অনিল কুণ্ডু: পাথরপ্রতিমা
গরিবের অধিকারের দাবিতে যত লড়াই চলছে সেগুলিকে শেষপর্যন্ত সফল করতে হলে লড়াইকে বুথে নিয়ে যেতে হবে। বুথে বুথে ভোট লুট রুখতে এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। মঙ্গলবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমার রামগঙ্গায় বিরাট কৃষক সমাবেশে এই আহবান জানিয়ে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, কৃষক খেতমজুরের দাবি, কাজ, খাদ্য, আবাস, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের জন্য লড়াই হবে। কিন্তু এই সব লড়াই টেনে নিয়ে যেতে হলে বুথের লড়াই লড়তে হবে। বুথ থেকে ভূত তাড়াতে হবে।
তিনি বলেছেন, ছ’মাস পরে ভোট হবে, তার প্রস্তুতি এখন থেকে নিতে হবে। দাঁতে দাঁত চেপে বুথভিত্তিক সংগঠন করতে হবে। ভোটার তালিকায় যাদের নাম নেই, তাঁদের নাম তুলতে হবে। ভুয়ো ভোটার, মৃতদের নাম বাদ দিতে হবে। মোদী, অমিত শাহরা এসআইআর’র নাম করে নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিতে চাইছে। আর মমতা ব্যানার্জি পঞ্চায়েত পৌরসভার মতো ভোট লুট করে ক্ষমতা কায়েম রাখতে চাইছে। গরিবের অধিকার আদায়ের লড়াইতে সফল হতে হলে, বুথের লড়াইতে প্রস্তুত হতে হবে।
সারা ভারত কৃষকসভার দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা ৩০তম সম্মেলন হবে আগামী ১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর পাথরপ্রতিমা ব্লকের রামগঙ্গায়। এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করেই এদিন রামগঙ্গায় প্রকাশ্য সমাবেশের আয়োজন করা হয়। গোটা পাথরপ্রতিমা ব্লক লাল ঝান্ডায় ভরে গিয়েছে কৃষকসভার সম্মেলন ঘিরে। এদিনের কৃষক সমাবেশে মহম্মদ সেলিম ছাড়াও বক্তব্য রাখেন কৃষকসভার রাজ্য সম্পাদক অমল হালদার, শতরূপ ঘোষ, বন্যা টুডু, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কৃষকসভার সম্পাদক অলোক ভট্টাচার্য, সত্যরঞ্জন দাস প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন জেলা কৃষকসভার সভাপতি রামশঙ্কর হালদার। সমাবেশ মঞ্চে শহীদ কমরেডদের স্মরণে গান করেন প্রবীণ কৃষকনেতা সঞ্জয় পূততুণ্ড।
মোদী সরকার কিভাবে দেশজুড়ে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে এবং মমতা ব্যানার্জির সরকার কিভাবে এরাজ্যে মানুষের অধিকার কেড়ে দুর্নীতি চালাচ্ছে তার উল্লেখ করে সমাবেশে সেলিম বলেন, মমতা ব্যানার্জির নির্দেশে তৃণমূলের ঝান্ডা হাতে শুভেন্দু অধিকারী বাংলার বুকে লাল নিকেশ করে দিতে চেয়েছিলেন। এখন সেই শুভেন্দু তৃণমূলের ঝান্ডা দিয়ে অমিত শাহের চেয়ার মুছে দিয়ে বিজেপি’র নেতা হয়েছেন। এই তৃণমূল ও বিজেপি’র হাতে বাংলায় শুধু সিপিআই(এম) কর্মীরা আক্রান্ত হননি, সাধারণ মানুষের অধিকার লুট হয়ে গেছে, মহিলাদের নিরাপত্তা চলে গিয়েছে। বাংলার সুনাম ধংস করে দিয়ে তৃণমূলের হাতে পশ্চিমবঙ্গ এখন যোগী শাসনের উত্তর প্রদেশের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে।
সেলিম বলেছেন, যারা মানুষের ভোট লুট করে বিধানসভায় সিপিআই(এম)’কে ‘শূন্য’ করেছে, তারাই ‘লাল ঝান্ডা নিকেশ’ বলে বিদ্রুপ করছে। তারাই আবাস যোজনার টাকা, একশো দিনের কাজের টাকা লুট করেছে, চাকরি চুরি করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার এর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে বরাদ্দ বন্ধ করে মানুষকে শাস্তি দিচ্ছে। দুর্নীতি অপরাধের পিছনে থাকা পিসি-ভাইপো’র দিকে সিবিআই ইডি হাতও বাড়াচ্ছে না। ওদের ভয়, তৃণমূলকে বিপদে ফেললে লাল ঝান্ডার শক্তি মাথা তুলবে। এটা কৃষক খেতমজুর শ্রমিকদের লড়াইয়ের ঝান্ডা। বামফ্রন্ট সরকার পঞ্চায়েত পৌরসভার মাধ্যমে মানুষকে অধিকার দিয়েছিল, এখন মমতা ব্যানার্জি ভোট লুট করে সেগুলি ধংস করে আইপ্যাককে দিয়ে ‘পাড়ায় সমাধান’ নামিয়ে নিজের দলকে বাঁচাতে নেমেছেন। আর বিজেপি হিন্দু মুসলিম ভাগাভাগি করছে। লাল ঝান্ডার লড়াই হিন্দু বনাম মুসলিমের নয়, বাঙালি বনাম অবাঙালির নয়। লাল ঝান্ডার লড়াই শোষণের বিরুদ্ধে, মজুরি, কাজ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের দাবিতে।
সভায় অমল হালদার বলেন, বাংলার গ্রামে জোয়ান ছেলেদের কাজ নেই। বাঁচার জন্য দল বেঁধে অন্য রাজ্যে চলে যাচ্ছে কাজের জন্য। পশ্চিমবঙ্গের গ্রামের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে, গঞ্জগুলিতে বাজার ভিনরাজ্য থেকে পাঠানো টাকায় চলছে। কয়েকটা শপিং মলে কিছু মানুষের ভিড়, সাধারণ মানুষের ভিড় নেই পুজোর বাজারে। একটা লাঠি সহজে ভাঙা যায়, কিন্তু দশটা লাঠি একসঙ্গে থাকলে ভাঙা যায় না। বাঁচতে হলে মানুষকেও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বন্যা টুডু বলেন, ১ তারিখ থেকে গ্রামে একশো দিনের কাজ শুরুর কথা ছিল। কোথায় গেলো কাজ? মানুষ কোথায় অভিযোগ জানাবে? পঞ্চায়েত অফিস বিডিও অফিস থানাগুলোকে তো তৃণমূলের পার্টি অফিস বানিয়ে রেখেছে।
শতরূপ ঘোষ বলেন, লাল পতাকা হাত থেকে নামাতে রাজি হননি বলে আমাদের বহু কমরেড শহীদ হয়েছেন। তাদের লড়াইকে মিথ্যা হতে দেওয়া যাবে না। বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে নিয়মিত স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা হয়ে নিয়োগের তালিকা প্রকাশ হতো। এখন সরকার চাকরি হারানোর তালিকা প্রকাশ করছে। এই বেআইনি নিয়োগে যারা টাকা নিয়েছিল তারাই আসল দাগি, তাদের নামের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। :
Ramganga Salim
গরিবের লড়াই সফল করতে বুথে লড়াই গড়ুন: সেলিম

×
মন্তব্যসমূহ :0