TMC MANIFESTO

মোদী গ্যারান্টির সঙ্গে মিলিয়ে দিদির শপথ

রাজ্য লোকসভা ২০২৪


দুর্নীতির অভিযোগে রেগায় রাজ্যবাসীকে কোনও কাজ দিতে না পারলেও ইশ্তেহার প্রকাশ করে ৪০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি করার ঘোষণা করল তৃণমূল কংগ্রেস!
বামপন্থীদের সমর্থনে ইউপিএ-১ সরকারের আমলেই দেশে চালু হয়েছে রেগা আইন। এরাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতার আসার পর থেকে গরিব মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চয়তার এই প্রকল্প চলে যায় লুটেরাদের হাতে। এদিন ইশ্তেহার প্রকাশ করে মমতা ব্যানার্জি আবেদন করে বলেছেন, ‘‘ইন্ডিয়া জোটের কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করা মাত্রই এইসব প্রতিশ্রুতি পূরণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকবে তৃণমূল কংগ্রেস ।’’ ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশের আগেই ইন্ডিয়া মঞ্চকে নিয়ে একের পর কটাক্ষ করে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এরাজ্যে কংগ্রেসের ন্যায়যাত্রা যাওয়ার সময় রাহুল গান্ধীকে তীব্র ভাষায় কটাক্ষ করে মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন, কংগ্রেস আগে ৪০টা সিট পেয়ে দেখাক!
বিজেপি’র তরফে ইশ্তেহার প্রকাশ করার পর জনসভাতে আগামী পাঁচ বছরের প্রতিশ্রুতিগুলোকে ‘মোদীর গ্যারান্টি’বলে প্রচার করে বেড়াচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। বুধবার ইশ্তেহার প্রকাশ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপি’র মতোই এদিন ইশতেহার প্রকাশ করে তৃণমূল নেতৃত্ব ১০ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, ‘দিদির শপথ’। মোদীর গ্যারান্টির মতোই ‘দিদির শপথ’রাখা হয়েছে ইশতেহারেও। 
‘দিদির শপথ’-এ প্রথমেই রাখা হয়েছে ১০০ দিনের কাজ নিয়ে। বলা হয়েছে, দেশের সমস্ত জবকার্ড হোল্ডারদের ১০০ দিন গ্যারান্টিযুক্ত কাজ দেওয়া হবে। রেগার কাজের ন্যূনতম মজুরি দেওয়া হবে ৪০০ টাকা। গোটা দেশে নরেন্দ্র মোদীর সরকারের আমলে ১০০ দিনের কাজের বরাদ্দ ভয়াবহভাবে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত বছর কেন্দ্রীয় সরকার রেগার জন্য বরাদ্দ করেছিল ৬০ হাজার কোটি টাকা। তার আগে আর্থিক বছরের সংশোধিত বাজেটে রেগা খাতে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ ছিল ৮৯ হাজার কোটি টাকা। ফলে গত আর্থিক বছরেই রেগার বাজেটে কেন্দ্রীয় সরকার ৩৩ শতাংশ বরাদ্দ ছাঁটাই করেছিল। চলতি বছরেও অন্তর্বর্তীকালীন বাজেটে বাড়ানো হয়নি রেগার বরাদ্দ। 
আসলে বরাদ্দ কমিয়ে রেগা প্রকল্পকে মোদী সরকার গুটিয়ে ফেলতে চায়। তৃণমূলের ইশতেহারে মোদী সরকারের এই প্রবণতা নিয়ে একটি কথাও উল্লেখ করা হয়নি। অথচ বামপন্থীরা বরাবরই রেগার কাজ ১০০ দিনের পরিবর্তে ২০০ দিন করার দাবি করে এসেছে। একইসঙ্গে রেগার দৈনিক মজুরি ৬০০ টাকা করার দাবিতে অনড় থেকেছে বামপন্থীরা। 
এরাজ্যে ২০২১ সালের পর থেকে রেগায় কোনও গরিব মানুষের কাজ দিতে পারেনি রাজ্য সরকার। রাজ্যের বিরুদ্ধে রেগায় সীমাহীন আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগকে সামনে রেখে টাকা বরাদ্দ বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। লোকসভা ভোটের আগে ১০০ দিনের কাজের বকেয়া মজুরির টাকা দিয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের দাবি ৫৯ লক্ষ রেগা শ্রমিকের জন্য ২৬৫২ কোটি টাকা খরচ করেছে সরকার। টাকা দেওয়ার পরও এড়ানো যায়নি দুর্নীতিকে। 
