Salim Siliguri

বাংলায় দুর্নীতির সমান্তরাল অর্থনীতি চলছে: সেলিম

রাজ্য

অনিন্দিতা দত্ত: শিলিগুড়ি 
 

বাংলার অর্থনীতিকে চুরমার করে দুর্নীতির সমান্তরাল অর্থনীতি চালানো হচ্ছে, আর তার মূল স্রোত বইছে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস দিয়ে। টাকা পাচার হচ্ছে বিদেশে। শনিবার শিলিগুড়ি শহরে সিপিআই(এম)’র ডাকা মহামিছিলে অংশ নিয়ে পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম একথা বলেছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের মদত ছাড়া এরাজ্যের শাসকদলের যে এমন লুটেরা রাজনীতি কায়েম করা সম্ভব ছিল না তা জোরের সঙ্গে উল্লেখ করে সেলিম বলেছেন, কালীঘাটের কাকু আগেই বলেছিল ‘আমার সাহেবকে কেউ ছুঁতে পারবে না’। বাস্তবিকই ইডি সিবিআই’র তদন্ত বারে বারে মাথা ধরার আগেই আটকে যাচ্ছে। আদালত বারেবারে প্রশ্ন তুলছে তদন্তের গতি নিয়ে। অন্যদিকে বারেবারে দিল্লি গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক করে আসছেন, আর তৃণমূল স্বস্তি নিচ্ছে। 
 মোদী সরকারের মদতেই দুর্নীতি ও দুষ্কৃতীতন্ত্রকে পশ্চিমবঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সেলিম এবং সেটা ভেঙে জনজীবনের দাবি আদায়ের জন্যই বামপন্থীদের লড়াইয়ের কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, পৌরসভা থেকে পঞ্চায়েত এবং রাজ্য সরকারের সব দপ্তরে, সর্বত্র দুর্নীতি কায়েম করেছে তৃণমূল। নবান্ন পর্যন্ত দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। যে ছেলেমেয়েদের চাকরি করার কথা তাঁরা রাস্তায় আছেন, আর জাল ওএমআর শিট করে অযোগ্যদের চাকরি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তদন্ত কখনোই মাথা পর্যন্ত যাচ্ছে না। বারবার যাতে তদন্ত থমকে না যায় সেকারণেই আগামী ৫ অক্টোবর সিজিও কমপ্লেক্স অভিযান করে ইডি-সিবিআই’কে বাধ্য করতে হবে। 
 এদিন বিকালে শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশনের সামগ্রিক ব্যর্থতা এবং শিলিগুড়িতে পানীয় জলের সমস্যার স্থায়ী সমাধান, আকাশ ছোঁয়া দুর্নীতির প্রতিবাদ সহ সাত দফা দাবিতে সিপিআই(এম)’র শিলিগুড়ি ১নং এরিয়া কমিটির ডাকে মিছিল বের হয়। প্রচুর সংখ্যায় মানুষ শামিল হয়েছিলেন মিছিলে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে, শিলিগুড়ি শহরে আইন-শৃঙ্খলার অবনতির প্রতিবাদে এবং মহিলাদের নিরাপত্তার দাবিতে, অবিলম্বে চার লেনের রাস্তার কাজ দ্রুত গতিতে করা এবং এই প্রকল্পে জমিচ্যুত, বাস্তুচ্যুত, জীবিকাচ্যুতদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, রেলওয়ে জমিতে বসবাসকারী, সরকারি এবং কলোনিতে বসবাসকারীদের বাস্তু পাট্টা দেওয়া, নর্মদাবাগান ও পবিত্রনগর যাওয়ার পথে ভাঙা ব্রিজের পরিবর্তে নতুন ব্রিজ নির্মাণ, প্রধাননগর থানার অন্তর্গত ওয়ার্ডগুলোর এলাকার মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ ডিগ্রি কলেজ স্থাপন ইত্যাদি দাবিতে এদিন বীর জোয়ান মূর্তির সামনে থেকে শ্রীগুরু হাইস্কুল পর্যন্ত মহামিছিল হয়েছে। 
