Parliament opposition

বিরোধীদের সঙ্গে নেই শুধু তৃণমূল

জাতীয়

আবারও সংসদ ভন্ডুল করে দিল কেন্দ্রের শাসক দলই। সোমবারের মতো মঙ্গলবারও ‘রাহুল গান্ধীকে ক্ষমা চাইতে হবে’ দাবি তুলে একের পর এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিজেরাই চিৎকার করে, দলের সাংসদদের দিয়ে হুল্লোড় বাধিয়ে সংসদের দু’কক্ষই অচল করে দিয়েছে। কারণ স্পষ্টই। আদানিকাণ্ডে যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্তের দাবি জানিয়ে নোটিস দিচ্ছেন বিরোধীরা, আলোচনা চাইছেন তা নিয়ে। তা হতে দেবে না সরকারপক্ষ। তবে, আরও একধাপ এগিয়ে লোকসভা, রাজ্যসভায় কী নিয়ে বিতর্ক, আলোচনা হবে তা স্থির করবে শুধু সরকারপক্ষই— এই অবস্থানের দিকে যাচ্ছে সরকার। এদিন তার ইঙ্গিতও মিলেছে। 
সোমবারের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে মঙ্গলবার সকালেও ১৬ টি বিরোধী দল বৈঠকে বসেছিল। ছিল কংগ্রেস, ডিএমকে, সিপিআই(এম), জেডিইউ, আরজেডি, এনসিপি, সমাজবাদী পার্টি, শিবসেনা (উদ্ধব), আপ, সিপিআই, জেএমএম, এমডিএমকে, এনসি, কেরালা কংগ্রেস। বৈঠকে ঠিক হয় এদিনও সংসদকক্ষে আদানিদের প্রসঙ্গ তোলা হবে। সেইমতো একসঙ্গেই সংসদে দাবি তুলেছেন বিরোধীরা। 
এই বৈঠকে গরহাজির ছিল তৃণমূল কংগ্রেস। সোমবারের মতো এদিনও তারা বিরোধীদের সঙ্গী হয়নি। পরে তৃণমূলের কয়েকজন সাংসদ গান্ধী মূর্তির সামনে পোস্টারে আদানিকাণ্ডে জীবনবিমার বিনিয়োগের প্রসঙ্গ তুলে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন। লোকসভা, রাজ্যসভা মিলিয়ে তৃণমূলের ১৫ জন সাংসদ উপস্থিত ছিলেন। লক্ষণীয় ভাবে আদানিকাণ্ডের সংসদীয় বা অন্য কোনও তদন্তের দাবি তোলেননি তাঁরা। সংসদের ভেতরে যখন সরকারপক্ষ সমবেত চিৎকারে সভা ভন্ডুল করছে তখন তৃণমূলের কোনও সক্রিয়তা ছিল না। বিরোধীদের পাশে দাঁড়াননি তাঁরা। 
সংসদে দেখা যায় বেনজিরকাণ্ড। রাজ্যসভায় বিরোধীদের একটির পর একটি নোটিস খারিজ করে দেন চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়। আদানিকাণ্ডে যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠনে সরকারের ব্যর্থতা, আদানিদের আর্থিক কারবার নিয়ে আলোচনা চেয়ে নোটিস দেন বেশ কয়েকজন কংগ্রেস সদস্য। বিআরএস এবং আপের দুই সদস্য আদানিদের বিরুদ্ধে হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট নিয়ে আলোচনার নোটিস দেন। ত্রিপুরায় নির্বাচন-পরবর্তী সন্ত্রাস সম্পর্কে নোটিস দেন সিপিআই’র বিনয় বিশ্বম, সন্তোষ কুমার। সব নোটিসই খারিজ করে দেন ধনখড়। এই পর্বেও তৃণমূলের তরফে কোনও নোটিস দেওয়া হয়নি, কোনও আলোচনার দাবিও জানানো হয়নি। 
