যাদার আধিকারিক চিঠি দিয়ে জানান, এই কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া যাচ্ছে না।

 


পুলিশের যুক্তি, নবান্ন চত্বরে ১৪৪ ধারা জারি থাকার জন্য কোনও মিটিং, মিছিল ও সভা করার অনুমতি দেওয়া যায় না। একইসঙ্গে হাওড়া ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ার দরুন এই অনুমতি বাতিল করা হচ্ছে। এছাড়া ওই দিন স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত সব খোলা থাকছে, তাই বাতিল করা হচ্ছে অনুমোদন। তার থেকেই ওই চিঠিতে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারী হওয়ার জন্য এই মিছিল আয়োজন করার জন্য তাঁরা কি আদৌ ‘উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ’র অনুমোদন নিয়েছেন? বাতিলের এই চিঠি হাতে আসার পর ক্ষুব্ধ কর্মচারী আন্দোলনের নেতৃত্ব প্রশ্ন তুলেছেন, সরকারি কর্মচারী হিসাবে তাঁদের আন্দোলন এমনকি ধর্মঘট করার অধিকার নিশ্চিত করেছে ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্ভিস রুল। তার পরেও কীসের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ? এরাজ্য প্রশাসন কি স্বৈরতন্ত্রের দিকে এগচ্ছে?


প্রশাসনের এই ফতোয়ার বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আন্দোলনকারী যৌথ মঞ্চ। সেই মামলাতেই এদিন বিচারপতি সরকারি নির্দেশিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন,‘‘এরা আপনাদের অর্থাৎ রাজ্য সরকারি কর্মচারী। এরা কী চাইছেন? মহার্ঘভাতা। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করলে অসুবিধা কোথায়? বিরোধিতা করা বা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করা মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারেন, কিন্তু শান্তিপূর্ণ মিছিল বন্ধ করতে পারেন না।’’ নবান্ন অভিযানের অনুমতি বাতিল করতে গিয়ে পুলিশ জানিয়েছিল, হাওড়ার ওই এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ। ওই দিন স্কুল, কলেজ অফিস আদালত সব খোলা থাকবে। ফলে ওই পথে মিছিলের অনুমতি দিলে স্কুল ছাত্র-ছাত্রী ও অফিস যাত্রীরা সমূহ সমস্যার মধ্যে পড়বে। নির্দেশিকায় নবান্ন অভিযান বাতিলের এই কারণকে কার্যত উড়িয়ে দিয়ে বিচারপতি সরকারি আইনজীবীর কাছে জানতে চেয়েছেন,‘‘ আপনারা যখন রেড রোডে মিছিল, সভা করার অনুমতি দেন তখন এক ধরনের অবস্থান গ্রহণ করেন। আর বিরোধীরা যখন কর্মসূচি নেয় তখন অন্য ধরনের ভূমিকায় দেখা যায়। এটা কেন?


বিচারপতি তাঁর পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেছেন, আগামী দিনে কোনও কর্মসূচির জন্য প্রশাসনের কাছে অনুমোদনের জন্য আসলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার উত্তর দিতে হবে। ন্যূনতম ১০ দিন আগে মিটিং সভার অনুমতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। স্বচ্ছতার স্বার্থে অনুমতির চিঠি পুলিশকে অনলাইনে আপলোড করে দিতে হবে। যা দেখে অন্যান্য সংগঠন তাদের মিটিং মিছিলের দিন ও সময় ঠিক করতে পারে।

Comments :0

Login to leave a comment