গল্প | নতুনপাতা
বসন্তের দূত
সৌরীশ মিশ্র
রবিবারের দুপুর।
দোতলায় নিজের ঘরে বিছানায় আধশোয়া হয়ে কয়েকদিন আগে বইমেলা থেকে কেনা একটা রহস্য উপন্যাস পড়ছিল তাতা। পাশের বিছানায় ঘুমোচ্ছে ওর কাকা ত্রিদিব।
গল্পের বইটা শেষ হতে মাত্র কয়েকটা পাতা মোটে বাকি। টানটান সাসপেন্স চলছে এই মুহূর্তে গল্পটায়। তাতেই একেবারে ডুবে ছিল তাতা।
হঠাৎই তখুনি, ডেকে উঠল একটা কোকিল ওদের বাড়ির ঠিক পিছনের বাগানটা থেকে- "কু-উ... কু-উ..."।
বিছানায় ধড়ফড় করে উঠে বসল তাতা। কোকিল ভাকল! হ্যাঁ, কোকিল-ই তো। মনে মনে নিজেকেই কথাগুলো বলে তাতা। বইটার যে পাতাটা পড়ছিল, ওতে একটা বুকমার্ক ঢুকিয়ে, বিছানাতেই বইটা রেখে উঠে পড়ল সে।
ফাল্গুন মাস ইতিমধ্যেই পড়ে গিয়েছে। অর্থাৎ, ক্যালেন্ডারের হিসেব অনুযায়ী, বসন্ত কাল-ও এসে গিয়েছে। কিন্তু, এর মধ্যে একটি বারের জন্যও তাতা শুনতে পায়নি 'বসন্তের দূত'-এর ডাক। এই বছর এই প্রথমবার শুনল সে তা।
ঘরের, বাগানের দিকের জানলাটা খোলাই ছিল। তাতা গিয়ে দাঁড়াল জানলাটার সামনে। বাগানের এইদিকটায় অনেকগুলো বিশাল বিশাল আমগাছ আছে। তাতা বুঝতে পারে, তারই কোনো একটিরই ডালে বসে ডেকেছে নিশ্চয়ই কোকিলটা। না হলে, এতো কাছ থেকে ডাকটা শোনা যেত না। কিন্তু, এখনও কি আছে সে বাগানে? লুকিয়ে আছে আমগাছগুলোর অজস্র পাতার আড়ালে কোথাও? না কি, উড়ে গিয়েছে অন্য কোথাও ইতিমধ্যেই। এই সব কথা ভিড় করে আসছিল তাতার মনে একের পর এক। এইসব ভাবছে যখন ও, তখনই, ফের ডেকে উঠল কোকিলটা। আর, তাতারও তখনই চোখে পড়ল, বাঁদিকের ঝাঁকড়া আমগাছটার একটা ডালে পাতার ফাঁকে পাখিটাকে। ইতি-উতি তাকাচ্ছে কোকিলটা। কাউকে কি খুঁজছে ও! প্রশ্নটা মাথায় আসে তাতার।
কয়েকক্ষণ ধরে দেখতেই থাকে কোকিলটাকে তাতা। কোকিলটা ফের ডেকে ওঠে সুমধুর তানে।
"কোকিল দেখছিস?" কাকার কণ্ঠস্বর।
তাতা এতো মুগ্ধ হয়ে দেখছিল পাখিটাকে যে কখন ওর কাকা যে এসে দাঁড়িয়েছেন তার ঠিক পিছনে খেয়ালই করেনি ও।
"হ্যাঁ গো কাকাই। কি সুন্দর করে ডাকছিল গো।"
"দেখে নে, শুনে নে, এখনই। আর কতোদিন শোনা যে যাবে বিশেষ করে এই শহরাঞ্চলে কোকিলের ডাক সন্দেহ হয় রে খুব। যে ভাবে চারিদিকে বড় বড় গাছ কাটা হচ্ছে। মনটা খারাপ হয়ে যায় রে তাতা খুব মাঝে মাঝে।" একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন ত্রিদিববাবু।
কাকার কথাটা শুনে তাতারও মনটা বিষণ্ণ হয়ে যায় মুহূর্তে।
আর তখুনি, পাখিটাও ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে যায় কোথায় যেন!
Comments :0