ধনখড় বরং মন্ত্রী পীযূষ গোয়েলকে বলতে দেন। রাহুলের নাম উচ্চারণ না করে গোয়েল বলতে থাকেন, সরকারের অবস্থান হলো তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে। এটি অত্যন্ত গুরুতর বিষয়। গোটা দেশ এবং সাংসদরা ক্রুদ্ধ। সংসদকে অপমান করা হয়েছে, দেশের গর্বকে আঘাত করা হয়েছে। দেশের বাইরে দাঁড়িয়ে সংসদ সম্পর্কে অসত্য কথা বলা হয়েছে। বিজেপি সাংসদরা হই হই শুরু করে দেন। ধনখড় বলেন, আমি বিষয়টি দেখছি। বিরোধী নেতার সঙ্গে কথা হয়েছে। সরকারপক্ষের বরিষ্ঠদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। এ বিষয়ে আমি খুব তাড়াতাড়িই মতামত দেব। কিন্তু এদিন নজর টেনেছে ধনখড়েরই একটি মন্তব্য। তিনি বলেন, আমার মতামতে আমি জানিয়ে দেব সংসদে কী নিয়ে বিতর্ক করা যাবে, কী নিয়ে কথা বলা যাবে না। বরিষ্ঠ সাংসদদের অনেকেই এদিন বলেছেন, সংসদে কী আলোচনা হবে তা সরকারপক্ষ স্থির করতে পারে না। তাহলে সংসদে গণতন্ত্রের অর্থ কী? 
লোকসভায় প্রায় একই কায়দায় শুরু থেকেই বিজেপি সদস্যরা স্লোগান তুলতে থাকেন, ‘রাহুল গান্ধী মাফি মাঙ্গো’। যোগ দেন মন্ত্রীরাও। মন্ত্রীরা স্লোগান দিচ্ছেন, সংসদকক্ষে এই দৃশ্য বিরল। বিরোধীরাও পালটা স্লোগান দেন। তবে লোকসভায় কংগ্রেস সদস্যরা বিদেশে গিয়ে মোদীর ভাষণের কিছু অংশ প্ল্যাকার্ডে লিখে এনেছিলেন। যেমন, ‘ ব্রিকসের আই লড়ক রহা হ্যায়’  (ভারত, রাশিয়া, ব্রাজিল, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে গঠিত ব্রিকসের আই অর্থাৎ ইন্ডিয়া ভেঙে পড়ছে)। ২০১৫সালের মে মাসে সিওলে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেছিলেন, ‘ পাতা নেহি পহলে জনম মে কেয়া পাপ কিয়া থা হিন্দুস্তান মে পয়দা হুয়া’। একটি প্ল্যাকার্ডে এই কথাও লেখা ছিল। রাহুল গান্ধী লন্ডনে বক্তৃতায় ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলে যদি অন্যায় করে থাকেন তাহলে প্রধানমন্ত্রী কী করেছেন— এই ছিল বিরোধীদের প্রশ্ন। উত্তর আসেনি, সমবেত চিৎকার এসেছে। লোকসভাও মুলতুবি করে দেওয়া হয়েছে। আদানিকাণ্ড নিয়ে প্রশ্নের মুখ থেকে বেঁচেছে সরকার। 
আদানিকাণ্ড আলোচনা করতে না দেওয়াই যে আসল বিষয়, তা এদিন বিরোধীদের পক্ষ থেকে বারংবার বলা হয়েছে। কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ টুইট করে বলেন, মহাকেলেঙ্কারি নিয়ে কোনও কথা বলতে দেওয়া হবে না, মোদীর নির্দেশে তাই সরকার নিজেই সংসদ ভন্ডুল করে দিচ্ছে। 
বিরোধী নেতাদের মধ্যে এদিন তৃণমূলের ভূমিকা নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। আদানিকাণ্ড তৃণমূলের এমন দুর্বল ও ক্ষীণকণ্ঠ প্রতিক্রিয়া কেন, তা নিয়ে টিপ্পনি শোনা যায় সাংসদদের মুখে। কংগ্রেসের অধীর চৌধুরি বলেছেন, তৃণমূল কেন্দ্রীয় এজেন্সির হাত থেকে বাঁচতে দিল্লিতে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে চাইছে না। 
তৃণমূলের সাংসদ সৌগত রায় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, রাহুল গান্ধী লন্ডনে এমন কিছু খারাপ কথা বলেননি। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি যোগ করেন, এটি আমার ব্যক্তিগত মত। দল কী করবে, তা দলে ঠিক হবে।
 

Comments :0

Login to leave a comment