REGA CUTMONEY TMC

রেগার মজুরির জন্য দলীয় ফরম পূরণ করিয়ে টাকা তুলছে তৃণমূল

রাজ্য জেলা

চিন্ময় কর- সবং

 

বকেয়া মজুরি পাওয়ার জন্য তৃণমূলের ফরম পূরণ করতে হচ্ছে, আর সেই ফরম পূরণের সময়ে গ্রামবাসীদের থেকে টাকা নিচ্ছে তৃণমূল।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় এমন অভিযোগ উঠেছে। যেমন, সবং। পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং ব্লকের দশগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার নানকা বুথে তৃণমূলের বুথ সভাপতি বিনন্দ মণ্ডল, পঞ্চায়েত সদস্য রণবীর পালুই সহ তৃণমূলের কর্মীরা গ্রামের মধ্যে চাটাই পেতে আসর বসিয়েছেন। সেখানেই জব কার্ড, আধার কার্ড নিয়ে হাজির হতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের। রেগায় কাজ করা যে কোনও ব্যক্তি জানেন, তাঁর কত দিনের মজুরি বকেয়া। কিন্তু তাঁর নামে বেশি দিন কাজের হিসাব জমা করে রেখেছে তৃণমূল, অভিযোগ এমনই। যেমন, এক গ্রামবাসীর ১৮ দিনের মজুরি বকেয়া। তাঁর নামে তৃণমূলের নেতারা ৩২ দিনের কাজের হিসাব মাস্টাররোলে দেখিয়ে রেখেছেন। 

 

তৃণমূলের দলীয় ফরম পূরণ করে জমা দিলে সেই ব্যক্তি ৩২ দিনের মজুরিই পাবেন। যে বাড়তি মজুরি তাঁর অ্যাকাউন্টে ঢুকবে, তার ভাগ এখনই দাবি করছে তৃণমূল, তাদের ক্যাম্পে ডেকে ফরম পূরণের সময়ে। কোনও ব্যক্তি সরাসরি জব কার্ড নিয়ে পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে আবেদন পত্র জমা দিতে পারছেন না। সেই পঞ্চায়েত দপ্তরের সামনেই তৃণমূলের ক্যাম্পে তাঁকে যেতেই হচ্ছে। সামনেই লোকসভা ভোট। তার আগেই ১ মার্চ বকেয়া টাকা সবার অ্যাকাউন্টে ঢুকে যাবে। এই সুযোগে এখনই কিছু টাকা তুলে নিচ্ছেন তৃণমূল নেতারা। 

এই ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়ায় তৃণমূলের ওই বুথের সভাপতি বিনন্দ মণ্ডল টাকা নেওয়ার ঘটনা স্বীকার করে নেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা টাকা নিচ্ছি। আমাদের দলের অঞ্চল সভাপতি অতনু সিংয়ের নির্দেশ মতো সরকারি হিসাবের সঙ্গে মিলিয়ে জব কার্ড রেজিস্টার ঠিক করে ফরম ফিলাপ করে দিচ্ছি আমরা।’’ কে এই অতনু সিং? তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সন্দেশখালির শাহজাহানের মতোই সবংয়ে, কেলেঘাই নদীর পাড় জুড়ে প্রায় আটশ বিঘা ধানের জমিকে ভেড়িতে পরিণত করেছেন তিনি। তাঁর বাহিনীতে আছে ‘দাপুটে’ তৃণমূল কর্মীরা। পঞ্চায়েত ভোটে বামফ্রন্ট প্রার্থীদের, তাঁদের আত্মীয়দের তুলে নিয়ে এসে মারধর করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুরো পঞ্চায়েত দখল করার কারিগর এই বাহিনী। মন্ত্রী মানস ভূঁইঞার বিশেষ স্নেহের পাত্র অতনু সিং।

নানকা বুথে দেখা গিয়েছে, ত্রিপল পেতে বসে রয়েছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। ত্রিপলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অনেকগুলি জব কার্ড। সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন জব কার্ডধারীরা। চাটাইয়ে বসে টাকা গোছাতে ব্যস্ত এক ব্যক্তি। জব কার্ড নিতে ব্যস্ত অন্য এক জন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন অনেকে জানালেন, এক হাজার, দেড় হাজার, আবার কারও থেকে দুই হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে। টাকা দিতে অনিচ্ছুক অনেকে ফিরেও যাচ্ছেন। 

এই ঘটনায় সবং বিডিও’র কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে। সবংয়ের বিডিও অরুনিমা সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘ইতিমধ্যে অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযোগ আমরা দেখেছি, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ 

গত ৭ ফেব্রুয়ারি মানস ভুঁইঞা সবংয়ের সারতায় একটি সরকারি অনুষ্ঠানে সর্বসমক্ষে দলীয় ব্লক সভাপতি আবু কালাম বক্সকে নির্দেশ দেন, একশ দিনের বকেয়া মজুরি আবেদন জমায় আবারও যেন কোনও দুর্নীতি না হয়। তা হলে তাদের জেল হবে। সেই হুঁশিয়ারিকে পাত্তাই দিচ্ছেন না তৃণমূলীরা। প্রমাণ— দশগ্রামের ঘটনা।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে। কী প্রশ্ন? দাসপুরের বাসিন্দা সিপিআই(এম) নেতা রঞ্জিৎ পালের কথায়, ‘‘কে কত দিন কাজ করেছেন, কার কত দিনের মজুরি বাকি, এর সব তথ্যই ব্লক অফিসের কম্পিউটারে আছে। তাহলে আলাদা করে তৃণমূলের ফরম পূরণ কেন? আমরা এই প্রশ্ন গ্রামবাসীদের করছি। গ্রামবাসীরা অসহায়। তাঁরা মজুরির টাকা চান। তাই অনেকে যাচ্ছেন তৃণমূলের ক্যাম্পে। তৃণমূলের ক্যাম্পে ফরম পূরণ না করলে যদি টাকা না পাওয়া যায়, এই তাঁদের ভাবনা। নির্বাচনের আগে তৃণমূল গরিবের প্রাপ্য টাকা নিয়ে এইভাবে রাজনীতি করছে।’’

এই প্রশ্ন দাসপুরে। এই প্রশ্ন সবংয়ে। এই প্রশ্ন পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রতিটি ব্লক এলাকায়। 

শালবনীতে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির এক কর্মাধ্যক্ষর সাফাই, ‘‘শুধু ব্লকে নয়, রাজ্য সরকার কিংবা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছেও কে কবে কাজ করেছেন ও কত দিন কাজ করেছেন, তার হিসাব রয়েছে। সেই হিসাব পঞ্চায়েতগুলিই দিয়েছে। তবু আমরা মিলিয়ে দেখে নিতে চাইছি।’’ 

তৃণমূলের হিসাব মেলানোর কী আছে? টাকা পাবেন মানুষ। টাকা দিচ্ছে সরকার। হিসাব মেলানোর তৃণমূল কে? জবাব নেই প্রশ্নের।

Comments :0

Login to leave a comment