বিশ্বনাথ সিংহ: রায়গঞ্জ
দিনকয়েক আগে বেঙ্গালুরুতে কাজে গিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলার ৭ পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে অগ্নিদগ্ধ হয়ে। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মৃত পরিযায়ী শ্রমিকের নাম সের আলি(১৮)। উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ ব্লকের ৭ নম্বর শীতগ্রাম পঞ্চায়েতের মহিগ্রামের বাসিন্দা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সের আলি হাই স্কুলের পাট চুকিয়ে দিয়ে সংসারের অভাব দূর করতে গোয়ায় গিয়েছিল ঠিকাদারের হাত ধরে। কাজ করতেন বেসরকারি সংস্থার গ্যাস গোডাউনে। একমাস আগে তাঁর রোজগারের কিছু টাকা বাড়িতে পাঠিয়ে ছিলেন। তা দিয়েই চলে তাদের সংসার। কারণ যুবকের বাবা খেত মজুর। সংসারে অভাব ছিল। রাজ্যে কাজ নেই। তাই পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে ভিন রাজ্যে কাজের সন্ধানে বেড়িয়ে পড়ে সের আলি। পরিবার সূত্রে জানা গেছে গত ১৭ অক্টোবর বিকেলে গোয়ার লঞ্চে করে গ্যাস গোডাউন থেকে সিলিন্ডার নিয়ে যাওয়ার সময় লঞ্চে আগুন লাগে। সেই আগুনে আরও কয়েক জন্যের সঙ্গে রায়গঞ্জের সের আলির মৃত্যু হয়। ওইদিন সন্ধায় মৃত্যুর খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামের ছেলের মৃত্যুর খবরে গোটা গ্রাম শোকস্তব্ধ হয়ে যায়।
কাঁদতে কাঁদতে নিহত যুবকের প্রতিবেশী কাকিম জানালেন কয়েকদিন আগেও স্কুলে যাচ্ছিলো। সেই ছেলের ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। ছেলের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন বাবা মা। পরিবারের এক সদস্য বলেন, শের আলি মাস দুয়েক আগে গোয়াতে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করতে গিয়েছিল। সেখানে গত ১৭ অক্টোবর সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। শের আলি সহ আরও ৬ জন ছিলেন। টাকার অভাবে মৃতদেহ বাড়ি আনতে পারছি না। তাঁর অভিযোগ সহযোগিতার জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত, এলাকার বিধায়ককে জানানো হয়েছে। কিন্তু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়নি পঞ্চায়েত ও বিধায়ক। মৃতদেহ শেষ পর্যন্ত আনতে পারবে কিনা তা নিয়ে ধোঁয়াশায় পরিবার।
মৃত যুবকের বাবাকে একাধিকবার বলতে শোনা যায় ছেলের দেহ আনবো কি করে। এবার সংসার চলবে কি করে। দু দিন কেটে গেছে তবুও দেহ বাড়ি ফিরলো না।
অন্ততঃ ছেলের মৃতদেহ একবার ছুঁয়ে শান্তি পেতে চান মা। না কেউ কথা রাখেনি। তৃণমূল পরিচালিত শীতগ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য থেকে প্রধান এমনকি হেমতাবাদ বিধানসভা থেকে জেতা মন্ত্রীকে ফোন করে ঘটনা জানিয়ে ছেলের মৃতদেহ আনার বন্দোবস্তো করতে বললেও কাজ হয়নি। প্রশাসনের কাছেও প্রতিবেশীরা আবেদন করেছেন শেষবারের মত মৃত সের আলির দেহ নিয়ে আসার জন্যে। কোনো সহযোগীতা নেই। ছেলের নিথর দেহ গ্রামে আসবে কিনা সেই আশঙ্কায় পরিবার।
Comments :0