Fall of rupee

৯০ ছুঁয়ে ১০০-র পথে

সম্পাদকীয় বিভাগ

ইউপিএ সরকারের আমলে মনমোহন সিং যখন প্রধানমন্ত্রী তখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদী। সেই সময় মার্কিন ডলারের তুলনায় টাকার মূল্য পতনকে কেন্দ্র করে মনমোহন সিং-কে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ সহ তীব্র আক্রমণ করতেন নরেন্দ্র মোদী। এমনকি এই আশঙ্কাও করেছিলেন যে অচিরেই মনমোহন সিংয়ের বয়সকেও ছাড়িয়ে যাবে ডলারের মূল্য। শেষ পর্যন্ত অবশ্য মোদীর প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। মনমোহনের জমানা শেষ হবার সময় তার বয়সের সংখ্যা ডলারের মূল্য থেকে অনেকটাই কম ছিল।
মনমোহনের পর ক্ষমতায় এসেছেন মোদী। ২০১৪ সালে যখন মোদী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন তখন তার বয়স অপেক্ষা ডলারের মূল্য ছিল কম। ইতিমধ্যে তিনি ১১ বছর রাজত্ব চালাচ্ছেন। অর্থাৎ তাঁর বয়সও ১১ বছর বেড়েছে। পাশাপাশি ডলারের নিরিখে যদি টাকার মূল্যের দিকে নজর দেওয়া যায় তাহলে দেখা যাবে মোদীর বয়স বৃদ্ধির থেকে দ্বিগুণ গতিতে বেড়েছে ডলার মূল্য বা কমেছে টাকার মূল্য। মোদী যখন ক্ষমতায় আসেন তখন ডলারের মূল্য ছিল ৬০ টাকা। ১১ বছরের মধ্যে ৯০ টাকা ছুঁয়ে ফেলেছে। অর্থাৎ টাকার মূল্য স্থিতিশীলতায় মনমোহন যতটা সফল মোদী তার থেকে অনেক বেশি ব্যর্থ।
গত ৩ ডিসেম্বর ডলারের মূল্য সর্বকালীন রেকর্ড সৃষ্টি করে ৯০ টাকা স্পর্শ করেছে। তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো এখন টাকার মূল্য পতন নিয়ে মোদী কোনও শব্দ উচ্চারণ করেন না। পাছে মুখ খুললেই অপদার্থতা প্রকাশ পেয়ে যায়। টাকার মূল্য পতন শুধু মার্কিন ডলারের নিরিখেই হয়নি। ব্রিটিশ পাউন্ড, ইউরো, জাপানের ইয়েন, এমনকি চীনের ইউয়ানের তুলনায়ও টাকার মূল্য অনেকটা পতন ঘটেছে। এশিয়ার অন্যান্য বিকাশশীল দেশের মুদ্রার থেকে ভারতের মুদ্রা টাকার পতন হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
টাকার এভাবে ধারাবাহিক মূল্য পতনে শিল্প-বাণিজ্য মহলে উদ্বেগের ছায়া। অর্থনীতিবিদরাও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কা করছেন। মূল্যবৃদ্ধির হার খুব কম থাকা, জিডিপি বৃদ্ধির হার সন্দেহজনকভাবে উচ্চ দেখিয়ে মোদী আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন বটে কিন্তু অন্য সব দিকে পতনের ছায়া কিন্তু প্রকট হচ্ছে। এটা ঠিক টাকার মূল্য কমলে রপ্তানি বাণিজ্যে বাড়তি সুবিধা। কিন্তু অন্যদিকে আমদানি অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে দেশের বাজারে পণ্যমূল্য অতিরিক্ত বেড়ে যায়। তাছাড়া বিদেশি বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ে যা চলতি খাতে (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট) ঘাটতি বাড়িয়ে দেয়। এদিকে বিগত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের মূলধনী বাজারে বিদেশি লগ্নি যতটা আসছে তার থেকে বেশি চলে যাচ্ছে। আবার প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগও কমছে। আমেরিকার চাপানো ৫০ শতাংশ শুল্ক গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এসব নিয়ে কোনও ভাষণ নেই, আলোচনা নেই। মোদীরা ব্যস্ত এসআইআর নিয়ে, বাংলাদেশি খোঁজায়, মোবাইলের মাধ্যমে সব নাগরিকদের উপর নজরদারি চালানোয়।

Comments :0

Login to leave a comment