Sanjay Rai ‘Sherpuria

বিজেপি নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, লক্ষ্ণৌয়ে প্রতারক গ্রেপ্তারে চাঞ্চল্য

জাতীয়

Sanjay Rai Sherpuria


 প্রধানমন্ত্রী দপ্তর বা পিএমও’র কথা বলে কোটি কোটি টাকা প্রতারণার দায়ে সঞ্জয় রাই শেরপুরিয়া নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে উত্তর প্রদেশ পুলিশের বিশেষ টাস্ক ফোর্স। মঙ্গলবার রাতে লক্ষ্ণৌয়ে এই গ্রেপ্তারি হলেও দু’দিন পরে তুমুল হইচই শুরু হয়েছে। কারণ উত্তর প্রদেশ পুলিশ যাকে ধরেছে, সে ধরে রেখেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতকে। অন্তত তার সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট তেমনই বলছে। প্রাথমিকভাবে গোদী মিডিয়া এই খবর চেপে গিয়েছিল। সেইরকম মিডিয়ার অনেক অ্যাঙ্কারের সঙ্গেও ছবি সামনে এসেছে এই প্রতারকের। এমনকি উত্তর প্রদেশের একটি বহুল প্রচারিত হিন্দি দৈনিকের নিয়মিত লেখক এই সঞ্জয় রাই। অধিকাংশ লেখার বিষয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং গীতার জ্ঞান! ‘দিব্যদর্শী মোদী’ নামের একটি বইও লিখেছেন। বিভিন্ন ধর্মগুরুদের সঙ্গেও দেখা যাচ্ছে তাকে। যদিও শেষ পর্যন্ত সঞ্জয় শেরপুরিয়ার গ্রেপ্তারির খবর সামনে এসে গেছে। চেপে রাখা যায়নি। 


গাজিপুর জেলার শেরপুরের বাসিন্দা সঞ্জয় রাই নিজের নামের সঙ্গে আবাস এলাকার পরিচয় জুড়ে শেরপুরিয়া লিখতে অভ্যস্ত। সেই নামেই পরিচিত। ভুয়ো সংস্থা তৈরি করে মানুষের থেকে কয়েকশো কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে সঞ্জয় শেরপুরিয়ার বিরুদ্ধে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সঞ্জয়কে মঞ্চে ফুলের তোড়া তুলে দিচ্ছে। সঞ্জয় বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া দিচ্ছে। জনা পাঁচ-ছয় জন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করছেন, তারমধ্যেও আছে সঞ্জয়। এমন সব ছবিতে ভরপুর তার সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট। আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের সঙ্গে বইপ্রকাশ, অমিত শাহ, জেপি নাড্ডা, আইন মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু, ক্রীড়া মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার ছবিও ঠাসা সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলিতে। গত ৫ এপ্রিলের এক অনুষ্ঠানে সঞ্জয় শেরপুরিয়ার ভাষণের ভিডিও মিলেছে। হরে কৃষ্ণ হরে রাম লেখা মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিচ্ছে সঞ্জয় এবং মনোযোগ দিয়ে তা শুনছেন দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। এমনই এক সাম্প্রতিক অনুষ্ঠানে উত্তর প্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী ব্রিজেশ পাঠকের সঙ্গে দীপ প্রজ্বলন করছে সঞ্জয়, সেই ছবিও রয়েছে। 


