উৎসবে অনুভবে
অন্যকথা
মুক্তধারা
সাধক কবি রামপ্রসাদ সেন-এর জন্ম ভিটে
তপন কুমার বৈরাগ্য
বর্তমানে যার নাম হালিশহর পূর্বে তার নাম ছিল কুমারহট্ট । এই কুমারহট্ট গ্রামে ১৭১৮ অথবা ১৭২৩খ্রিস্টাব্দে সাধককবি রামপ্রসাদ সেন জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম ছিল রামরাম সেন।অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী ছিলেন রামপ্রসাদ।তার কালীবিষয়ক সংগীতগুলোকে রামপ্রসাদী সংগীত বলে।কৃষ্ণনগরের মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায় তাকে কবিরঞ্জন
উপাধি দেন।কলকাতায় জমিদারের অধীনে তিনি খাতা লেখার কাজ পান।সেই খাতায় তিনি কালীসংগীত লিখে রাখতেন। একদিন জমিদারের এটা দৃষ্টিগোচর হলো।তিনি রামপ্রসাদের প্রতিভা দেখে বিস্মিত হলেন।রামপ্রসাদের কবিত্বশক্তি বিকাশের জন্য তিনি তাকে হালিশহরে পাঠিয়ে দিলেন ।সেই সাথে তার খোরাকের জন্য বেশ কিছু জমি এবং মাসিক মাসোহারার ব্যাবস্থা করলেন।রামপ্রসাদ একান্ত মনে তার সাধনা চালিয়ে গেলেন। কথিত আছে রামপ্রসাদ একদিন বেড়া বাঁধছিলেন ,সেই সময় নিজের কন্যার রূপ ধরে স্বয়ং কালী এসে তাকে বেড়া বাঁধার কাজে সাহায্য করেন।আজ থেকে ৩০০বছর আগে রামপ্রসাদ জন্মগ্রহণ করেছিলেন।কিন্তু তিনি কালীবিষয়ক যে গানগুলো লিখেগেছেন এবং সুর দিয়েছেন ,আজো তা প্রতিটা মানুষের
হৃদয়কে সমানভাবে স্পর্শ করে যায়।এই গানের কথা এবং সুর কখনো পুরানো হবার নয়।স্বয়ং সিরাউদ্দৌলা নৌকা পথে যেতে যেতে তার গান শুনে অতিশয় মোহিত হয়েছিলেন। তার উল্লেখযোগ্য বেশ কিছু গান---মায়ের পায়ের জবা হয়ে ওঠরে ফুটে মন কিংবা ডুব দেরে মন কালী বলে,অথবা মনরে কৃষি কাজ জানে না বা মা আমায় ঘুরাবি কত।গানের যেমন
ভাষা তেমনি সুরের ঝংকার।যে জাদুরস্রোত আজো সবার ঘরে ঘরে বয়ে যাচ্ছে। রামপ্রসাদকে নিয়ে বিখ্যাত চলচ্চিত্র তৈরী হয়েছে"মন রে কৃষি কাজ জানে না"। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পর্যন্ত তাকে শাক্তপদাবলীর শ্রেষ্ঠ কবি বলে স্বীকার করেছেন।তিনি রামের উপরে তাইতো তিনি রামপ্রসাদ।তার শ্রেষ্ঠ কীর্তি বিদ্যাসুন্দর কাব্য রচনা ।বাস্তব এবং অলৌকিক কিংবদন্তীতে ঘেরা তার জীবন।কুমারহট্ট বা হালিশহরে তিনি শক্তিরূপী কালীমায়ের আরাধনা করে গেছেন। ১৭৭৫খ্রিস্টাব্দ।কার্তিকমাসে শ্যামাপূজার দিন তিনি কালীমায়ের পুজো করে মায়ের মূর্তি নিয়ে গঙ্গায় বিলিন হয়ে যান।হালিশহরের যে ঘাটে তার দেহ বিলিন হয়ে যায় সেই ঘাটের নাম হয় রামপ্রসাদের স্নানের ঘাট।এই ঘাটে আজো হাজার হাজার পুণ্যার্থী স্নান করে নিজেদের ধন্য মনে করেন।রামপ্রসাদ নিজের হাতেই মূর্তি তৈরী করতেন এবং নিজেই পুজো করতেন।পুজোর সময় রামপ্রসাদ মাকে পোলাও,খিচুড়ি,সবজি,ভাজা,চটনি,মিষ্টান্ন খেতে দিতেন।আজো মাকে সেই পঞ্চব্যঞ্জনের ভোগ খেতে দেওয়া হয়।আজ থেকে ১৪১ বছর আগে আসামের সুরেন্দ্রচন্দ্র চন্দ্ররায় রামপ্রসাদের বসত ভিটেতে কষ্টি পাথর দিয়ে তৈরী মায়ের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। রামপ্রসাদ যে নিয়মে পুজো করতেন আজো
সেই নিয়মেই এখানে পুজো হয়।এখানের মাকে সকলে জগদীশ্বরী মা বলেন।দীপাবলিতে রাতে শুরু হয় পুজো। দূরদূরান্ত থেকে বহু ভক্তের এখানে আগমন ঘটে।সারারাত ধরে চলে পুজো। পাঁচজন পুরোহিত পুজো করেন। সারারাত ধরে চলে আরতি, পুষ্পাঞ্জলি। অচিরেই হালিশহর একটা পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে উঠুক এবং বাংলার মানচিত্রে সর্বকালের সেরা পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে স্থান করে নিক ।
Comments :0