Tet passed job seeker beaten up by police

টেট উত্তীর্ণদের ফের বেধড়ক মারধর পুলিশের

কলকাতা

টেট উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ফের বেধড়ক মারধর করল পুলিশ। প্রার্থীদের আঁচড়ে, কামড়ে, জামা ছিঁড়ে, লাঠি দিয়ে পিটিয়ে, টেনেহিঁচড়ে প্রিজন ভ্যানে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বুধবার চাকরির দাবি জানাতে গিয়ে প্রাথমিক টেট প্রার্থীদের উপর এমন বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে পুলিশ। পুলিশের অত্যাচারে এক চাকরিপ্রার্থী গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। পুলিশের লাঠির ঘায়ে বেশ কয়েকজন প্রার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। টেট প্রার্থীদের উপর পুলিশের এই নৃশংস আক্রমণের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন সিপিআই (এম) নেতা সুজন চক্রবর্তী। শিক্ষক সংগঠনগুলিও পুলিশের ভূমিকায় নিন্দা জানিয়েছে।
তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জির কর্পোরেট অফিস ক্যামাক স্ট্রিটে যাওয়ার জন্য রবীন্দ্রসদন মেট্রো স্টেশন থেকে বেরোতেই পুলিশ ঝাঁপিয়ে পড়ে টেট প্রার্থীদের উপর। ধরপাকড় শুরু হয় সেখান থেকেই। টেনে হিঁচড়ে প্রার্থীদের প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। পুলিশকে এড়িয়ে কয়েকজন প্রার্থী ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে দৌড়ে যেতে গেলে রাস্তায় পড়ে যান। তাঁদেরকে মাড়িয়ে দিয়েই পুলিশ বাকি প্রার্থীদের পেছনে ধাওয়া করে বলে অভিযোগ। বাসের চাকার নিচে শুয়ে পড়া মহিলা প্রার্থীকে এদিন চাকরি ভিক্ষা করতে দেখা গিয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ার বাসিন্দা অরুণিমা পালের হাত কামড়ে দেন এক মহিলা পুলিশ। গোবরডাঙার বাসিন্দা চম্পা ঘোষকে খামচে দেওয়া হয়েছে। রাকেশ মণ্ডল, সাবির আহমেদের জামা ছিঁড়ে দেওয়া হয়। পুলিশের নারকীয় অত্যাচারে বরুণ বাউরি নামে এক প্রার্থী গুরুতর অসুস্থ হয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হাতে প্রচণ্ড যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালের বেডে তাঁকে ছটপট করতে দেখা গিয়েছে। এছাড়া অচিন্ত্য সামন্ত ও অচিন্ত্য ধাড়া অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁদের প্রিজন ভ্যানে তুলে লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই দুই প্রার্থীকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে না পাঠিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ছাড়াই ফের প্রিজন ভ্যান করে লালবাজার থেকে হেয়ার স্ট্রিট থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। রাত পর্যন্ত প্রার্থীদের সেখানে আটক করে রাখা হয়েছে।
টেট প্রার্থীদের উপর এদিন পুলিশের আক্রমণের তীব্র নিন্দা করে সিপিআই (এম)-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘পুলিশ যদি পুলিশের কাজ করত তাহলে এ ঘটনা হতো না। পুলিশ পোষা গুন্ডায় পরিণত হয়েছে, দালালে পরিণত হয়েছে। তৃণমূলের নেতাদের ঘিরে রাখা যদি পুলিশের কাজ হয় তাহলে মানুষকে ছাড়তে পারে না। শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের এই নির্যাতন মানুষ কখনই মেনে নিতে পারেননি।’’ এবিটিএ’র সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইন পুলিশের ভূমিকায় নিন্দা করে বলেছেন, ‘‘পুলিশের উচিত ছিল যারা টাকা নিয়ে চাকরি বিক্রি করেছে তাদের গ্রেপ্তার করা। তা না করে পুলিশ যোগ্য প্রার্থীদের আক্রমণ করছে, লাঠি পেটা করছে। পুলিশ দলদাসে পরিণত হয়েছে।’’ এবিপিটিএ’র সাধারণ সম্পাদক ধ্রুব শেখর মণ্ডল বলেছেন, ‘‘শিক্ষকের অভাবে স্কুলগুলি ধুঁকছে। প্রার্থীরা যোগ্যতা প্রমাণ করেই রাস্তায় বসে রয়েছে। অযোগ্যদের বদলে যোগ্য প্রার্থীদের উপর এদিন পুলিশ যে নৃশংসতা দেখিয়েছে তা সভ্য সমাজে হয়?’’ 


প্রাথমিক শিক্ষক পদের নিয়োগে দুর্নীতি ও বেনিয়মের পর্দা ফাঁস হয়ে যায় কলকাতা হাইকোর্টে। নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য সহ বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়ে জেলে রয়েছেন। নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ও নিজেদের হকের চাকরির দাবিতে ২০১৪ সালে প্রাথমিক টেট উত্তীর্ণ প্রার্থীরা ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করে চলেছেন। এদিন তাঁরা সকালের দিকে করুণাময়ীতে পর্ষদ অফিসে গেলে সেখানেও পুলিশ প্রার্থীদের একাংশকে আটক করে। করুণাময়ী মেট্রো স্টেশন ও সেক্টর ফাইভ মেট্রো স্টেশন থেকে সকালে প্রার্থীদের আটক করা হয়। এরপর দুপুরের দিকে টেট প্রার্থী অভিষেক ব্যানার্জির সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্য নিয়ে ক্যামাক স্ট্রিটে গেলে পুলিশ সেখানে নৃশংস অত্যাচার চালায়।
এমনই বর্বরোচিত অত্যাচার পুলিশ টেট প্রার্থীদের উপর করেছিল ২১ অক্টোবর গভীর রাতে। টানা চারদিন শান্তিপূর্ণ অনশন চলার পর পুলিশ টেট প্রার্থীদের হামলা চালিয়ে জমায়েত ফাঁকা করে দেয়। তারপর থেকে ২০১৪ সালের টেট প্রার্থীরা গান্ধী মূর্তির সামনে অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, ‘মেধা তালিকা প্রকাশ না করে বহু অযোগ্যদের চাকরি দেওয়া হয়েছে। ফলে ক্রমশ আমরা মেধা তালিকার পেছন দিকে চলে গেছি। এসএমএস করে প্রার্থীদের ইন্টারভিউতে ডাকা হয়েছে। কোন্‌ প্রার্থী কত নম্বর পেয়েছে তাও জানায়নি পর্ষদ। ফলে ২০১৪ সালের প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ প্রহসনে পরিণত করেছে সরকার। ২০১৪সালে যাঁরা টেট পাশ করেছেন তাঁদের অনেকেরই বয়স ৪০বছর পেরিয়ে গেছে। এরজন্য দায়ী কী প্রার্থীরা। সরকারকেই এর দায় নিতে হবে।


 

 

Comments :0

Login to leave a comment