এহেন সঞ্জয় এই সব যোগাযোগকে ব্যবহার করেই কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা যাচ্ছে। দিল্লির বড় শিল্পপতি গৌরব ডালমিয়ার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে ইডি। কোনোভাবে সঞ্জয় শেরপুরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ হয় গৌরব ডালমিয়ার। পিএমও’র সঙ্গে যোগাযোগ আছে বলে সঞ্জয় তাকে জানায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তদন্ত সে মিটমাট করিয়ে দেবে। এই জন্য গৌরব ডালমিয়ার থেকে ৬ কোটি টাকা চায় সঞ্জয়। সেই টাকা অনলাইন নিজের অ্যাকাউন্টে নেয় সঞ্জয়। গৌরব তদন্তের আওতায় থাকার কারণেই বিষয়টি ধরে ফেলে ইডি। খবর দেওয়া হয় উত্তর প্রদেশ পুলিশের এসটিএফ-কে। এসটিএফ অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখার পরে লক্ষ্ণৌয়ের বিভূতিখণ্ড থেকে গ্রেপ্তার করে সঞ্জয়কে। বর্তমানে দিল্লির বাসিন্দা সঞ্জয়ের বিপুল কারবার। উত্তর প্রদেশ, দিল্লি এবং গুজরাটে ছড়িয়ে সঞ্জয়ের কারবার। দিল্লিতে ভিভিআইপিদের আবাস এলাকায় কয়েক কোটির বাংলোতে থাকে সঞ্জয় শেরপুরিয়া। যদিও এই বাংলো এক মহিলার নামে। এছাড়াও সঞ্জয়ের আরও বিলাস বহুল বাড়ির খোঁজ পেয়েছে তদন্তকারীরা। দিল্লির বাংলোতে বসেই প্রতারণার বড় বড় ডিল গুলো করেছে বলেও জানা গেছে। ট্রান্সফার পোস্টিং থেকে ভোটে টিকিট দেওয়া পর্যন্ত কাজ বিপুল টাকার বিনিময়ে সঞ্জয় শেরপুরিয়া করেছে বলে জানতে পেরেছে তদন্তকারী সংস্থাগুলি। প্রশাসনিক এবং বিজেপি দলের উঁচু স্তর পর্যন্ত যোগাযোগ না থাকলে এই কাজ করা সম্ভব নয় বলেই মনে করছে তদন্তকারীরা। দিল্লির এই বাংলোতেও ফোটো গ্যালারিতে নেতা মন্ত্রীদের ছবিতে ভর্তি। জানা গেছে এই বাংলোতে নানা অনুষ্ঠানেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা, বিজেপি’র বড় নেতারা উপস্থিত থাকতেন। বৃহস্পতিবার পুরো ঘটনা সামনে আসার পরে বিজেপি’র নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে সঞ্জয়ের ফোটোগুলি বানানো কিনা, তা নিয়ে কোনও কোনও মহল থেকে মৃদুভাবে প্রশ্ন তোলার চেষ্টা হয়। পালটা প্রশ্ন উঠেছে, ছবি ভুয়ো হলে এতদিন সেগুলি নিয়ে কেউ মুখ খোলেননি কেন? আর সাম্প্রতিক অনুষ্ঠানের ভিডিওগুলিতে তো স্পষ্ট হয়েই যায় যে সবই ভুয়ো নয়। 


এখন ইডি’র তদন্তের সূত্রে জানা গেছে, গোয়েন্দা বিভাগ অনেক আগে থেকেই সঞ্জয় শেরপুরিয়াকে নিয়ে তথ্য দিয়েছিল। কিন্তু তা নিয়ে কোনও পদক্ষেপ হয়নি। সম্ভবত শীর্ষ বিজেপি নেতাদের ঘনিষ্ঠাতার কারণেই তা হয়নি। এই সূত্রে একটি কথা আলোচিত হচ্ছে যে দিল্লির সঙ্গে আদিত্যনাথের কোনও কারণে সঙ্ঘাত থেকেই এই গ্রেপ্তারি হয়েছে। এই বক্তব্য আরও জোরালো হয়েছে পরের দিনই যোগী ঘনিষ্ঠ গোরক্ষপুরের গ্যালান্ট শিল্পগোষ্ঠীর ৩২টি জায়গায় তল্লাশি শুরু হয়েছে আয়করের। 
২০২২ সালে উত্তর প্রদেশ বিধানসভা ভোটের সময়ে গাজীপুর এলাকায় বিজেপি’র প্রভারী অর্থাৎ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা হিসেবেই কাজ করেছে সঞ্জয়। একইভাবে ২০১৯ সালে বারাণসীতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচন কেন্দ্রেও বিজেপি’র ‘প্রভারী’ হিসেবে কাজ করেছে। ‘ফর ইউথ’ বলে একটি এনজিও চালায় সঞ্জয়। স্বনিযুক্তির মাধ্যমে যুবদের স্বনির্ভর করতে চায় বলে ওই সংস্থার দাবি। তদন্তকারী সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, কাজ দেওয়ার নাম করে বেকার যুবকদের থেকেও কোটি কোটি টাকা কামিয়েছে সঞ্জয়। গুজরাটেও এইরকম প্রসারিত তার প্রতারণা নেটওয়ার্ক। ধরা পড়ার সময়ে সঞ্জয়ের কাছে দুই রকম নামের দু’টি আধার কার্ড মিলেছে। দু’টির ঠিকানাই গুরগাঁও। বিশেষ সিজেএম আদালত ৩ মে পর্যন্ত সঞ্জয় শেরপুরিয়াকে জেলে পাঠিয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগে এক প্রতারক কিরণ প্যাটেল নিজেকে প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের আধিকারিক পরিচয় দিয়ে কাশ্মীরে বারে বারে গেছে এবং আধিকারিকদের সঙ্গে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয় নিয়েও একাধিকবার বৈঠক করেছে।


 

Comments :0

Login to leave a comment