তৃণমূলের ইশতেহারে ‘দিদির শপথ’-এর ১০ দফা কর্মসূচি ঘোষণার আগে মমতা ব্যানার্জি ভোটারদের কাছে লিখিত আবেদনেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে নিজের তুলনা টেনেছেন। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন অবস্থা হোক, বা ভোটের প্রচারে এসে কীভাবে দিনরাত এক করে শুধু মানুষের জন্য তিনি ভাবেন, সেকথা প্রচার করে থাকেন নরেন্দ্র মোদী নিজেই। ইশতেহারে নিজের স্বাক্ষরিত আবেদনেও মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ‘‘ ২০১১ সালের আগে বাংলা ছিল ক্ষয়িষ্ণু ও চরম দারিদ্রে জর্জরিত এক রাজ্য। আপনাদের অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়ে, বাংলাকে প্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার তার অতীত গৌরবকে পুনরুদ্ধার করার। এই দায়িত্ব পালন করার জন্য আমি আমার জীবন উৎসর্গ করেছি এবং নিশ্চিত করেছি, রাজ্যের প্রত্যেক বাসিন্দা নিরাপদ ও সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি সমৃদ্ধশালী জীবনযাপন করতে পারেন।’’ 
মমতা ব্যানার্জির গত ১২ বছরে রাজ্যের সাধারণ মানুষের উৎসর্গীত জীবনের নমুনা এখন প্রতি মুহূর্তে টের পাচ্ছেন রাজ্যবাসী। নিয়োগ কেলেঙ্কারি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে শিক্ষা দপ্তরের প্রাক্তন মন্ত্রী থেকে একাধিক কর্তা এখন জেলে। নিয়োগের জন্য বছরের পর বছর পথে বসে থাকা চাকরিপ্রার্থী মহিলাদের ক্ষোভে, অপমানে বেকারত্বের যন্ত্রণায় দগ্ধ হয়ে নিজেদের মাথার চুল প্রকাশ্য রাজপথে কেটে ফেলে প্রতিবাদ জানাতে হয়েছে। এরাজ্যের শূন্যপদে দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ বন্ধ। এরাজ্য থেকে কাজ না পেয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যায় বেকার যুবক, যুবতীরা ভিনরাজ্যে চলে যায়। সন্দেশখালির ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, ভোট লুট, জমি লুট থেকে মহিলাদের সম্ভ্রমহানির ঘটনা। 
দুর্নীতি এমন পর্যায়ে এরাজ্যে বাসা বেঁধেছে যে গরিবের মাথার ওপর ছাদ নেই। এক সময় আবাস যোজনার ঘরের টাকা লুট করে কাটমানি খেয়ে তৃণমূল কংগ্রেস গরিবের মাথার ছাদ পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছে। রাজ্যের শাসকদলের এই দুর্নীতিকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে মোদী সরকার। অতীতে পশ্চিমবঙ্গকে কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে। কিন্তু সরকারের দুর্নীতির জন্য বরাদ্দ অতীতে কখনও বন্ধ হয়নি।
এখন মমতা ব্যানার্জি ‘দিদির শপথ’ বাক্যে লিখেছেন তৃণমূল দেশের প্রত্যেক বিপিএল পরিবারকে বিনামূল্যে বছরে ১০টি রান্নার গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা করবে। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের থেকেও মোদী সরকারের আমলে পেট্রোপণ্যের যেভাবে মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে তা নিয়ে একটি কথাও খরচ করেনি। এমনকি পেট্রোল, ডিজেলকে জিএসটি’র আওতায় আনার দাবি নিয়েও নীরব তৃণমূলের ইশতেহার। কারণ, এখনও এরাজ্যে পেট্রলের বিক্রয়কর ২৫ শতাংশ। সঙ্গে লিটারে ১ টাকা করে সেস আদায় আছে রাজ্যের। একইভাবে লিটারে ১ টাকা সেস সহ ১৭ শতাংশ বিক্রয়কর লাগু আছে ডিজেলেও। মমতা ব্যানার্জির সরকার চাইলে মানুষের স্বার্থে বিক্রয় কর কমিয়ে কিছুটা সুরাহা দিতেই পারে রাজ্যবাসীকে। এই মুহূর্তে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই পেট্রলিয়াম ডিলারদের কমিশন ও বিক্রয় কর মিলিয়ে করের পরিমাণ ২৮.৫২ শতাংশ। গোটা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ কর এরাজ্যেই।
 

Comments :0

Login to leave a comment