Expired Drug Medinipur

মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ খেয়ে অসুস্থ শিশু সঙ্কটজনক

জেলা

  কেশপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে দেওয়া মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ খেয়ে ৯মাসের শিশুটি সঙ্কটজনক অবস্থায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন।  
কেশপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দেওয়া মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ খেয়ে বেহাল অবস্থায় মঙ্গলবার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শিশুটিকে আবার নিয়ে এলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি সেই ওষুধ পরিবর্তন করে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু সেদিন রাত থেকেই শিশুটি কখনো কালো, কখনো রক্ত পায়খানা করায় আরও কাহিল হয়ে পড়ার ঘটনায় এলাকায় শোরগোল। রাত তিনটায় কেশপুর হাসপাতালে তাকে নিয়ে আসা হলে শিশুটির পুনরায় চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় বুধবার রাত ১০টায় শিশুটিকে মেদিনীপুর মেডিক্যাশলের শিশু বিভাগে স্থানান্তরিত করা হয়েছে সংকটজনক অবস্থায়।
এই ঘটনায় চিকিৎসায় অবহেলা, এবং সরকারি ওষুধ খেয়ে শারীরিক অবস্থার অবনতি সহ সংকটজনক হওয়ায় ওষুধের গুণমান নিয়ে সন্দেহ সহ মেদিনীপুর মেডিক্যা লে সেই জাল স্যালাইন ও নিম্নমানের ১৩টি ভেজাল ওষুধ কারবারের অভিযোগকে উসকে দিয়েছে। 
কেশপুর ব্লকের আনন্দপুর থানার ইকড়া গ্রামের বাসিন্দা সেখ আলমগীর হোসেন বলেন, গত সোমবার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দেওয়া সেই ওষুধ দু’বার খাওয়ানো হয়েছিল আমার ৯মাসের ছেলে সেখ জুবাইত হোসেনকে। পরদিন হাসপাতালে এসে সেকথা জানালে কর্তৃপক্ষ সেই ওষুধ পরিবর্তন করে নতুন ওষুধ দিয়ে বলে, এটা খাওয়ালেই ঠিক হয়ে যাবে শিশুটি। কিন্তু আমার ছেলে আরও কাহিল হয়ে পড়ল। 
তিনি বলেন, সোমবার স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকেই ওই মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ দেওয়া হয়েছিল। সেদিন বিকাল ও রাতে দুইবার ছেলেকে ওষুধ খাওয়ানোর পর সে আরও বেহাল হয়ে পড়ে। স্থানীয় এক শিক্ষক সেই ওষুধের ফাইল দেখে বলেন, এটা তো মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ।  পরদিন সাতসকালে শিশুকে আবারো হাসপাতালে আসি। মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে জানানো সত্ত্বেও আমার ছেলের নজরদারি আর চিকিৎসার জন্য কোনও পদক্ষেপ নিল না। ঘরে পাঠিয়ে দিল। দিনমজুর ও ফেরি করে সংসার চালাই। হাসপাতালের উপর ভরসা করেই ফেরি বা কাজ ছেড়ে পরপর দু’দিন এলাম, তা সত্ত্বেও সঠিক চিকিৎসাটুকু হলো না। 
তিনি বলেন, কত করে বললাম, এই ফাইলের ওষুধটা খাওয়ানোর পরই ছেলেটা কাহিল হয়ে পড়েছে। চিৎকার-চেঁচামেচি করছিলাম ওষুধ কাউন্টারে। পুলিশ এসে সেই মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধের ফাইলটা নিয়ে চলে গেল, আর আমাদের ঘর পাঠিয়ে দিল।
এই ঘটনার তদন্ত সহ দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি তুলে বৃহস্পতিবার কেশপুর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক দপ্তরে ছাত্র-যুবরা বিক্ষোভ দেখায় এবং ডেপুটেশন দেয়। জবাব চাওয়া হয় এমন ঘটনা জানানোর পরও শিশুটির নজরদারি ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলো না কেন? ওষুধ পরিবর্তন করে ঘর পাঠিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাকে অমানবিক এবং চিকিৎসার অবহেলার অভিযোগ তুলেছে পরিবারের লোকজন। ঘটনার তদন্ত সহ দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবিও জানিয়েছেন শিশুটির বাবা। 
ছাত্র-যুবরা দাবি করেন, ঐ মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ ফাইলটিকে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। কোনও ভেজাল আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় তার নিরসন প্রশাসনকেই করতে হবে বলে দাবি জানান। 
ইতিমধ্যে মেদিনীপুর মেডিক্যা লে সহ রাজ্যজুড়ে জাল স্যালাইন সহ একাধিক নিম্ন মানের ও ভেজাল ওষুধ কারবার ঘটনায় প্রসূতি সহ শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও রাজ্য সরকার ও স্বাস্থ্য বিভাগের টনক নড়েনি। চরম উদাসীনতার পিছনে ভেজাল ওষুধ কারবার চক্রের সাথে প্রশাসন সহ শাসকদলের নেতামন্ত্রীরা জড়িত থাকার অভিযোগে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ খেয়ে শিশুর কাহিল হয়ে পড়ার ঘটনায় স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে মানুষ আতঙ্কিত।  
এখন শিশুটি সংকটজনক অবস্থায় মেদিনীপুর মেডিক্যাতলে চিকিৎসাধীন। মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ খাওয়ানোর পরও যদি সময়মতো চিকিৎসা পরিষেবার পদক্ষেপ নেওয়া হতো, তাহলে এমন পরিস্থিতি হতো না বলে চিকিৎসকমহলের বক্তব্য।

Comments :0

Login to leave a comment