মিছিল শুরুর আগে প্রধাননগর নিবেদিতা রোডে নেতাজি মোড় এলাকায় সভায় সেলিম বলেন, কেন্দ্র এবং রাজ্যের দুই শাসকদল মিলে মানুষের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। শহরের কলোনি বস্তি এলাকায় বসবাসকারীদের অর্জিত অধিকার প্রতিনিয়ত খর্ব করা হচ্ছে। বহু বছর ধরে রেলের জমিতে বসবাসকারীদের উচ্ছেদের চেষ্টা হচ্ছে। কোনও জমি থেকে কাউকে উচ্ছেদ করা চলবে না। বুলডোজাররাজ চলবে না। বামপন্থীরাই জমি রক্ষার লড়াই করে। আর দক্ষিণপন্থীরা নদী, পুকুর, জমি, পাহাড়, জঙ্গল সব কিছু বেচে দিচ্ছে। মোদী সরকার রেল, বিমা সহ গোটা দেশটাকেই বিক্রি করতে চাইছে। তৃণমূল সরকার রাতের অন্ধকারে নদী থেকে বালি পাথর তুলে বেআইনিভাবে বিক্রির ব্যবস্থা করেছে, কয়লা পাচারের ব্যবস্থা করছে। আর বিজেপি সরকার নদী খনি সবই বেচে দিচ্ছে। দুই সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করে নিজেদের অধিকারকে টিকিয়ে রাখতে হবে। 
শিলিগুড়ির নাগরিক পরিষেবার প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, গণপরিবহণ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে, আর মুখ্যমন্ত্রী সেভ ড্রাইভ ও সেভ লাইফ পোস্টার সাঁটাচ্ছেন। কিন্তু মানুষের জীবনের দাম কমে যাচ্ছে। যানজটের কারণে প্রতিদিন সময় নষ্ট হচ্ছে। দূষণের পরিমাণ বাড়ছে। কিন্তু মানুষের জীবন ও জীবিকার সুরাহা করতে কোনও কথা নেই মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর। শুধু শিলিগুড়ি নয়, দেশের যতো টায়ার টু সিটি রয়েছে তাতে প্রত্যেক বছর দুই লক্ষ মানুষ মারা যাচ্ছেন পরিস্রুত পানীয় জল ও নিকাশি ব্যবস্থার অভাবে। পেটের রোগ আন্ত্রিক বাড়ছে। ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া মহামারীর রূপ নিয়েছে। নাগরিক অধিকার রক্ষার জন্যও আন্দোলন করতে হবে।
এছাড়াও সভায় বক্তব্য রাখেন প্রবীণ সিপিআই(এম) নেতা অশোক ভট্টাচার্য ও পার্টির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জীবেশ সরকার। উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম)’র দার্জিলিঙ জেলা সম্পাদক সমন পাঠক, পার্টিনেতা দিলীপ সিং, জয় চক্রবর্তী, মুকুল সেনগুপ্ত, মহিলা নেত্রী স্নিগ্ধা হাজরা প্রমুখ। সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্টির শিলিগুড়ি ১নং এরিয়া কমিটির সম্পাদক লক্ষ্মণ ঘোষ। সভা শেষে মিছিল শুরু হয়। এছাড়াও এদিন সিপিআই(এম)’র শিলিগুড়ি ৪নং এরিয়া কমিটির ডাকে পৃথকভাবে ২৫নং ওয়ার্ডের শিশু উদ্যানের সামনে থেকে মিছিল হয়েছে, অনুরূপ আরও একটি মিছিল হয়েছে পার্টির শিলিগুড়ি ৩নং এরিয়া কমিটির উদ্যোগে। 
এদিন সাংবাদিকরা বিরোধী মঞ্চ ইন্ডিয়া’র সম্পর্কে প্রশ্ন করলে সেলিম বলেছেন, এটা কোনও নির্বাচনী জোটই নয়। লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে রাজ্যে পরিস্থিতি অনুযায়ী লড়াই হবে। বিজেপি সংবিধানটাই তুলে দিচ্ছে, মানুষের জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে, ৪ হাজার কোটি টাকা খরচ করে জি ২০ বৈঠক করেছে অথচ বিদেশ নীতি নষ্ট করে অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করছে। এসব থেকে বাঁচতে বৃহত্তর স্বার্থে একটা ব্লক তৈরি হয়েছে, ইন্ডিয়া। পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর নাম আগাম ঘোষণা করা ‘ইন্ডিয়া’র কোনও অ্যাজেন্ডাই নয়।
‘ইন্ডিয়া’র নাম করে তৈরি করা পোস্টারে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে সিপিআই(এম) নেতাদের ছবি ছাপানো প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, হয় এটা আরএসএস করেছে, নইলে আরএসএস’র বি টিম তৃণমূল করেছে, ওদের লাইন তো একই। সমর্থকদের ধরে রাখতে, বাঁচার জন্য ওদের দুই পক্ষকেই এই ধরনের পোস্টার বানাতে হচ্ছে। 
 

 

Comments :0

Login to leave a comment