গল্প | মুক্তধারা
চেতনার জাগরণ
নীল মিত্র
সুজয় খবরের কাগজের একটা ঘটনা দেখে থমকে গেল, একজন যুবক চাকরিপ্রার্থী কাল বিকাশ ভবনের সামনে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে নিজেকে। দুই বছর আগে শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছে নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিল, কিন্তু এখন অব্দি চাকরি পায়নি।
বর্তমান সরকারের কাছে বহু আবেদন করেও কোনো ফল হয়নি। এরকম অনেক যুবক -যুবতি আছে যারা এখন অনশন ধরনা দিয়ে বসে থাকে, সুজয় রোজ যাতায়াতের পথে তাদের দিকে তাকিয়ে দেখে। সুজয় রাজ্য সরকারের একজন উচ্চপদস্থ অফিসার। তার বাড়িতেও একটি মেয়ে আছে, আগামী বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। এই ঘটনাটা পড়ে সুজয়ের বিবেক দংশন শুরু হল, আগামী দিনে তো তার মেয়েটিও চাকরির পরীক্ষাগুলো দেবে!
আজ সারাদিন অফিসে বসে কোনো কাজেই তার মন বসছিল না। শেষে ঠিক করল মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠাবে। খুব মার্জিত ভাষায় লিখে ফেলল একটি চিঠি, সেই চিঠির সাথে তার ইস্তফাপত্রটিও পাঠিয়ে দিল।
দুদিন পর তার ডাক এল নবান্ন থেকে। নবান্ন যাওয়ার পথে আবার একবার দেখে গেল সেই চাকরিপ্রার্থীদের যারা বসে আছে রাস্তার উপর।
"ম্যাডাম, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আজ দিনের পর দিন তাদের সোনালি সময় নষ্ট করছে রাস্তায় বসে, তাই আমি ইস্তফা দিতে চাই যাতে আমার জায়গায় একটি নব যুবক বা যুবতি চাকরি পায়।" তার এই বক্তব্য শুনে মুখ্যমন্ত্রী তাকে আশ্বস্ত করলেন যে তিনি নিশ্চয়ই এই ব্যাপারে ভেবে দেখবেন ও তার ইস্তফাটি ফেরত দিয়ে দিলেন।
এই ঘটনার কিছু দিন পর সরকার থেকে একটি ঘোষণা হল _সরকার অতি শীঘ্র পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সমস্ত প্রার্থীদের চাকরির ব্যবস্থা করবেন, আর যতদিন তা না -হচ্ছে ততদিন একটি ভাতা প্রদান করা হবে তাদের।
আজ খবরে এই ঘোষণা দেখে সুজয় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, তার বুকের চাপটা আজ একটু কমল। নবজাগরণের নতুন সূর্যের দিকে তাকিয়ে প্রণাম করল সূর্য।
Comments :0